শহিদুল ইসলাম, উখিয়া
কক্সবাজারের উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে বাজারকেন্দ্রিক রোহিঙ্গা চোরাচালানিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। স্থানীয় পাচারকারীদের সঙ্গে মিলে অবৈধ বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক হিসেবে ভূমিকা রাখছে রোহিঙ্গা সিন্ডিকেট। তাঁরা ইয়াবা পাচার, হুন্ডি বাণিজ্য, চোরাচালান, সোনাপাচার, মানব পাচার, প্রত্যাবাসন-বিরোধী রোহিঙ্গাদের অর্থজোগানসহ নানা কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে কুতুপালং পান বাজারের দক্ষিণ অংশে বুলু ফার্মেসীর মালিক নতুন আশ্রিত রোহিঙ্গা মোঃআমিন ওরফে মাত আমিন প্রকাশ কেটিপি কিং আমিন ফার্মেসীর আঁড়ালে ইয়াবা পাচার,বেচা-বিক্রি,হুন্ডি বাণিজ্য,মিয়ানমার কেন্দ্রিক চোরাই পণ্যের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ সহ বহুমুখী অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
এই মাত আমিন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রিত আল ইয়াকিন সদস্য রোহিঙ্গা ছৈয়দুর রহমান (ইয়াবা ছৈয়দ), কুজুলী ইউনুস সিন্ডিকেটের মহাজন হিসেবে কুখ্যাতি লাভ করেছে মাত আমিন।তাদের মধ্যে ইয়াবা ছৈয়দ সাহেববাজারের বদিউর রহমানের ছেলে এবং ইয়াবা মহাজন বলে সূত্রে জানা গেছে।
অপর দুজন মিয়ানমারের বলীবাজারের বাসিন্দা হলেও এপারে এসে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মাত আমিনের ছত্রছায়ায় থেকে।রোহিঙ্গাদের শক্তিশালী ইয়াবা,মাদক,চোরাচালান, স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের একচ্ছত্রঅধিপত্য বিস্তার করে চলছে মাত আমিন সিন্ডিকেট।
রোহিঙ্গা ও স্থানীয় সিন্ডিকেটের সাথে আতাঁত করে মাত আমিন হরদম চালিয়ে যাচ্ছে চোরাই পণ্যের ব্যবসা। মাত আমিন কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রিত নতুন রোহিঙ্গা। কুতুপালং বাজারে ভুঁয়া নামে ফার্মেসী খুলে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে চোরাই ব্যবসা।
দোকানে বসে এসব প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা,মাদক,চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। মাত আমিনের সাথে আগে থেকেই সখ্যতা রয়েছে স্থানীয় ইয়াবা,মাদক,হুন্ডি ও চোরাচালান সিন্ডিকেটের সাথে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইয়াবা ছৈয়দ কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়ায় আর কুজুলী ইউনুস কুতুপালংয়ের বাজারে অবস্থান করে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠান মিয়ানমারে। সেখান থেকে পাচার করে এপারে নিয়ে আসছেন ইয়াবা, সোনার বার, নিষিদ্ধ সিগারেটসহ নানা চোরাই পণ্য।মাত আমিনের আরেক ভাই ফরিদ বালুখালী ক্যাম্পে অবস্থান হুন্ডি ব্যবসা,স্বর্ণ ব্যবসা,ইয়াবা কারবার ও মিয়ানমার পণ্যের বিশাল চোরাচালান ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে।তাঁর আরেক ভগ্নপতি আর মাত আমিন মিলে কুতুপালং ক্যাম্পের অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে।তাতে প্রশাসনের কতিপয় দালাল মাত আমিনের নিকট টাকা থেকে মাসোহারা নিচ্ছে।
নানা সূত্রে জানা গেছে, চক্রটি মিয়ানমারে থাকতে অবৈধভাবে এসব পণ্য বাংলাদেশে কালোবাজারি করত। এপারে এসেও তা চালিয়ে যাচ্ছে অবাধে। মাত আমিন ও ছৈয়দুর রহমান মিয়ানমারের থাকতেও মূলত ইয়াবা এবং হুন্ডি ব্যবসার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতো।
মাত আমিন ও কুজুলী ইউনুস সিন্ডিকেটের পাচার করা চোরাই পণ্যে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। ইতিপূর্বে মাত আমিন ও কুজুলী ইউনুস সিন্ডিকেটের বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ সিগারেট আটক হয়। কিন্তু তাতে থেমে থাকেনি তাদের কর্মযজ্ঞ। মিয়ানমারে থাকতেই পেশাদার চোরাকারবারীর মাধ্যমে নানা চোরাই পণ্যের চালান বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতো।
সোনার বার ও মানব পাচারেও জড়িত চক্রটি। ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা ও চোরাচালানে জড়িত বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এলেও মাত আমিন আর কুজুলী ইউনুসের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রয়েছে মিয়ানমারের ব্যবসায়ী মগ ও জান্তা সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সাথে।
বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে মাত আমিন ও কুজুলি ইউনূসের পাঠানো কোটি-কোটি টাকা মিয়ানমারে ব্যবস্থাপনা করেন তাঁরা। চক্রটিকে বাংলাদেশে সহায়তা করছে স্থানীয় কিছু বিকাশ এজেন্ট ও হুন্ডি ব্যবসায়ী। মিয়ানমার থেকে লাখ-লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে এদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর উখিয়ায় তৎপরতা বেড়ে যায় বিকাশ এজেন্ট ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের।রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক গড়ে উঠেছে শতাধিক ফার্মেসীর আঁড়ালে হুন্ডি ও বিকাশ এজেন্ট।
ফার্মেসীতে রোগী দেখার অজুহাতে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের আনাগোনাও বেড়ে গেছে।প্রতি দিবারাত্রি মাত আমিনদের মত রোহিঙ্গা ফার্মাসিস্টরা কৌশলে অপকর্ম করে যাচ্ছে।রোগী সেজে ফার্মেসীতে প্রবেশ,ইয়াবা আদান-প্রদান,হুন্ডির টাকা লেনদেন,মিয়ানমার পণ্যের বিকিকিনি করে চলছে। এসব ফার্মেসীর মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রবাসীদের পাঠানো টাকাসহ ইয়াবা বিক্রির টাকা লেনদেন হচ্ছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিক্তিক সবচেয়ে বেশি বিকাশ ও হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেটভুক্তরা। মুদির দোকান,ফার্মেসীর আঁড়ালে বিকাশের এজেন্ট সিম ছাড়াও রোহিঙ্গাদের রয়েছে নামে-বেনামে অর্ধশত ব্যক্তিগত বিকাশ সিম। এসব সিম থেকে প্রতিদিন লেনদেন করা হচ্ছে লাখ-লাখ টাকা।
বাড়ি-বাড়ি গিয়েও রোহিঙ্গাদের হাতে হুন্ডির টাকা পৌঁছে দেয়া হয়।কুতুপালং বাজারের মাত আমিন,কুজুলী ইউনুস সিন্ডিকেটের পাশাপাশি কুতুপালং বাজারের স্থানীয় কয়েকজন এজেন্টের বিরুদ্ধেও ইতিমধ্যে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের তেমন কোন তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লাইসেন্সভুক্ত স্থানীয় ফার্মাসিস্ট অভিযোগ করে বলেন মাত আমিন নতুন আশ্রিত রোহিঙ্গা। হটাৎ লাখ-লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ফার্মেসী খুলে বসল।তাঁর আয়ের উৎস কোথায়? আর ঔষধের মুল্য কেনার চেয়ে কমও নেই।কিভাবে পৌষিয়ে নেই আমাদের বোধগম্য নয়।
তবে মাত আমিনের ফার্মেসীতে রাত-বিরাতে অজ্ঞাত মানুষজনের আনাগোনা দেখা যায়।শুনেছি তাঁরা নাকি পার্টির লোক।তাদের সাথে কোটি-কোটি টাকার ব্যবসা আছে মাত আমিনের! কুতুপালং বাজার বনিক সমিতির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিন বলেন,কিছু-কিছু রোহিঙ্গা পরিচালিত ফার্মেসীতে মিয়ানমারের অবৈধ ঔষধ বিক্রি হচ্ছে শুনেছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পূর্বেও অবগত করা হয়েছিলো। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বাজার কমিটিও ব্যবস্থা নেবে।এসব অনৈতিক ব্যবসা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
স্থানীয় ইউপির জনপ্রতিনিধিরা বলেন, রোহিঙ্গারা এ দেশের আইনকানুনের কিছুই তোয়াক্কা করছে না। যথেচ্ছভাবে চোরাচালানসহ বৈধ-অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আবুল খায়ের বলেছেন,উপজেলা প্রশাসনের সমন্ধয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হয়ে থাকে।তাতে থানা পুলিশও অভিযানে যায়।পুলিশ এ বিষয়ে অত্যান্ত সজাগ রয়েছে।অনিয়ম রোধে অভিযান পরিচালিত হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-