২৪ ঘন্টায় ৫ জনের লাশ উদ্ধার : আতংকে ইয়াবা কারবারি ও হুন্ডি চক্র

ডেস্ক রিপোর্ট :

কক্সবাজারের সদর,টেকনাফ ও পেকুয়া উপজেলায় গত ২৪ ঘন্টায় বন্দুক যুদ্ধে চার মাদক ব্যবসায়ী সহ ৫ জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে তিন মাদক ব্যবসায়ী এবং সদরের ঈদগাওঁতে অপর এক মাদক ব্যবসায়ী বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়।এছাড়া পেকুয়ায় নিখোঁজের দুদিন পর অপরএক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।এর আগে ১৫ জুন রাতের প্রথম প্রহরে টেকনাফে আসামী নিয়ে পুলিশের মাদক উদ্ধার অভিযানে গেলে কথিত বন্দুক যুদ্ধে মোঃ রাসেল মাহমুদ (৩৬) নামে নারায়নগঞ্জের এক মাদক কারবারী নিহত হয়।

এছাড়া কক্সবাজার শহরের আইবিপি রোড থেকে শহিদুল ইসলাম নামে এক চিহ্নিত ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসায়ী নিখোঁজ রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় এসব ঘটনার জেরে ইয়াবা কারবারি ও হুন্ডি চক্রের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে।

জানা যায়,১৫ জুন রাত ১২টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের পাহাড়ি এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিন মাদক কারবারি নিহত হয়।এ সময় র‌্যাবের দুই সদস্যও আহত হন। নিহতরা হলেন- কক্সবাজার সদরের চৌধুরী পাড়ার গবি সুলতানের ছেলে দিল মোহাম্মদ (৪২), একই এলাকার মোহাম্মদ ইউনুছের ছেলে রাসেদুল ইসলাম (২২) ও চট্টগ্রামের মাস্টার হাট আমিরাবাদের আবুল কাসেমের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪২)।র‌্যাবের দাবি, ঘটনাস্থল থেকে এক লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা, চারটি দেশীয় বন্দুক (এলজি) ও ২১ রাউন্ড তাজা কার্তুজ জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় র‌্যাবের দুই সদস্য আহত হন। আহতরা হলেন- সৈনিক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর (৩২) ও কনস্টেবল মোহাম্মদ সোহেল (২৮)।বন্দুকযুদ্ধে তিন জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাব-১৫ এর টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ লে. মির্জা শাহেদ মাহতাব।

লে. মির্জা শাহেদ মাহতাব আরও বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য নিহতদের লাশ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতরা দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। ঘটনাস্থল থেকে এক লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবাসহ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

অপরদিকে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের হিমছড়ি ঢালা থেকে অপর মাদক ব্যবসায়ীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।নিহত যুবকের নাম রফিকুল ইসলাম রফিক(৩০)। সে কক্সবাজার শহরের বইল্লাপাড়ার বাদশাহ কবিরাজের পুত্র বলে সূত্রে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়,১৬ জুন রবিবার সকাল ১০ টার দিকে পথচারীরা ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের হিমছড়ি ঢালা নামক স্থানে এ লাশটি পরে থাকতে দেখে। পরে ঈদগাঁও পুলিশকে খবর দিলে যুবকের লাশ উদ্ধার করে কক্সবাজার হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে নিহত যুবকের নাম রফিকুল ইসলাম রফিক। সে শহরের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে ১০টির মতো মামলা রয়েছে।

এছাড়া কক্সবাজারের উপকূলীয় পেকুয়ায় দুইদিন নিখোঁজ থাকার পর মোঃ ইসমাঈল (৭৯) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের পশ্চিমকূল এলাকার মৃত এজার মিয়ার পুত্র। রবিবার বিকাল ৪টায় স্থানীয়রা লাশটি সাগরে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দিলে লাশটি উদ্ধার করা হয়।স্থানীয় কয়েকজন জানান, বিগত দুইদিন আগে লাশটি নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজার পরও তাকে পাওয়া যায়নি। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে কয়েকজন জানান।সর্বশেষ রবিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় স্থানীয়রা কুতুবদিয়া চ্যানেলে দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। ৪টার দিকে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।পেকুয়া থানার ওসি জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, লাশটি উদ্ধার করার জন্য পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।

উল্লেখ্য কক্সবাজারের মাদক অধ্যূষিত উপজেলা টেকনাফের ইয়াবা কারবারী ও জেলার হুন্ডি কারবারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহন করেছে সরকার। তাদের আইনের আওতায় আনতে সরকারের উচ্চ মহল থেকে প্রশাসনের সব পর্যায়ে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, কাস্টমস, দুদক।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩১ মে রাতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দেশের দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় ইয়াবা ডন সাইফুল করিম(৪৫) নিহত হয়।এনিয়ে গত ১৫ দিনে (৩১ মে থেকে ১৫ জুন) বন্দুক যুদ্ধে রোহিঙ্গা সহ ১২ মাদকপাচারকারী নিহত হল।

এছাড়া চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৬জুন পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে ৮৩ মাদক কারবারি। এরমধ্যে পুলিশের সঙ্গে ২৭, বিজিবি’র সঙ্গে ১৮, র‌্যাবের সঙ্গে ১৯ ও ইয়াবা কারবারিদের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলিতে ১৯ জন নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই টেকনাফে।

আরও খবর