বন্দরের দ্বিতীয় কন্ট্রোল রুম চালু হচ্ছে মহেশখালীতে

ডেস্ক রিপোর্ট – বহুল প্রত্যাশার মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের পথে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এই বন্দরকে লক্ষ্য করে মহেশখালীতে চালু হচ্ছে দ্বিতীয় কন্ট্রোল রুম। বন্দরের একশ ত্রিশ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম দুটি কন্ট্রোল রুম চালু করা হচ্ছে। এখানে স্থাপিত রিলে স্টেশন এবং কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে কুতুবদিয়াসহ সন্নিহিত অঞ্চলের জাহাজ মনিটরিংসহ সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হলেও জেটি নির্মাণের কাজ শুরু হবে ২০২১ সালে। ২০২৪ সালে মাতারবাড়ীতে অন্তত ১০ হাজার টিইইউএস কন্টেনারবাহী ১৬ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ মাতারবাড়ীতে বড় বড় মাদার ভ্যাসেল ভিড়ানোর উপযোগী করে একটি সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের ‘অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত কৌশলের’ অংশ হিসেবে দেওয়া ঋণে এই বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম দফায় ২ হাজার ৬৫৫ মিলিয়ন ইয়েন অর্থ দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরকে। মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে এক দশমিক ২৬ শতাংশ সুদে এই ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। দশ বছরের গ্রেস পিরিয়ডের পরবর্তী বিশ বছরের মধ্যে এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আবার অর্থ ছাড়ের শর্তগুলোর মধ্যে বন্দরের কার্যক্রম শুরু পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপ রয়েছে। ডিজাইন এবং প্ল্যানিং থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সময়ে উপরোক্ত অর্থ খরচ করতে হবে।

তিনি জানান, ছয় বছরের মধ্যে অর্থ ব্যয় করার শর্ত রয়েছে। এতে করে আগামী ছয় বছরের মধ্যে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম শুরু করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে মাতারবাড়ী বন্দরের জন্য ১২২৫ একর ভূমি হুকুম দখলের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রথম দফায় ২৯৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে বাকি ৯৩১ একর ভূমি হুকুম দখল করা হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে পুরো এলাকায় সীমানা নির্ধারণ করেছে।

এই বন্দরকে লক্ষ্য রেখে বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে বহির্নোঙরের সীমানা ৭ নটিক্যাল মাইল থেকে বাড়িয়ে ৫০ নটিক্যাল মাইলে উন্নীত করেছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর কুতুবদিয়া, মহেশখালী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। বিস্তৃত এই বহির্নোঙর থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষের দৈনিক আয় কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ সীমানা বৃদ্ধি করার পরপরই মাতারবাড়ী এলাকায় একটি রিলে স্টেশন এবং একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করছে। ইতোমধ্যে কন্ট্রোল রুম স্থাপনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। এখান থেকে কতুবদিয়া এবং মহেশখালী অঞ্চলের গভীর সাগরে অবস্থানকারী জাহাজে যোগাযোগ এবং মনিটরিং করা হবে।

এ ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অ্যাডমিন অ্যান্ড প্ল্যানিং) মোহাম্মদ জাফর আলম বলেন, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় কয়লা পরিবহনের জন্য একটি বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়লাবাহী জাহাজ আনার জন্য ১৪.৩ কিলোমিটার লম্বা এবং আড়াইশ মিটার প্রস্থের চ্যানেল ড্রেজিং করে গভীরতা ১৬ মিটারের বেশি করা হয়েছে। এর সাথে পাশে আরো একশ মিটার ড্রেজিং করে মাতারবাড়ী বন্দরের জন্য চ্যানেল তৈরি করা হচ্ছে। ড্রেজিংয়ের মাটি দিয়ে ভূমি উন্নয়নের কাজ করা হবে। ২০২১ সালে জেটি নির্মাণের কাজ শুরু করব। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ জেটি নির্মাণের কাজ শেষ হবে। ২০২৪ সালের শুরুতেই এই জেটিতে অন্তত ১৬ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো যাবে। ওই জাহাজে কমপক্ষে দশ হাজার টিইইউএস কন্টেনার থাকবে।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, শুরুতে ৪৬০ ফুট দীর্ঘ একটি কন্টেনার টার্মিনাল এবং ৩০০ ফুট লম্বা একটি মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ করা হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে বর্তমানে ১৯০ মিটার লম্বা ৯.৫ মিটার ড্রাফটের কন্টেনার ভ্যাসেলে ১৪শ টিইইউএস থেকে ১৮শ টিইইউএস কন্টেনার বহন করতে পারে। কিন্তু মাতারবাড়ী বন্দরে ৩০০ মিটার লম্বা ১৬ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব হবে।

আরও খবর