প্রতাবাসনের নিশ্চয়তা নেই, নেপথ্যে এনজিও

কক্সবাজার জার্নাল :

মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের জামাই আদরে রেখেছে ক্যাম্পে মানবিক সেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন এনজিও সংস্থা। তাদের ইন্দনে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে একগাদা দাবি দাওয়া নিয়ে বসেছে। যা সরকারের কুটনৈতিক দপ্তর এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েও বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

এমনকি এসব রোহিঙ্গাদের সুবিদার্থে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় স্থানান্তরে রাজি করাতে পারছে না। এ সমস্ত কারনগুলো বিশ্লেষন করে স্থানীয় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিটির নেতারা মনে করছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কোন নিশ্চয়তা নেই।

উপরোন্ত সাম্প্রতিক সময়ে ঘুমধুমে কোনারপাড়া তুমব্রু খালের উপর মিয়ানমারের বিজিবি কর্তৃক অপরিকল্পিত ব্রীজ নির্মানের ঘটনা নিয়ে দুদেশের মধ্যে তিক্ততা বেড়ে যাওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট আরও ঘনিভূত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিভিন্ন শ্রেনি পেশার লোকজন।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মিয়ানমারের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ বৈঠক শুক্রবার ৩ মে মিয়ানমারের নেপিডোকে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঐ বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ২মে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করার বিষয়টি বিভিন্ন গনমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে গঠিত (জে.ডাব্লিও.জির) ৪র্থ বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে দ্বি-পাক্ষিক সচিব (এশিয়া প্যাসেফিক অনুবিভাগ) মাহবুবজ্জ জামান বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইতি পূর্বে দুদেশের কুটনৈত্যিক পর্যায়ে বৈঠকে সিদ্ধান্তের আলোকে ২০১৮ সালের ১৫ই নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারন করা হয়েছিল। উক্ত সিদ্ধান্তের আলোকে উভয় দেশের সীমান্ত এলাকায় যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও শেষ পর্যন্ত কোন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়নি।

বর্তমানে নেপিডোতে চলমান দুদেশের কুটনৈতিক পর্যায়ে বৈঠকের মুল সিদ্ধান্ত রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কতটুকু অগ্রগতি বা বাস্তবায়ন হয় তা নিয়ে সচেতন মহলের মাঝে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কুতুপালং রেজি: রোহিঙ্গা নেতা রশিদ আহম্মদ তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন ১৯৯১ সনে মিয়ানমার থেকে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে এ দেশে পালিয়ে আসে। সে সময় সরকার তাদের মানবিক কারনে আশ্রয় দেওয়ার পরপরই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য জোর কুটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে সফলকাম হয়।

ফলশ্রুতিতে প্রায় ২লক্ষ রোহিঙ্গা ২০০৪ সালের ১৮ই এপ্রিল হঠাৎ করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। যা আজ পর্যন্ত আলোর মূখ দেখেনি। তিনি বলেন মিয়ানমার কুট কৌশলের আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলে বিভ্রান্তকর পরিবেশ তৈরি করে শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয় কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যেহেতু তারা সরকারের বা আন্তজার্তিক বিশ্বের কোন কথাই রাখছে না।

বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা জানান তারা ছোট্ট পরিসরে জায়গায় বিশাল রোহিঙ্গার বসবাস নিয়ে নানা রকম সমস্যা সংকট নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। তারা চায় স্বদেশে ফিরে যেতে। কিন্ত কিছু কিছু এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গা মাঝিদের বিভ্রান্ত করে প্রত্যাবাসন ও ভাসানচরে স্থানান্তরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় সরকারের উদারমুখী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যে কারনে ইতি মধ্যেই প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি এনজিও সংস্থার প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারন করে বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে যেকোন সংকটের জন্য এনজিওরাই দায়ি থাকবে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্ববায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, মানবিক সেবার নামে ক্যাম্পে কর্মরত কতিপয় এনজিও কারনে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হচ্ছে। প্রত্যাবান সংকট আরও ঘনিভূত হচ্ছে দাবী করে ঐ নেতা বলেন এনজিওরা রোহিঙ্গা সমস্যা জিয়ে রাখলে তাদের লাভ। এ জন্য তারা সমাধানের পক্ষে নয়। তাই এসব এনজিওদের চিহ্নিত করে ক্যাম্প থেকে বিতারিত করতে হবে।

আরও খবর