দীর্ঘ ২০ দিন পর যেভাবে গ্রেফতার হন দাড়ি-গোঁফওয়ালা ওসি মোয়াজ্জেম

অনলাইন ডেস্ক :

আদালত কর্তৃক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় গত ২৭ মে। ৩ জুন ফেনীর সোনাগাজী থানায় এ গ্রেফতারি পরোয়ানা পৌঁছায়। এরপরেই উধাও ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ক্রমান্বয়ে দিন এগোতে থাকে কিন্তু গ্রেফতারতো দূরের কথা তার সন্ধানই দিতে পারেনি সোনাগাজী থানা। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ওসি মোয়াজ্জেমের গ্রেফতার না হওয়ার বিষয়ে দেশব্যাপী শুরু হয় আলোচনা। অনেকেই ধারণা করেছেন, হয়তো দেশ ছেড়েছেন তিনি।

এর পরেই তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে পুলিশ সদর দফতরে তোড়জোড় শুরু হয়। এ বিষয়ে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি। অবশেষে  গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর রোববার (১৬ জুন) রাজধানীর কদম ফোয়ারা থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ।

কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য গ্রেফতারের বিষয়টি একেবারে সহজ ছিল না। নির্দিষ্ট তথ্যের ওপর নির্ভর করে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে গ্রেফতার করা ওসি মোয়াজ্জেমকে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে খবর আসে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন শনিবার (১৫ জুন) ঢাকায় তার এক আত্মীয়ের বাসায় রয়েছেন। তিনি রোববার হাইকোর্টে আগাম জামিনের জন্য আসবেন এ তথ্য ছিল গোয়েন্দাদের কাছে। এ খবর পাওয়ার পরপরই তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখে পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম।

ডিবি সূত্রে জানা গেছে, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতারের জন্য ডিবির একটি টিম রোববার সকাল থেকেই হাইকোর্ট এলাকায় অবস্থান নেয়। তবে ডিবি নয় শাহবাগ থানা পুলিশই ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করে।

শাহবাগ থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে শাহবাগ থানা পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম হাইকোর্ট এলাকার বাইরে অবস্থান নেয়। হাইকোর্ট গিয়ে তারা জানতে পারেন, ওসি মোয়াজ্জেম হাইকোর্টের ভেতরে আছেন। সঙ্গে রয়েছেন পরিবারের কয়েকজন সদস্য। এরপর আদালত থেকে বের হওয়ার অপেক্ষায় থাকেন পুলিশ সদস্যরা। পরে বিকেলে সাড়ে ৩টায় রাজধানীর কদম ফোয়ারা থেকে তাকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ১০-১৫ দিন ধরে রাজধানীতে নিজের খালার বাসাসহ বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাসায় লুকিয়ে অবস্থান করছিলেন তিনি। তারা আশা ছিল ১৬ জুন আদালত খুললে জামিন আবেদন করলে তিনি আগাম জামিন পেয়ে যাবেন। সেই আশায় তিনি আদালতে যান।

ওসি মোয়াজ্জেমের আত্মীয় খায়রুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আজ সকালে আমরা হাইকোর্টে এসেছিলাম মোয়াজ্জেমের আগাম জামিনের জন্য। কিন্তু শুনানির তারিখ সোমবার (১৬ জুন) ঠিক হয়। এরপর বিকেলের দিকে তাকে গ্রেফতার করে।

এদিকে ওসি মোয়াজ্জেমের বিষয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলনে, ‘শাহবাগ থানাধীন কদম ফোয়ারার সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের কাছে গোপন তথ্য ছিল তিনি এখানে থাকতে পারেন। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওসি মোয়াজ্জেম এখন শাহবাগ থানায় পুলিশের হেফাজতে আছেন। আমরা সোনাগাজী থানায় ইতোমধ্যেই খবর দিয়েছ সেখান থেকে একটা টিম আসছে। তারা আসলে তাদের হাতে তাকে তুলে দেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে তারই সহপাঠীরা। এর আগে নুসরাত মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে সোনাগাজী থানায় যান। থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং তা ভিডিও করে ছড়িয়ে দেন। ওই ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে সেটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই গত ২৭ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে ওই দিনই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।

আরও খবর