বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসছে বলে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে কেন তিনি রাজনীতি ছাড়ছে এনিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। বিএনপির একটি অংশ বলছে তারেক জিয়া বিএনপির পূর্ণ কর্তৃত্ব গ্রহণ করতে চান। একক সিদ্ধান্তে দল পরিচালনা করতে জান। বেগম খালেদা জিয়া দলের চেয়ারপারসন থাকার কারণে বিএনপির একটি বড় অংশি, বিশেষ করে খালেদার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অনেকেই তারেক জিয়ার নির্দেশ সিদ্ধান্ত মানতে অসম্মতি জানাচ্ছে। এরফলে তারা দলের মধ্যে নানারকম বিভাজন তৈরী করছে। এ কারণেই আপাতত রাজনীতি থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে অবসরে পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, বেগম খালেদা জিয়ার অবসরের বিষয়টি সম্পূর্ণ একটি সমঝোতার অংশ। বেগম খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্ত করার জন্যই এই পন্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঐ সূত্রমতে সরকারের সঙ্গে বিএনপির যে সমঝোতা আলোচনা হচ্ছে, তার অন্যতম বিষয় হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে আপাতত রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করতে হবে। এনিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তিনি এমনিতেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখছেন না। জামিন পেলেও তিনি হাসপাতাল এবং চিকিৎসায় সময় কাটাবেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, এ ব্যাপারে বিএনপির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা চায় সরকার। এ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আদালতে আটকে যেতে পারে বলে ও তারা মনে করছে। বিএনপির একটি সূত্র বলে, বেগম খালেদা জিয়াকে আগামী কোরবানি ঈদের আগে মুক্ত করারিএকটি পরিকল্পনা নিয়ে তারা এগুচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনী লড়াই অব্যাহত রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার এখন আর দুটি মামলায় জামিন বাতিল রয়েছে। এ দুটি মামলায় জামিন বা পূর্ণাঙ্গভাবে জামিনে মুক্ত হতে হলে অবশ্যই সরকারের সদয় সম্মতি লাগবে। কারণ বেগম খালেদা জিয়াকে যদি সরকার অন্য মামলায় আটকাতে চায়, অন্য মামলায় যদি গ্রেপ্তার দেখায় তাহলে আইনজীবিদের আসলে কিছুই করণীয় থাকবে না। বিএনপির ঐ সূত্রগুলো বলছে, বেগম খালেদা জিয়া এখন কারামুক্তির জন্য সবকিছু করতেই প্রস্তুত রয়েছেন।
সূত্রমতে সরকারের পক্ষ থেকে যে তিনটি শর্ত দেয়া হয়েছে, সে তিনটি শর্ত পূরণ করতেই তিনি রাজী আছেন। এরমধ্যে প্রথম শর্ত হলো- রাজনীতি থেকে তিনি নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন। দ্বিতীয় হলো- তিনি দেশের বাইরে যাবেন না। তৃতীয় হলো- তিনি কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ বা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন না। শুধুমাত্র তার চিকিৎসা এবং ব্যাক্তিগত কাজকর্মে ব্যস্ত থাকবেন।
সূত্রমতে এ বিষয়ে বেগম খালেদা জিয়া সবুজ সংকেত দিলেও সরকার মনে করছে যে খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পেয়ে ভিন্নরূপ ধারণ করতে পারেন। এ কারণেই সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার বিষয়টি বলা হচ্ছে। তবে বিএনপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে কোনোরকম সমঝোতার প্রশ্নই আসে না।‘
একইরকম মনোভাব ব্যাক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন যে, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সম্পুর্ণভাবেই আদালতের এখতিয়ারাধীন বিষয়। এখানে সরকারের কিছুই করণীয় নাই। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোনোরকম আলাপ আলোচনা হচ্ছে না বলে তিনি জানান। কিন্তু বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তির সঙ্গে বিএনপির নেতৃবৃন্দের আলাপ আলোচনা চলছে। এই আলাপ আলোচনার অংশ হিসেবেই বিএনপি এখন সরকারকে না চটানোর নীতি নিয়ে কোনোরকম কর্মসূচি না দিয়ে রাজনীতি করার কৌশল গ্রহণ করেছে। এই সমঝোতার অংশ হিসেবেই বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংসদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে বলেও ওই সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। তবে বিএনপির অন্য একজন নেতা বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া যে রাজনীতি ছাড়ছেন এটা নিশ্চিত। এটা সরকারের চাপে নয় বরং তারেক জিয়ার চাপে। তারেক জিয়া মনে করছেন যে, দলের পূর্ণ কর্তৃত্ব ছাড়া দলকে সংগঠিত করা এবং পুনর্গঠন করা অসম্ভব ব্যাপার এবং তিনি তার পছন্দমত দলকে সাজাতে চান। এ ব্যাপারেও খালেদা জিয়ার সম্মতি রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে যে কারণেই হোক শেষ পর্যন্ত যে খালেদা জিয়া রাজনীতি ছাড়ছেন এ ব্যাপারে বিএনপির প্রায় সকল নেতাই একমত পোষণ করেছেন।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-