কক্সবাজারে ৫৬ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে

আজিম নিহাদ :

কক্সবাজারে আবহাওয়ার পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত (শুক্রবার রাত সাড়ে ১০ টা) স্বাভাবিক থাকলেও যেকোন মুহুর্তে ফণী’র আঘাত হানার আশঙ্কা আছে। তাই ইতোমধ্যে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।

শুক্রবার রাত পর্যন্ত বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ৫৬ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে সরিয়ে আনা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যেকোন মুহুর্তে ঝুঁকিপূর্ণ সবাইকে সরিয়ে আনতে প্রস্তুত রয়েছে ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি উদ্ধার দল।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১০ টায় জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ঘুর্ণিঝড় ফণী’র সার্বিক বিষয় নিয়ে ব্রিফিং করেন। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কিন্তু ওখানকার মানুষ সহজেই আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চায় না। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা পুলিশের সহায়তায় জোর করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসছে। এছাড়া সাগর থেকেও জেলেদেরকে কূলে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সব মিলিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে ৫৬ হাজার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব শুরু হলেও অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আসতে চায় না। তাই শহরের আশপাশের ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১৫টি দল গঠন করা হয়েছে। এসব দলে রেডক্রিসেন্ট কর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য. রাজনৈতিক দলের কর্মী ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকরা রয়েছে। তারা সব সময় পরিবহনসহ প্রস্তুত। প্রয়োজন দেখা দিলেই এসব এলাকায় এলাকায় গিয়ে লোকজনকে প্রয়োজনে জোর করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসবে। ঠিক একইভাবে উপজেলা পর্যায়েও ইউএনও এবং এসিল্যান্ডরা লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনতে কাজ করছে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আমরা প্রস্তুত। যেকোন ভাবেই জানমালের ক্ষতি ঠেকানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক। তাই কোন রোহিঙ্গা এখনো সরানো হয়নি। শিবিরে ক্যাম্প ইনচার্জদের জন্য নির্মিত কার্যালয়, ক্যাম্পের মসজিদ ও আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজন দেখা দিলেই ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের সেখানে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হবে। ক্যাম্পে স্থানীয় প্রশাসনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও এনজিও সংস্থাগুলো সজাগ রয়েছে।

এদিকে শুক্রবার (৩এপ্রিল) রাত সাড়ে আটটায় কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া ও কুতুবদিয়াপাড়া এলাকা পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসারের নেতৃত্বে একটি দল। এই এলাকাটি সাগরের সাথে লাগোয়া। ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় এলাকাটি।

ইতোমধ্যে পানি বেড়ে যাওয়ায় সমিতিপাড়ায় নাজিরারটেক এলাকার সাথে  যোগাযোগ সাময়িক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। লোকজন নৌকা নিয়ে যাতাযাত করছে। অনেকে নাজিরারটেক এলাকা থেকে নৌকা নিয়ে সমিতিপাড়ায় এসে আশ্রয় নিচ্ছে।

নাজিরারটেক এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যা পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানি বেড়ে যাওয়ার রাস্তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আমরা নৌকা নিয়ে চলাচল করছি।

জেলা প্রশাসনের এই দলটি পুরো এলাকায় মাইকিং করে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। পরিস্থিতি খারাপ হলে প্রশাসনের ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য সচেতন করেন সবাইকে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার প্রথম আলোকে বলেন, যানবাহন ও সকল ইকুইপমেন্টসহ প্রশাসনের টিম প্রস্তুত রয়েছে। টিমগুলো সারারাত জেগে থাকবে। যখনই প্রয়োজন হবে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হবে। জনগণের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রও প্রস্তুত আছে।

সমিতিপাড়া ও কুতুবদিয়াপাড়া পরিদর্শনের সময় আরও ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, শাহজাহান আলী ও এসএম সরওয়ার কামাল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, রেডক্রিসেন্ট কক্সবাজার ইউনিটের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয় প্রমুখ।  

আরও খবর