মাহাবুবুর রহমান :
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১২ আগষ্ট পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে বলে ঘোষনা দেওয়া হয়েছে সরকারি প্রজ্ঞাপনে। তাই সারা দেশের ন্যায় ইতিমধ্যে কক্সবাজারে শুরু হয়ে গেছে কুরবানীর পশুর হিসাব নিকাশ। ইতিমধ্যে অনেকে ব্যাক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা খামারে গরু মোটাতাজাকরন অনেকটা শেষ পর্যায়ে। তারা এখন শেষ মুহুর্তে গরুকে দেখতে সুন্দর করার চেষ্টা করছে। তবে সুসংবাদ দিয়েছে, জেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর।
তাদের দাবী মতে, এবারে কক্সবাজার জেলা কুরবানীর পশুর চাহিদা ১ লাখ ৫ হাজার আর জেলায় স্থানীয় ভাবে মজুদ আছে ১ লাখ ৮ হাজার পশু। তাই কুরবানীর পশুর সংকট হবে না বলে জানান এই দপ্তরের কর্মকর্তারা।
কক্সবাজার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ ওয়াহিদুল আলম জানান, ইতিমধ্যে কুরবানীর পশু নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কর্ম পরিকল্পনা চলছে। কক্সবাজারের জেলার জন্য চলতি বছর কুরবানীর পশুর চাহিদা (গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ) ইত্যাদি ১ লাখ ৫ হাজার। তবে আমরা আনন্দের সাথে জানাতে চাই কক্সবাজারে স্থানীয় পর্যায়ে ১ লাখ ৮ হাজার পশু মজুদ আছে। হয়তো আরো বেশি হতে পারে। তবে একটা কথা আমরা দাবী নিয়ে বলতে পারি, কুরবানীর জন্য পশুর সংকট হবে না।
তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারে চলতি বছর ৫২ টি কুরবানীর পশুর বাজার বসবে। এবং পশুর রোগ বালাই দেখতে ১৬ টি মেডিকেল টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে। এছাড়া কক্সবাজারের চকরিয়া পেকুয়া, উখিয়ায় যেখানে বন্যা বা বৃষ্টির পানি জমেছে সেখানে ইতি মধ্যে আমাদের মেডিকেল টিম বিনামূল্যে পশুদের চিকিৎসা দিচ্ছে এবং এ পর্যন্ত কোন জায়গা থেকে পশুর বড় ধরনের রোগের কোন খবর আসেনি।
এদিকে কুরবানীর ঈদকে সামনে রেখে জেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে অনেকে গরু মোটাতাজা করেছে। আলাপ কালে ঝিলংজা চান্দের পাড়ার বশিরুল আলম বলেন, আমার নিজের ঘরে ২ টি গরু মোটাতাজা করেছি, আশা করছি, এবারের কুরবানীর ঈদ বাজারে সেগুলো কমপক্ষে ৮০ হাজার টাকার উপরে একেকটি গরু বিক্রি হবে। তবে এখন সমস্যা হচ্ছে গরুগুলো বেশি পাহারা দিতে হয়। কারন প্রতি বছর কুরবানীর সময় আসলে গরু চোরের দল বেড়ে যায়। আর একবার গরু চুরি হলে সেটা আর খুঁেজ পাওয়া যায় না।
পিএমখালী ডিকপাড়া এলাকার নজরুল ইসলাম বলেন, আমার নিজের ঘরে ৩ টি গরু লালন পালন করেছি এছাড়া সম্প্রতি টেকনাফ থেকে আরো ৩ টি কিনেছি সেগুলো এখন ভাল করে পরিচর্যা করছি। আশা করছি, কুরবানীর ঈদের বাজারে বিক্রি করে কিছু টাকা বাড়তি আয় করতে পারব। তিনি বলেন, এখন সব কিছুর দাম বাড়তি আগে গুরুর খাদ্য, ঔষধ, চিকিৎসা সব কিছু কমমূল্যে হত কিন্ত এখন সব কিছুর দাম দ্বিগুন বা ৩ গুন হয়ে গেছে তাই গরু পালন করা খুব মুশকিল। এছাড়া আগে গ্রামে গঞ্জে ঘাস বা বিলে গুরুর খাদ্য থাকত, এখন সেগুলো আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। ফলে গরু পালন করতে খরচ বেশি পড়ে। আবার দেখা যাচ্ছে আমরা অনেক কষ্ট করে গরু পালন করলাম। কিন্তু মিয়ানমার এবং ভারত থেকে গরু আনায় আমাদের দেশীয় গুরুর আর দাম পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমার চাই বিদেশ থেকে যেন কোন ভাবেই গরু না আসে। তাহলে দেশীয় খামারীরা ভাল দাম পাবে।
চকরিয়া শাহারবিল এলাকার মৌলানা আবদুর রহমান বলেন, আমার ঘরে ৩ টি গরু আছে। যেগুলো গত বছর থেকে আমি কুরবানীর জন্য পরিচর্যা করে আসছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি বন্যার কারনে গরুর খাদ্য নষ্ট হয়ে গেছে। তাই গরু ঠিকমত খেতে না পেরে শুকিয়ে গেছে। আবার দেখা যাচ্ছে, গরুর পায়ের কিছুটা সমস্যা দেখা যাচ্ছে,পায়খানাও পাতলা হচ্ছে এখন সমস্যা হচ্ছে পশু হাসপাতালেও নিতে পারছিনা রাস্তার কারনে জানিনা কি করবো খুব চিন্তা হচ্ছে।
এদিকে আসন্ন কুরবানীর ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যাপক আজিম উদ্দিন বলেন, ঈদ মানে আনন্দ বিশেষ করে কুরবানীর ঈদের মূল আকর্ষন গরু কেনা নিয়ে। আমরা চাই গরুর দাম বেশি না হয়ে নাগালের মধ্যে থাকুক। আর কুরবানীর গরুর বাজারগুলো যেন রাস্তার উপর না বসে সে দিকে প্রশাসন কে দৃষ্টি রাখার জন্য অনুরোধ করব।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফুল আফসার বলেন, কুরবানীর পশুর বাজার যেন রাস্তার পাশে না বসে সে জন্য সব ইউএনওকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এবং আইনশৃংখলা বাহিনীকে এ বিষয়ে নজরদারী রাখার জন্য বলা হয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-