রাখাইনে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ : আতংকে কক্সবাজার আশ্রিত রোহিঙ্গারা

ডেস্ক রিপোর্ট :

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সংঘাতকবলিত রাখাইন রাজ্যে ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়ার পর তা কার্যকর করেছে টেলিকম কোম্পানিগুলো।শনিবার দেশটির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অপারেটর টেলিনর গ্রুপের বিবৃতির বরাতে এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স।

সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সরকার বাহিনীগুলো স্থানীয় বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই করছে। এ লড়াইকে কেন্দ্র করে বিদ্যমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশটি দেয়া হয়েছে।

টেলিনর গ্রুপ জানিয়েছে, মিয়ানমারের যোগাযোগ ও পরিবহন মন্ত্রণালয় টেলিকম কোম্পানিগুলোকে রাখাইন ও চিন রাজ্যের আটটি শহরে সাময়িকভাবে ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। ‘অবৈধ তৎপরতা বাস্তবায়নে ইন্টারনেটের উপদানগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে’ জানিয়ে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ কার্যকর করে শুক্রবার রাত থেকে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে টেলিনর।

এদিকে বাংলাদেশের সীমান্তবতী রাখাইন রাজ্যে ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ রাখার ফলে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা তাদের আত্য়ি-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।এতে আতংক বিরাজ করছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। তারা আশংকা করছেন রাখাইনে আবারও সেনা অভিযান চালিয়ে অবশিষ্ঠ রোহিঙ্গাদের দমন পীড়ন ও হত্যাযঙ্গ না চালায়।প্রসঙ্গত ২০১৭ সালে সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে রাখাইনের সাত লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম সীমান্ত পার হয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমারের রাখাইন ও শিন প্রদেশের সহিংসতা কবলিত এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে অঞ্চল দুটিতে দ্রুত মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ দিতে বর্মি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন।

শনিবার সকালে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কোনও বিলম্ব ছাড়াই ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরায় চালু করা উচিত। কেননা ইন্টারনেট পরিষেবা বন্দের এ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বার্মার আরও মানহানি ঘটাবে।

অপরদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংঘি লি অভিযোগ করেছেন, ইন্টারনেট বন্ধ রেখে মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। রেডিও ফ্রি এশিয়াকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, রাখাইনের গ্রামগুলোতে সম্প্রতি নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে।

২২ জুন রাখাইনে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়ার খবর জানায় মিয়ানমারের একটি শীর্ষ টেলিকম প্রতিষ্ঠান।

সম্প্রতি রাখাইনে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সশস্ত্র যুদ্ধ চলছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার তথ্যানুযায়ী, গত নভেম্বর থেকে দু’পক্ষের লড়াইয়ের কারণে রাখাইনের মধ্য ও উত্তরাঞ্চল এবং প্রতিবেশী চিন রাজ্যের হাজার হাজার লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।  ২২ জুন শনিবার মিয়ানমারের শীর্ষস্থানীয় অপারেটর টেলিনর গ্রুপের বিবৃতির সূত্রে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ সংঘাত কবলিত রাখাইনে ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ার পর তা কার্যকর করেছে টেলিকম কোম্পানিগুলো।

ইয়াংঘি লি রেডিও ফ্রি এশিয়াকে বলেছেন, এবার প্রথমবারের মতো মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে। ২০১৬ সালে যখন রাখাইন রাজ্যে নিধনযজ্ঞ চালানো হয়েছিলো, তখন ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি। ২০১৭ সালেও (দ্বিতীয়বারের মতো নিধনযজ্ঞ চালানোর সময়) ইন্টারনেট বন্ধ হয়নি। এবার কেন তারা ইন্টারনেট বন্ধ করে দিচ্ছে তা আমি জানি না। নিধনযজ্ঞ চলার সময়ই আমরা বুঝে যাই, এর পরিণাম কী হতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে এরইমধ্যে আমরা যেসব খবর পেয়েছি তাহলো, সম্প্রতি গ্রামগুলোতে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে, তিন গ্রামবাসী মারা গেছে, অনেকে আহত হয়েছে।’

আরও খবর