কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ১৪০০ মিটারে বসছে জিও টিউব

আজিম নিহাদ :

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধনকারী সবুজ বেষ্টনী ঝাউবাগান হুমকির মুখে পড়েছে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে সাগরের ঢেউয়ের ধাক্কায় ভেঙে যাচ্ছে বালিয়াড়ি।

সম্প্রতি টানা বর্ষণের সময় কয়েকদিনে বিলীন হয়েছে সৈকতের ৫ শতাধিক ঝাউগাছ। সাগরের তলিয়ে গেছে ডায়াবেটিকস পয়েন্ট থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তা। গেল কয়েক বছর ধরেই বর্ষা মৌসুমে সৈকতের বালিয়াড়িতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। যার ফলে ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ঝাউবাগান।

সূত্রমতে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২-৭৩ সালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে প্রায় ৫’শ হেক্টর জমিতে লাগানো হয় সাড়ে ১২ লাখেরও বেশি ঝাউগাছ। পরে বাগানের আয়তন আরো বাড়ে। কিন্তু গত ১০ বছরে সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়েছে লক্ষাধিক গাছ।

পরিবেশবাদীরা জানিয়েছেন, বর্ষা মৌসুমে এই সমুদ্রের ভয়াবহ ঢেউ আছড়ে পড়ছে উপকূলে। ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙছে বালিয়াড়ি, উপচে পড়ছে সৈকতের ঝাউগাছ ও ভেঙে তছনছ হচ্ছে সৈকতের সড়ক।
ঝাউবাগান রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবাদীরা নানা দাবী জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন উদ্যোগ নেয়নি। সর্বশেষ ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুষ্ঠিত সভায় ঝাউবন রক্ষা ও আরো বাগান সৃজনের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে আপাতত লাবণী পয়েন্ট থেকে ডায়বেটিক পয়েন্টে অবস্থিত ঝাউগাছ গুলো রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সমুদ্রের পাড় ভাঙন এবং ঝাউবাগান বিলীন রোধে বসানো হচ্ছে জিও টিউব।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার সূত্রে জানা গেছে, ভাঙন এবং ঝাউবাগান বিলীন ঠেকাতে জিও টিউব বসানো হচ্ছে। সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে ডায়বেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ মিটারে জিও টিউব স্থাপনের কাজ চলছে। চলতি সপ্তাহে জিও টিউব স্থাপনের কাজ শুরু হয়। প্রতি ২০ মিটারে একটি করে জিও টিউব বসানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫টি জিও টিউব বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই জিও টিউব বসানোর কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হবে।

সূত্রমতে, জিও টিউব বসানোর প্রকল্পে বরাদ্দ হয়েছে ৮৪ লাখ টাকা। কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বুধবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, লাবণী পয়েন্ট ও কবিতা চত্বর দুটি পয়েন্টে জিও টিউবে বালি ভর্তির কাজ চলছে। সেখানে দায়িত্বরত এক ব্যক্তি জানান, জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে কাজে বিঘœ ঘটছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজ করা যাচ্ছে মাত্র ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। জোয়ারের পানি স্বাভাবিক পরিমাণে চলে আসলে কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, জোয়ারের পানির ধাক্কায় নিয়মিত ভাঙনের কবলে পড়ে ঝাউগাছ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন রোধ এবং ঝাউবাগান রক্ষা করার জন্য জিও টিউব বসানোর প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে কাজ শুরু হয়েছে। এ মাসের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে।

তিনি আরও বলেন, জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে বর্তমানে টিউব ভর্তিতে কিছুটা বিঘœ ঘটছে। দিনরাত দুই শিফটে কাজ করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দিপু বলেন, ঝাউগাছ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলকে রক্ষা করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষাকারী এই সবুজ বেষ্টনী রক্ষায় জিও টিউব স্থাপনের পাশাপাশি সৈকতের বালিয়াড়িতে শেকড়যুক্ত গাছ রোপণ করতে হবে। কারণ ঝাউগাছ গুলোর শেকড় খুবই দুর্বল।

তিনি আরও বলেন, জিও টিউব স্থাপন কোন স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। এবিষয়ে সরকারকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার বলেন, জিও টিউবগুলো আপাতত ঝাউগাছ এবং সৈকতের ভাঙন রোধ করবে। স্থায়ীভাবে ঝাউগাছ রক্ষা করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

আরও খবর