মঈনুল হাসান পলাশ ॥
কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কে যানবাহনের জ্যাম লাগা নিত্যকার ব্যাপার। শহরবাসী এই দূর্ভাগ্য এখন মেনে নিয়েছে।
এ সময় আশপাশের সংযুক্ত গলি-উপগলিগুলোতেও আটকা পড়ে যানবাহন। এমন অসহনীয় অবস্থা দেখে স্থির থাকতে পারেন না মোহাম্মদ তারেক আজিজ। মুখে বাঁশি লাগিয়ে নেমে পড়েন রাস্তায়। এপাশ-ওপাশ ছুটোছুটি করে রিকশা, টমটমগুলো এক কাতারে নিয়ে আসেন। এলোমেলো যানগুলোকে সারিবদ্ধ করতে জানপ্রাণ দিয়ে যুদ্ধ করতে থাকেন।
এভাবেই ২০/৩০ মিনিটে রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক করে ফেলতে সক্ষম হন ২৭ বছরের এই নিবেদিত প্রাণ যুবক তারেক আজিজ।
গলদঘর্ম হয়ে রাস্তায় ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিক করার এই দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশ তাকে দেয় নি। এই কষ্টসাধ্য দায়িত্ব পালন করায়, কেউ তাকে টাকাও দেয় না।
বিনিময়ে কি পান?
প্রশ্নের উত্তরে বললেন,মানুষের কষ্ট কমাতে পারার আনন্দ। কেউ কেউ পাগল বলে তাকে টিপ্পনী কাটে।
গত ৫ মে দুপুর ১২টায় শহরের হাসপাতাল রোডের চৌরাস্তার মোড়ে প্রচন্ড জ্যামে তারেকের হুইশেলের
তীক্ষ্ণ শব্দে সচকিত হচ্ছিলো যানবাহন চালকেরা। অসহনীয় রোদের গরমে ঘাম জবজবে শরীরে বাঁশি বাঁজাতে বাঁজাতে দৌড়ঝাঁপ করে রাস্তার জ্যাম সরাতে বিশ মিনিট সময় লাগলো তারেকের। জনসেবামূলক কাজটি সেরে ঘামে ভেজা শরীরেই কর্মস্থল বিলকিস মার্কেটের নিহাল কম্পিউটারে এলেন ডিউটি করতে।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন বলে জানালেন তারেক। সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু উচ্চতায় খাঁটো হওয়ায় সেই চেষ্টায় সফল হননি। তবে নিজের ছেলেকে সেনা বানানোর স্বপ্ন দেখেন।
আর সেনা হতে না পারার অপূর্ণতায় সেনা আদলে পোশাক পরে থাকেন তারেক আজিজ। পায়ে বুট জুতা, কোমরে ব্যাগ আর হুইশেল ঝুলানো থাকে সবসময়।
বিলকিস মার্কেটের দোতলায় নিহাল কম্পিউটারে ১৩ বছর ধরে ইনচার্জের চাকরি করেন। কোনোরকমে চলে তার সংসার। দুপুর ১২টা হতে রাত ১২টা অবধি তার ডিউটি।
তবে ট্রাফিক জ্যাম সারাতে রাস্তায় নেমে পড়লে, অনেক সময় ডিউটিতে দেরী হয়। সে কারণে নাস্তার জন্য মালিকের বরাদ্দ দেয়া পঞ্চাশ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। ৫ মেও যেমন হাসপাতাল রোডে জ্যাম ছুটাতে গিয়ে দোকানে এলেন সাড়ে ১২টায়। নাস্তার টাকা না পেয়ে অভূক্ত থাকতে হলো তাকে।
ডিউটিতে থাকা অবস্থায়ও রাস্তায় জ্যাম দেখলে হুইশেল বাজিয়ে নেমে পড়েন তারেক।
পুরো রাস্তা পর্যবেক্ষণ করেন। তারপর মাথা খাঁটিয়ে যানবাহনগুলোকে শৃংখলার মধ্যে নিয়ে আসেন। পুরো ব্যাপারটি করতে তার মিনিট বিশেক লাগে।
যখন জ্যাম খুলে যানবাহনগুলো সারি সারি চলতে শুরু করে,যখন পথচারী আর যাত্রীদের মুখে স্বস্তি দেখেন,তখন খুব খুশী লাগে তারেকের। প্রশান্তিতে মন ভরে যায়।
তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশে কাজ করার তার খুব ইচ্ছে। যদিও এখন চাকরির যোগ্যতা নেই।
শহরের পাহাড়তলীর আলহেরা একাডেমির পাশে দুই সন্তান আর স্ত্রী নিয়ে তারেক আজিজের ঠিকানা।
কম্পিউটারের কাজ জানেন,তাই ভবিষ্যতে নিজের ছোট্ট একটি কম্পিউটারের দোকান করার ইচ্ছে তার।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-