নামে-বেনামে গাড়ি জমি; গড়ে তুলছে আলিশান বাড়ি; বাড়ির চারপাশে অস্ত্রের পাহারা

খরুলিয়ায় ‘নুরাইয়া’ বউ জামাই’র ইয়াবা কারবার

আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার

নুরুল ইসলাম ওরফে নুরাইয়া। প্রাইমারি স্কুলের মাটিতেও পা রাখেনি। বয়স এখন প্রায় ৩৫। ছয় বছর আগেও নিজ এলাকা কক্সবাজারের খরুলিয়া কোনার পাড়া এলাকায় একটি ছোট্ট মুদির দোকান করত। এখন নুরাইয়ার রয়েছে ১৪টি নামে-বেনামে সিএনজি টেক্সী ও ৭টি নোহা গাড়ি। কোনার পাড়া থেকে সরে পাশের নয়াপাড়া এলাকায় দুই বছর আগে তৈরি করেছে বিশাল বহুল আলিশান বাড়িও। এখনো বাড়িতে ব্যয় হয়েছে মাত্র কোটি টাকার মতো। চলমান রয়েছে বাড়ির কাজও। রাতে রাজপ্রাসাদের মতো দেখতে নুরাইয়ার বাড়িটি। পুরো খরুলিয়াবাসি জানেন নুরাইয়ার হঠাৎ অর্থবিত্তের কাহিনী। যা এখনো প্রকাশ্যে চলমান রয়েছে ইয়াবা ট্যাবলেটের ব্যবসা। নিজ স্ত্রী রাশেদা বেগম ওরফে রাসু বুড়িকে সাথে নিয়ে ইয়াবা ব্যবসা জমজমাট করে তুলেছে পুরো খরুলিয়া এলাকায়। এক নামে সবাই নুরাইয়ার মাদক ব্যবসা সম্পর্কে অবগত। কিন্তু পুলিশ বলছে; নুরাইয়ার বিষয়ে তারা অবগত নয়। কেউ তথ্যও দেয়নি।

নুরাইয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিলংজা ইউনিয়নের পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় মেম্বার আব্দু রশিদ বলেন, নুরাইয়া কি (ইয়াবা) ব্যবসা করে তা সবাই জানে। তার ব্যবসা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। এখনো সমানতালে প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকবার পুলিশকে অবগত করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাত বছর আগে কক্সবাজার কলাতলীতে এক নারীসহ হোটেল থেকে ইয়াবা নিয়ে আটক হয়ে কারাগারে গিয়েছিল নুরাইয়া। পরে জামিনে বের হয়ে একই পেশা শুরু করে। এরপর তিন বছর আগে আবারও ইয়াবাসহ আটক হন কক্সবাজার সদর থানায়। কয়েক মাস কারাগারে থাকেন। পরে বের হয়ে প্রতিযোগিতা মূলক ইয়াবা ব্যবসা করে এখন খরুলিয়ার ডনের খাতায় নাম লেখান। নামে-বেনামে সম্পত্তি ও টাকার মালিক বনে যান। গত দেড় মাস আগে তার চাচাত ভাই আরেক শীর্ষ ইয়াবা কারবারি লিয়াকতকে ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ। আটকের পর কৌশলে লিয়াকতকে আদালতে চালান দেওয়ার বিষয়ে পুলিশ বিরুদ্ধে গুঞ্জন উঠে; মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শীর্ষ ইয়াবা ডন লিয়াকতকে ক্রস ফায়ার না দিয়ে চালান দেন। নুরাইয়ার অন্যতম মাদক পাটনার ছিল লিয়াকত। নুরাইয়ার আরেক সহযোগি রামুর ভুট্টো ইয়াবাসহ আটক হয়ে এখন কারাগারে। আরেক আলোচিত ইয়াবা কারবারি মোস্তাক মেম্বারও তার অন্যতম সহযোগি। আদালতের নির্দেশে মোস্তাক মেম্বারের বাড়িসহ মালামাল ক্রোকের পর থেকে আত্মগোপনে মোস্তাক। নুরাইয়ার ভাই ইমাম শরিফও তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি। শালা যোহের আলমও রয়েছে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ের তালিকায়। টেকনাফ থেকে বিয়ে করে যোহের হয়ে উঠে মাদকের ডন। বিয়ের সূত্রে তিনি ইয়াবার লাইনও পেয়ে যান। তাদের সাথে রয়েছে আব্দুল খালেকের ছেলে বাদশা ও মৃত আব্দুল মোনাফের ছেলে সালাম মিয়া।

এলাকাবাসীরা জানিয়েছে, নুরাইয়া পুরো খরুলিয়ায় মাদকের গং তৈরি করেছে। তার বাসার গলির সামনে হিন্দু পাড়ার সড়ক দিয়ে নয়াপাড়ায় সবসময় ১০ থেকে ১২ জন যুবক ভ্রাম্যমান ইয়াবা বিক্রি করে। প্রতিজনের কোমরে থাকে একটি করে ছোট্ট ব্যাগ। যখন তখন তাদের চোখে পড়বে। প্রতিরাতেই তার গলিতে নামি-দামি গাড়ির যাতায়ত চোখে পড়ার মতো। আর নুরাইয়া নিত্য নতুন বাইক নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরতে থাকে সবসময়। পুরো এলাকায় মাদকের বিস্তার বানিয়েছে নুরাইয়া। সবাই জানে তার প্রকাশ্যে মাদক কারবারির বিষয়টি।

কয়েকজন প্রতিবেশি জানিয়েছে, নুরাইয়ার আলিশান বাড়ির সামনে একটি টং রয়েছে। ওই টংয়ে বসে তার স্ত্রী রাসু বুড়ি প্রতিনিয়ত ইয়াবা বিক্রি করে। চারপাশে নজরদারীও রাখা হয় ওই টং ঘর থেকে। মাদক বিক্রি করে তারা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। সম্প্রতি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে সবার নজর যায় রাসু বুড়ির দিকে। তার পুরো শরীরে স্বর্ণংলকারে ভরা ছিল। যা পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানে মাদকের কারবার বলে আলোচনা হয়েছিল।
এবিষয়ে জানতে নুরুল ইসলাম ওরফে নুরাইয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবাদ কর্মী পরিচয় পাওয়ার সাথে সাথে সংযোগ বিচ্ছিন করে দেন। পরে বহু বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেনি।

কক্সবাজার সদর থানার একটি সূত্রে জানা গেছে, টেকনাফ থেকে বড় বড় ইয়াবা কারকারি রয়েছে খরুলিয়া এলাকায়। তাদের আলিশান বাড়ি দেখলেই বুঝা যায়। গোপনে অনেকের তালিকাও রয়েছে থানায়। তার মধ্যে নুরুল ইসলাম নুরাইয়ার নামও রয়েছে। থানার বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সাথে নুরাইয়ার সখ্যতাও রয়েছে বলে জানা গেছে। যার কারণে নুরাইয়া এখনো অধরা থেকেই ইয়াবার কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। দুই মাস আগে যখন নুরাইয়ার চাচাতো ভাই লিয়াকত ইয়াবাসহ আটক হন; তখন বেশ আলোচনায় আসে নুরাইয়া। কিন্তু অদৃশ্য কারণে নুরাইয়া অধরাই রয়ে গেলো।

নুরাইয়ার এলাকা ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সোলতান বলেন, খরুলিয়া এলাকার শীর্ষ ইয়াবা কারবারির নাম হল নুরাইয়া। তার মাদক ব্যবসা আয়নার মতো পরিস্কার। কিন্তু আইনের আওতায় আসছে না। অনেক বার আইন শৃঙ্খল বাহিনীকে অবগতও করেছি। আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়েও নুরাইয়াসহ খরুলিয়ার শীর্ষ মাদক কারবারিদের বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু হচ্ছে না। তাদের মাদক ব্যবসা কারো অজানা নয়।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার সদর থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, খরুলিয়ায় অনেক মাদক কারবারি রয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। ইতোমধ্যে অনেকজনকে আটকও করা হয়েছে। নুরাইয়ার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে আইনের আওতায় আনা হবে দ্রুত সময়ে।

আরও খবর