রমজানের শেষ দশকের ইবাদত ও দোয়া

শুরু হয়েছে রমজানের শেষ দশক শুরু হয়েছে, তৃতীয় দশক। এ দশক নাজাতের। তৃতীয় দশকে আল্লাহতায়ালা বান্দার জন্য নাজাতের ফায়সালা করেন। তাই এ দশকে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।’ -সহিহ বোখারি: ২০১৭

অন্য হাদিসে আছে, হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন, এবং বলতেন তোমরা রমজানের শেষ দশকে শবে কদর তালাশ করো। -সহিহ বোখারি: ২০২০

একে তো মহামন্বিত মাস রমজান তার ওপর মহিমান্বিত রাতের উপহার। শেষ দশ দিনের যেকোনো একদিন লাইলাতুল কদর। যে রাত এক হাজার মাসের থেকেও উত্তম। অর্থাৎ এই এক রাতের ইবাদত এক হাজার মাসের থেকেও উত্তম।

শবে কদর লাভের প্রত্যাশায় ধর্মপ্রাণ মানুষ ইতিকাফে বসবেন। ইতিকাফে সহজে পালনযোগ্য কিছু আমল হলো- খুশু-খুজুর সঙ্গে প্রতি ওয়াক্ত নামাজ প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা। মাগরিব ও এশার নামাজের পর অতিরিক্ত ২/৪ রাকাত নফল নামাজ আদায় করা। প্রতিরাত্রে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু দান-সদকা করা। ঘুমানোর আগে অন্তত সে সব সূরা মুখস্ত আছে, তা একবার করে তেলাওয়াত করা।

দোয়া কবুলের জন্য যেকোনো সময় এ দোয়া পাঠ করা-

اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا وَسُبْحَانَ اللَّهِ بُكْرَةً وَأَصِيلاً

উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদু লিল্লাহি কাসিরা ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাও-ওয়া আসিলা।

অর্থ: আল্লাহ মহান, অতি মহান, আল্লাহতায়ালার জন্য অনেক অনেক প্রশংসা এবং সকাল-সন্ধ্যা আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। -সহিহ মুসলিম

আমাদের ইবাদতসমূহ আরও সুন্দর এবং আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য প্রতি নামাজ শেষে এই দোয়া পাঠ করা যায়-

اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبادَتِكَ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আ ইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা।

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার স্মরণ, তোমার কৃতজ্ঞতা এবং তোমার সুন্দর ইবাদত করার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করো। -সুনানে আবু দাউদ: ১/২১৩

দুই সিজদার মাঝে এ দোয়া পাঠ করা

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي، وَارْفَعْنِي

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফিরলি, ওয়ার হামনি, ওয়াহদিনি, ওয়াজ বুরনি, ওয়া আফিনি, ওয়ার-ঝুকনি, ওয়ার ফা’নি অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমায় মাফ করো, আমাকে রহম করো, আমাকে হেদায়েত দান করো, আমাকে রিজিক দাও এবং আমাকে শান্তি দান করো। -সহিহ মুসলিম: ৭৭

তাশহুদ শেষে এই দোয়া পাঠ করা

اَللَّهُـمَّ إِنيِّ أَعوُذُ بِكَ مِنْ عَذاَبِ جَهَنَّمَ،وَمِنْ عَذاَبِ الْقَبْرِ وَمِنْ فِتْـنَةِ الْمَحْياَ وَالْمَماَتِ وَمِنْ فِتْـنَةِ الْمَسيِحِ الدَّجاَّلِ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নাম ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবার ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহয়া ওয়াল মামাত ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতি মাসিহিদ দাজ্জাল। -সহিহ মুসলিম: ৯৪০

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে কবরের আজাব থেকে মুক্তি দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে জীবন মৃত্যুর কঠিন ফিতনা থেকে মুক্তি দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে মাসিহি দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্তি দান করুন।

আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) নবী করিম (সা.) কে জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি লাইলাতুল কদর লাভ করি, তাহলে কি দোয়া করবো? নবী করিম (সা.) বলেন, বলবে,

ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﺎ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।’ -আহমদ: ৬/১৮২

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল। ক্ষমা পছন্দ করো, তাই আমাকে ক্ষমা করো।

এ ছাড়া নামাজ শেষ করে ছোট ছোট কিছু ফজিলতপূর্ণ জিকির করা। যেমন- সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার, ১ বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। প্রত্যেকবার ফরজ নামাজ আদায় করে আয়তুল কুরসি পাঠ করা। 

সকালে ১০০ বার ও সন্ধ্যায় (সন্ধ্যায বলতে আসর থেকে মাগরিবের মধ্যে যেকোনো সময়ে) ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ (سُبْحَانَ اللّهِ وَ بِحَمْدِهِ) পাঠ করলে কিয়ামতের দিন নিয়মিত পাঠকারীর চেয়ে বেশি সওয়াব নিয়ে আর কেউ উপস্থিত হতে পারবে না। -সহিহ মুসলিম: ৬৫৯৯

যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ (سُبْحَانَ اللّهِ وَ بِحَمْدِهِ) প্রতিদিন ১০০ বার পাঠ করবে সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ (সগিরা) গোনাহ থাকলেও তাকে মাফ করে দেওয়া হবে। -সহিহ বোখারি: ৭/১৬৮

জান্নাত প্রার্থনা করা ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাওয়ার দোয়া করা-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকাল জান্নাতা ওয়া আউজুবিকা মিনান্নার।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জান্নাত প্রার্থনা করে, জান্নাত আল্লাহর কাছে দোয়া করে, হে আল্লাহ! তাকে জান্নাত দান করো। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, জাহান্নাম আল্লাহর কাছে দোয়া করে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও।’ -সুনানে তিরমিজি: ২৫৭২

প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ বার নিচের জিকির করা

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।

অর্থ: একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক ইলাহ নেই, তার কোনো শরিক নেই, রাজত্ব তারই, সমস্ত প্রশংসাও তার, আর তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’

আরও খবর