৪০৮ কোটি টাকায় পুলিশের জন্য ৭৯০ গাড়ি

ডেস্ক রিপোর্ট :

সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পুলিশের জন্য কেনা হচ্ছে ১৪০টি এসইউভি (জিপ) এবং ৬৫০টি ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান। মোট ৭৯০টি গাড়ি কিনতে সরকারের খরচ হবে ৪০৭ কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ সংক্রান্ত দু’টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

এছাড়া যানজট নিরসনে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের জন্য পরামর্শকও নিয়োগ দেওয়া হলো।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপজেলা স্বাস্থ্য পরিকল্পনা কর্মকর্তা গাড়ি কেনার জন্য ১৬৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৯৭টি জিপ গাড়ি কিনছে সরকার। এ প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে বুধবার (২৯ মে)।

বুধবার কমিটির আহ্বায়ক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশের বাইরে থাকায় কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাসিমা বেগম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়’ শীর্ষক প্রকল্পের আতওতায় অভিযানের কাজে ব্যবহারের জন্য ১৪০টি এসইউভি (জিপ) কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব গাড়ি সরবরাহ করবে সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি। সে হিসেবে প্রতিটি জিপের দাম পড়বে ৯০ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, কমিটি অন্য একটি ক্রয় প্রস্তাবের মাধ্যমে একই প্রকল্পের আতওতায় অভিযানের কাজে ব্যবহারের জন্য ৬৫০টি ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২৮১ কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে এসব গাড়ি সরবরাহ করবে র‌্যাংস লিমিটেড। সে হিসেবে প্রতিটি পিকআপ ভ্যানের দাম পড়বে ৪৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সীমিত জনবল, লজিস্টিকস এবং যন্ত্রপাতি নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ গত কয়েক বছরে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিটি অপারেশনে সফলতা অর্জন করেছে। এসব অপারেশন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

বাংলাদেশ মধ্যপন্থী ইসলামিক সাংস্কৃতির জন্য বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ লালনের পাশাপাশি সহনশীল এবং বহুত্ববাদ হচ্ছে বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য, যা এ অঞ্চলের জন্য একটি মডেল। সম্প্রতি কিছু আন্তর্জাতিক ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠীর কারণে বাংলাদেশের এ অর্জন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

নিরাপত্তা, সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর অর্থায়নের উৎস এবং সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর সদস্যদের অনুপ্রেরণা ইত্যাদি দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বর্তমানে সন্ত্রাসের ধরন পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ বিশেষ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সাম্প্রতিক সময়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কিছু ভয়ানক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।

আরও বলা হয়, বর্তমানে ডিএমপিতে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। প্রয়োজনীয় যানবাহন ও লজিস্টিক সাপোর্টের অভাবে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে পুলিশকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। আরমোরেড পার্সোনাল কেরিয়ারের (এপিসি) মতো সুসজ্জিত যানবাহনের অভাবে অনেক সময় সন্ত্রাস দমনে অভিযান পরিচালনা সম্ভব হয় না। তাই বিভিন্ন প্রকার যানবাহন ও যন্ত্রপাতি কেনা প্রয়োজন।

যানজট নিরসনে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এবার এ প্রকল্পের জন্য পরামর্শকও নিয়োগ দেওয়া হলো। স্পেনের টেকনিকা দক্ষিণ কোরিয়ার ডিএএইচডাব্লিএ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বাংলাদেশের দেশের ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে পরামর্শ দেবে। এজন্য সরকারের ব্যয় হবে ২৮১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাসিমা বেগম আরও বলেন, বাংলাদেশে সেতু কর্তৃপক্ষের আওতাধীন ‘ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য পরামর্শক নিয়োগের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২৮১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন দেশের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

যানজট নিরসনে আরেকটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পের মধ্যে এটি আরেকটি। জি-টু-জি ভিত্তিতে ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। নির্মাণ কাজ শেষ হলে প্রায় ৩০ জেলার সড়ক যোগাযোগ আরও সহজ হবে, বলছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত প্রায় ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলছে।

অতিরিক্ত সচিব জানান, আজকের বৈঠকে কুমিল্লা জোনের নোয়াখলী সড়ক বিভাগাধীন ‘কুমিল্লা (টমচম ব্রিজ)-নোয়াখালী (বেগমগঞ্জ) আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকণ প্রকল্পের একটি প্যাকেজের ক্রয় প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২৭২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্যাকেজটি বাস্তবয়নে কাজ পেয়েছে যৌথভাবে তাহের ব্রাদার্স, ঢাকা বিল্ডার্স এবং হাসান বিল্ডার্স।

এছাড়াও বৈঠকে ২০১৯ সালে ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে পার্বতীপুর ডিপোতে রেল ওয়াগনের মাধ্যমে ডিজেল আমাদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জকিগঞ্জ-১ কূফ খননে সংশ্লিষ্ট একটি ক্রয় প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এসময়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপজেলা স্বাস্থ্য পরিকল্পনা কর্মকর্তা গাড়ি পাচ্ছেন। তাদের জন্য ১৬৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৯৭টি জিপ গাড়ি কিনছে সরকার। প্রতিটি গাড়ির দাম ধরা হয়েছে ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আতওতাধীন বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য সিএমএসডি-এর প্যাকেজের আওতায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপজেলা স্বাস্থ্য পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের জন্য ২৯৭টি জিপ গাড়ি কেনা হবে ১৬৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকায়। যার প্রতিটি জিপের দাম পড়বে ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এসব গাড়ি সরবরাহ করবে র‌্যাংস লিমিটেড।

তিনি বলেন, এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ৩০ হাজার ২২৫টি এসপিসি পোল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যাতে ব্যয় হবে ৪৯৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

বৈঠকে অপর একটি ক্রয় প্রস্তাবের মাধ্যমে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৮১টি এসপিসি পোল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে খরচ হবে ৫৪৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

নাসিমা বেগম বলেন, আরও একটি ক্রয় প্রস্তাবের মাধ্যমে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৫৪টি এসপিসি পোল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে খরচ পড়বে ৮৩০ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

আরও খবর