টার্গেট খুব সহজ ছিল। শুরুটাও দারুণ হয়েছিল। তবে প্রতি ম্যাচেই টপ অর্ডারই ভালো করবে এটা ভাবা ঠিক নয়। দায়িত্ব নিতে হবে মিডল অর্ডারকেও। সেই কাজটাই দারুণভাবে সম্পন্ন করলেন মুশফিক-মিঠুন-মাহমুদউল্লাহরা। তাদের দারুণ ব্যাটিংয়ে উইন্ডিজের দেওয়া ২৪৮ রানের টার্গেট ১৬ বল এবং ৫ উইকেট হাতে রেখেই ছুঁয়ে ফেলল বাংলাদেশ। এই জয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল নিশ্চিত হয়েছে মাশরাফি বাহিনীর। ১৫ মে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি এখন কেবলই আনুষ্ঠানিকতা।
মারকাটারি সৌম্যর সঙ্গে ধীরস্থির তামিম- এমন দৃশ্যই এখন বেশি দেখা যায়। আজও তাই হয়েছিল। ৮ ওভারেই ৫৪ রানের জুটি গড়ে ফেলেছিলেন দুজন। ৯ম ওভারে অ্যাশলে নার্সের বলটি বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন তামিম। বলের লাইনে যেতে পারেননি। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে আঘাত হানে স্টাম্পে। ২৩ বলে ২১ রান করা তামিম ফেরার পর ৫৯ বলে টুর্নামেন্টে টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সৌম্য সরকার। ২০ ওভারেই একশ ছাড়ায় বাংলাদেশ। এরপরেই ছোট্ট একটা ধসে চাপে পড়ে যায় টাইগাররা।
দ্বিতীয় উইকেটে আরেকটি অর্ধশত রানের জুটির পর অ্যাশলে নার্সের বলে রোস্টন চেইজের তালুবন্দি হয়ে বিদায় নেন দারুণ খেলতে থাকা সাকিব (২৯)। আগের ম্যাচেও তিনি অপরাজিত হাফ সেঞ্চুরি করে দলকে জিতিয়েছিলেন। সাকিবের বিদায়ের পর সৌম্যও টিকতে পারেননি। নার্সের একই ওভারের পঞ্চম বলে ৬৭ বলে ৪ বাউন্ডারি ২ ওভার বাউন্ডারিতে ৫৪ রান করা সৌম্যর ক্যাচ দুই বারের চেষ্টায় তালুবন্দি করেন সুনিল অ্যামব্রিস। এরপর ইনিংস পুনর্গঠনে মনযোগ দেন মুশফিকুর রহিম আর মোহম্মদ মিঠুন।
৫৩ বলে ২ চার ২ ছক্কায় ৪৩ রান করা মিঠুন জেসন হোল্ডারের বলে বোল্ড হয়ে গেলে ভাঙে ৮৩ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি। মুশফিকের সঙ্গী হন ‘ভায়রা ভাই’ মাহমুদউল্লাহ। ৬৫ বলে ক্যারিয়ারের ৩৩তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ‘মি. ডিপেন্ডেবল’। বাংলাদেশের জয় তখন সময়ের ব্যাপার। মুশফিক হাত খুলে খেলে সেই জয়কে আরেকটু ত্বরাণ্বিত করেন। জয় থেকে মাত্র ৮ রান দূরে থাকতে কেমার রোচকে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন মুশফিক। শেষ হয় তার ৭৩ বলে ৫ চার ১ ছক্কায় ৬৩ রানের কার্যকরী ইনিংস। উইকেটে আসেন সাব্বির। এই দুজনই দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ৩০ রানে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বিপদে পড়ে ক্যারিবীয়রা। তারা ভেবেছিল, একটা বড়সড় স্কোর গড়ে ফেলবে। কিন্তু সেটা আর হলো কই? অধিনায়ক মাশরাফি প্রথম আঘাত হানলেন। দলীয় ৩৬ রানে তার বলে সুনিল অ্যামব্রিস (২৩) সৌম্য সরকারের দর্শনীয় এক ক্যাচে পরিণত হন। ১৯ রানের ব্যবধানে তিন নম্বরে নামা ডোয়াইন ব্র্যাভোকে (৬) লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আরেক ওপেনার শাই হোপকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন রোস্টন চেইজ।
কিন্তু কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ধরা পড়ে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয়েছে এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে (১৯)। এরপর আবারও মুস্তাফিজের ম্যাজিক। তার কাটারে কাটা পড়েন জনাথন কার্টার (৩)। এর মাঝেই হাফ সেঞ্চুরি করেন শাই হোপ। তাকে সঙ্গী করে ইনিংস গড়ায় মনযোগ দেন অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। এই দুজনের জুটি ১০০ স্পর্শ করতেই আঘাত হানেন মাশরাফি। টাইগার ক্যাপ্টেনের বলে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন ১০৮ বলে ৮৭ রান করা শাই হোপ।
ফিরতি ওভারে এসে জেসন হোল্ডারকেও (৬২) প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান ম্যাশ। অ্যালানকে (৭) এলবিডাব্লিউ করে নিজের প্রথম শিকার ধরেন সাকিব। এরপর জোড়া আঘাতে অ্যাশলে নার্স (১৪) এবং রেমন রেইফারকে (৭) ফেরত পাঠান মুস্তাফিজ। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৭ রান তুলতে সক্ষম হয় উইন্ডিজ। ১০ ওভার বল করে ৬০ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন ম্যাশ। আর মুস্তাফিজের বোলিং ফিগার ৯-১-৪৩-৪! ‘হাড়কিপ্টে’ সাকিব ১০ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ২৭ রান! ১ মেডেনসহ তার শিকার ১ উইকেট।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-