‘সাংবাদিক’ নামধারি ইয়াবা কারবারিদের নিয়ে ‘টক অব দ্য বর্ডার এরিয়া’

ডেস্ক রিপোর্ট :

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে পুলিশের ইয়াবা বিরোধী অভিযানে ‘সাংবাদিক’ নামধারি দুই কারবারি ইয়াবার চালান ও ৪ টি অবৈধ অস্ত্র নিয়ে গ্রেফতারের ঘটনাটি এখন সীমান্তের ‘টক অব দ্য বর্ডার এরিয়া’ হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সীমান্ত এলাকার সাংবাদিক নামধারী এই দুই ইয়াবা সহোদরকে গ্রেফতারের ঘটনাটি নিয়ে চলছে সরব মন্তব্যের ঝড়।
ফেসবুক আইডিধারীদের সোজা সাপ্টা দাবি হচ্ছে-ধরা পড়া মাত্রই ইয়াবা পরিবারের এসব ডনদের ‘ক্রস’ দেয়া হোক। ইয়াবা কারবারিদের প্রতি মানুষের কি রকম ক্ষোভ রয়েছে তা ফেসবুক আইডিধারিদের এ সংক্রান্ত মন্তব্য পড়লেই অনুধাবন করা যায়। সেই সাথে পুলিশের অভিযানকেও অভিনন্দিত করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল অস্ত্র ও মাদকের পৃথক আইনের ধারায় গ্রেফতার হওয়া দুই সাংবাদিক নামধারি ইয়াবা কারবারি মাহবুবল করিম ও রাশেদুল করিম কে আদালতে চালান দেওয়ার খবরেও ফেসবুক আইডিধারিরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এসব ফেসবুক আইডিধারিরা তাদের মন্তব্যে অনেকেই লিখেছেন-চুনোপুটি ধরা পড়লে সাথে সাথেই ‘ক্রসে’ যায়। আবার ডনরা ধরা পড়লে চালান হয়ে যায় আদালতে।
প্রসঙ্গত গ্রেফতার হওয়া দুই ইয়াবা সহোদর টেকনাফের শিলবুনিয়া পাড়ার বাসিন্দা ডাঃ হানিফের পুত্র এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত দেশের শীর্ষস্থানীয় ইয়াবা ডন হাজী সাইফুল করিমের ভাই। শুক্রবার রাতে পুলিশ তাদের শিলবুনিয়া পাড়াস্থ ঘরে অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার ইয়াবার চালান সহ ৪ টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে টেকনাফ থানায় অস্ত্র ও মাদকের আইনে ২ টি মামলা রুজু করে তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
পুলিশের হাতে ইয়াবা ও অস্ত্র সহ আটক দুই সহোদর মাহবুবল করিম ও রাশেদুল করিম টেকনাফ বার্তা ২৪ ডটকম এবং সিটিজি বার্তা ২৪ ডটকম নামের অখ্যাত দু’টি অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক ও প্রকাশক হিসাবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। সাংবাদিক নামধারি এই দুই সহোদর আটক হওয়ার পর জেড করিম জিয়া নামের তাদের আরো একজন সাংবাদিক পরিচয়ধারী ভাই পালিয়ে গেছেন।
এর আগে ইয়াবার আরো একটি বড় চালান নিয়ে রেজাউল করিম নামের তাদের আরো এক ভাই চট্টগ্রাম শহরে পুলিশের হাতে আটক হন। কারবারি হাজী সাইফুলের স্ত্রীর দুই ইয়াবা কারবারি ভাই আবদুর রহমান ও জিয়াউর রহমান গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০২ ইয়াবা কারবারির সাথে আতœসমর্পন করে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস এ বিষয়ে বলেন-‘ টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবা পাচারের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জিরোটলারেন্স নীতির বাস্তবায়নে কোন প্রকারের ছাড় নেই। তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তি হোন, সাংবাদিক হোন বা রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব সহ যত বড় ক্ষমতাশালীই হোন কাউকেই ছাড় দেয়া হবেনা।’ ওসি আরো বলেন, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে আতœসমর্পনকরা ১০২ জন ইয়াবা কারবারির কাছে কারবারে জড়িত আরো অনেকেরই নাম ধাম জানা গেছে। ইয়াবা কারবার বন্ধের স্বার্থে তদন্ত সাপেক্ষে এসব সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
জানা গেছে, আটক হওয়া কারবারিদ্বয় টেকনাফ সীমান্তের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি হাজী সাইফুল করিম পরিবারের সদস্য হওয়ায় নানা ভাবে দীর্ঘদিন ধরেই জড়িত ছিলেন কারবারের সাথে। হাজী সাইফুল করিম দীর্ঘ এক দশকেরও বেশী সময় ধরে টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানী-রপ্তানীর আড়ালে ইয়াবা কারবারে জড়িত ছিলেন। সারা দেশে ইয়াবা পাচার বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হলে হাজী সাইফুল করিম বর্তমানে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।
গণমাধ্যমে সীমান্তের ইয়াবা কারবার নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি শুরু হলে পরিবারটির কারবারে বিঘœ সৃষ্টি হতে শুরু করে। এরপরই হাজী সাইফুল করিম তার পরিবারের একে একে তিন ভাইকে সাংবাদিক হিসাবে পরিচিতি লাভের জন্য অনলাইন পোর্টাল সহ নানাভাবে সাংবাদিক হিসাবে কাজ করতে বিনিয়োগ করেন। এমনকি সীমান্ত এলাকায় হাজী সাইফুল সংবাদকর্মীদেরও পৃষ্টপোষকতা দেয়া শুরু করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাজী সাইফুল করিম সংবাদকর্মীদের গোপনে পৃষ্টপোষকতা দিয়ে নানা সংগটন সৃষ্টির মাধ্যমে মূলত সাংবাদিকদের ইয়াবা কারবার থেকে দৃষ্টি ফিরানোর কৌশল হিসাবে তাদেরকেই অন্তর্কোন্দলে ব্যস্ত রাখতেন। এমন কাজে হাজী সাইফুল খরচ করতেন দেদারছে।
আবার সাংবাদিক নামধারি তার ভাইদের দিয়েও সংবাদকর্মীদের নানাভাবে ব্যস্ত রাখার কৌশল নিয়ে পরিবারটির ইয়াবা কারবার নির্বিঘœ করতেন। এমনকি হাজী সাইফুল করিমের সাংবাদিক নামধারি তিন ভাইয়ের মধ্যে রাশেদুল করিম হচ্ছেন টেকনাফ সাংবাদিক ইউনিটি নামের একটি সংগটনের যুগ্ন সম্পাদক ও জেড করিম জিয়া নামের অপর এক ভাই হচ্ছেন সংগটনটির উপদেষ্টা।
এতসবের পরেও হাজী সাইফুল করিমের পরিবারের সদস্যরা টেকনাফ সীমান্তে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে একদম ভাল মানুষের বেশ নিয়ে উঠবস করে আসছিলেন। এমনকি মাত্র বছর দুয়েক আগেও তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা কারবারি হাজী সাইফুল করিম টেকনাফ থানা ভবনে প্রকাশ্যে আসা-যাওয়ার মাধ্যমে পুলিশের সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক রেখেও আসছিলেন।
২০১৭ সালে টেকনাফ থানার তদানীন্তন ওসি মাইনুদ্দিনকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করতেও সাংবাদিক ইউনিটির সদস্যদের সাথে উপস্থিত ছিলেন গ্রেফতার হওয়া সাংবাদিক নামধারী রাশেদুল করিম এবং গা ঢাকা দেওয়া সাংবাদিক জেড করিম জিয়া।
প্রসঙ্গত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন শৃংখলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা কারবারি হাজী সাইফুল করিমের বিরুদ্ধে গত ৩০ এপ্রিল দুদক আয় বহির্ভুত ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায় মামলা দায়ের করেছে

আরও খবর