মোবাইলে বিয়ে করে মালয়েশিয়া যেতে মরিয়া রোহিঙ্গা নারীরা

বিশেষ প্রতিবেদক :

খতিজা বেগম (১৯)। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের ডি-৬ ক্যাম্পে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে তার পরিবার। মোবাইলের মাধ্যমে সদ্য বিয়ে হয়েছে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত আরেক রোহিঙ্গা মো. ইউসূফের সঙ্গে। তার কাছে যেতে দালালের মাধ্যমে সাগর পাড়ি দিতে ক্যাম্প ছেড়েছে খতিজা।

খতিজার মতো নুরুচ্ছাবা বেগমও ক্যাম্প ছেড়েছে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত স্বামী নয়ন উল্লাহর জন্য। তারাও মোবাইলে বিয়ে করেছে। নুরুচ্ছাবার পরিবারের অস্থায়ী বসবাস টেকনাফের মুচনির শালবন ক্যাম্পের ডি ব্লকে।

শুধু নুরুচ্ছাবা ও খতিজা নয় মোট ৪৩ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা বলে মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক উপকূলে নামিয়ে দেয় দালাল চক্র। মহেশখালী থানা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর বার্তা২৪.কমের কাছে এসব তথ্য জানান তারা।

খতিজা বেগম বলেন, ‘মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসার পর থেকে ইউসূফের সঙ্গে আমার যোগাযোগ। তারপর দুই পরিবারের মতের ভিত্তিতে সম্প্রতি মোবাইলে বিয়ে হয় আমাদের। এরপর এক বড় ভাই বলেছে আমাদেরকে সহজে মালয়েশিয়া পৌঁছে দেবে। আমার স্বামীও একই কথা বলেছে। সাগর পাড়ি দিতে হবে সেটা জানতাম না। তবে বলছে যে অল্প সাগর পাড়ি দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু দূর নেওয়ার পর একটা এলাকায় নামিয়ে দেওয়া হয় আমাদের। পরে আমরা কিছুই চিনতে পারছিলাম না। এক পর্যায়ে পুলিশ আমাদের ধরে নিয়ে আসে।’

একই কথা জানান নুরুচ্ছাবা বেগমও। তবে তার কথাগুলো একটু ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘নয়নের সঙ্গে পরিচয় বর্মা (মিয়ানমার) থাকতে। এরপর বাংলাদেশে চলে আসি আমরা। তার সঙ্গে কিছুদিন যোগাযোগ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তার সঙ্গে আবারও যোগাযোগ হয়। পরে আমরা মোবাইলে বিয়ে করি। এখন তার কাছে যাচ্ছিলাম।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, গত তিনদিনে ৯৭ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতিকালে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক থেকে ২৯ জন, কালারমারছড়া থেকে ১৪ জন, পৃথক অভিযানে টেকনাফের বাহারছড়া থেকে ২০ জন ও মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজারের দরিয়া নগর এলাকা থেকে ৩৪ জনকে আটক করা হয়। তাদেরকে পরবর্তীতে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।

এদিকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এটা খুবই শঙ্কার কথা। মালয়েশিয়া যাওয়ার বিষয়টি আরও ভয়ঙ্কর। এটি যদি চালু হয় তাহলে স্থানীয়দের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

কক্সবাজার পিপলস ফোরামের মুখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ২০১৫ সালেও মালয়েশিয়া যাওয়া শুরু করেছিল। যেটা পরবর্তীতে স্থানীয়দের মধ্যে প্রভাব পড়ে। যার ফলে অনেক বাংলাদেশি নিখোঁজ ও প্রাণ হারায়।’

দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন উপজেলা থেকে কিছু রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। অন্যান্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলে এসব রোহিঙ্গা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে পুলিশ বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখছে। চেকপোস্টে তল্লাশি আরও বাড়ানো হয়েছে।’

বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লে. কমান্ডার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা পাচার ঠেকাতে সাগরে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে কোস্টগার্ড। কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন পয়েন্টে টহল বাড়ানো হয়েছে।’

ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বৈঠকে আছেন বলে জানান। তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না বলেও জানিয়েছেন।

আরও খবর