বিশেষ প্রতিবেদক :
মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও উখিয়া উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় মাদকের জমজমাট ব্যবসা চলছে। দিনে-রাতে প্রকাশ্যে চলছে মাদকের বেচাকেনা। মাদকের সহজলভ্যতা ও সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের জুম্মা পাড়া এলাকায় মাদকের জমজমাট ব্যবসা চলছে। আবার মাদকাসক্তরা ভোরে কিংবা সন্ধ্যার পর মাদকের টাকা জোগাড় করতে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে।। এ নিয়ে এলাকাবাসীরা আতঙ্কিত।
জালিয়া পালং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে রাত বাড়লেই মাদকসেবি ও মাদক ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেড়েই চলে। রাত্রিবেলায় যা চলতে থাকে বিভিন্ন অন্ধকার অলিগলিতে। এসব মাদকসেবি অধিকাংশ মরণ নেশা ইয়াবা ট্যাবলেটে আসক্ত হওয়ায় এদের দিনের বেলা সাধারণত দেখা মেলে না। রাত বাড়লেই তারা বেড়িয়ে পড়ে মাদকের সন্ধানে। আর শুধুমাত্র মাদকের কারণেই উপজেলায় বেড়ে চলেছে একের পর এক দুর্ধষ চুরি ও ডাকাতির মতো ঘটনা। আর এসব ঘটনার সাথে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবিদের একটি যোগসাজশ রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। আর এতে জড়িয়ে পড়ছে সম্ভ্রান্ত পরিবারের পাশাপাশি আর্থিক অনটনে থাকা পরিবারের শিশু-কিশোররাও।
সরকার যখনই সারা দেশে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। টেকনাফ সহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধে একের পর এক মাদক সম্রাটরা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
একের পর এক রাগব বোয়াল আইনের আওতায় আসছে ঠিক তখনই বিভিন্ন এলাকার পালিয়ে থাকা মাদক কারবারি ও মানব পাচারকারীদের সংগঠিত করেছে জুম্মাপাড়া বিপদগামী এক ইয়াবা ও মানবপাচার সিন্ডিকেট।
এই মাদক ও মানব পাচার সিন্ডিকেট দেশের শীর্ষ মাদক বেপারিদের সাথে সমন্বয় করে দীর্ঘদিন ধরে জুম্মা পাড়ার বিভিন্ন গোপন রাস্তা ব্যাবহার করে মাদক ও মানব পাচার চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জুম্মা পাড়া এলাকার কালাচিন্দা খলা, হাকিম মার্কেট, ক্যাম্পস্থ জাফর মার্কেট যেন মিনি মাদকের হাট। ছোট এই মার্কেটের আশে পাশের পাহাড়েও চলে মাদক সিন্ডিকেটের ইয়াবা ও জুয়ার আসর। তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে আরো জানান, সারাদেশে প্রশাসন ইয়াবা ব্যাবসীদের কঠোর ভাবে দমনের চেষ্টা চালালেও আমাদের এই জুম্মা পাড়ায় প্রশাসনের তেমন কোন অভিযান চোখে পড়েনি। মাদকের চিহ্নিত স্পটগুলোর দিকে পুলিশের নেই নজর।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জালিয়া পালং ইউনিয়নে এখনও বহাল তবিয়তে আছে এলাকার মাদকের চিহ্নিত কারবারিরা। তারা টেকনাফ থেকে ইয়াবা নিয়ে এসে পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করছে। জুম্মা পাড়া এলাকার কালাচিন্দা খলা, হাকিম মার্কেট, ক্যাম্পস্থ জাফর মার্কেট যেন মিনি মাদকের হাট এবং এর আশেপাশের পাহাড় ও বাড়ি গুলোতে ইয়াবার ব্যবসা জমজমাট। এই মাদক হাতের নাগালে পাওয়ার সুবিধা হওয়ায় এর প্রতি বেশি ঝুঁকছে উঠতি বয়সী মাদক প্রেমি এবং ব্যবসায়ীরা। ফলে দিন দিন বেড়েই চলছে মাদকাসক্তের সংখ্যার পাশাপাশি চুরি, ছিনতাইয়ের মত অপরাধ।
কারা নিয়ন্ত্রনে চলছে মাদক ব্যবসা’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান, মাদক ও মানব পাচার সিন্ডিকেটের প্রধান হলেন ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শামসুল আলম মেম্বারের ছেলে জাফর আলম। যে কিনা ২নং ওয়ার্ড থেকে এসে ১নং ওয়ার্ডে স্থায়ী হয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করে ইয়াবা ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে। তার সহযোগী হিসেবে আছেন একই (১নং) ওয়ার্ডের বদি আলমের ছেলে বেলাল উদ্দিন (প্রকাশ লম্বা বেলাল), অলি আহমদের ছেলে নুরুল আলম (আফু নুর আলম), আশরাফ আলির ছেলে বাবুল,মকবুল আহমেদের ছেলে বেলাল উদ্দিন, শামসু আলমের ছেলে আমির হামজা, রশিদ আলমের ছেলে রহিম উল্লাহ, নুর আহমদের ছেলে আবদু রহমান, মনির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আলী, হামিদুর রহমানের ছেলে চেহের আলী, মৃত আব্দুস সালামের ছেলে বশির আহমদ, মৃত ছিদ্দিক আলমের ছেলে বেলাল উদ্দিন, শুক্কুরের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ও জাহাঙ্গীরের বোনের জামাই সোনার পাড়া এলাকার শাহাজালাল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন বয়সের ইয়াবা আসক্তদের কাছে রাত হচ্ছে সবচেয়ে আদর্শ সময়। তাই রাতের আঁধারে মাদক গ্রহণের পাশাপাশি এসব মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ী জড়িয়ে পড়ছে নানাবিধ অপরাধের সঙ্গে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ইয়াবা সেবনকারীই আবার সেবনের পাশাপাশি ইয়াবা বিক্রির সাথেও জড়িত রয়েছে।
এসবের মধ্যে কেউ জড়াচ্ছে কৌতুহলবশত, আবার কেউ জড়াচ্ছে রোজগারের আশায়। এর প্রধান কারণ বর্তমানে মাদকের ব্যাপক সহজলভ্যতা।
মরণ নেশা ইয়াবা ট্যাবলেটের কুফল সম্পর্কে চিকিৎসকরা বলছেন, যারা নিয়মিত ইয়াবা সেবন করছে তারা ভয়ংকর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারন হিসাবে তারা উল্লেখ করেন, ইয়াবা সেবনে মাদকাসক্তদের সাময়িক উত্তেজনা বা সুখকর অনুভূতি হয় এবং নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়। নিয়মিত ইয়াবা সেবনে তারা এক সময় ঘুমের অপূর্ণতার কারনে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সম্মুখিন হয় এবং সবচেয়ে তিকর বিষয় হচ্ছে এসব মাদকাসক্তের ধীরে ধীরে শারীরিক শক্তি বা জীবনি শক্তি হ্রাস পায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ মতা খুব দ্রুত কমে যায়। তাই তারা সামান্য অসুখেই মৃত্যুর মুখে পতিত হতে পারে।
এ ব্যাপারে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়েরের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, পুলিশ সবসময় তৎপর রয়েছে এলাকার চুরি ডাকাতি মাদক সহ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ধরে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে। এছাড়া স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয়দের নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনামূলক ক্যাম্পেইন করা হয়।
তবে নিরপরাধ লোকজন যাতে হয়রানির শিকার না হয় তা মাথায় রেখে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এলাকার প্রকৃত চুর, ডাকাত মাদক ও ইয়াবা ব্যবসায়িদের সম্পর্কে তথ্য পুলিশের নিকট জানানোর সচেতন মহলের নিকট অনুরোধ জানান।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-