বিশেষ প্রতিবেদক :
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের ওড়িশায় আঘাত হানার পর শুক্রবার মধ্যরাতে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়ছে। বাড়ন্ত পানির রেশ কক্সবাজারের উপকূলে দেখা দিলেও কূলে ফণীর প্রভাব নেই বললেই চলে।
শুক্রবার সকাল হতেই বিগত দিনের মতো পরিষ্কার আকাশে বৈশাখের দাবদাহ চলছে। তবে মাঝে মাঝে সাদা কিছু মেঘ সূর্যকে অল্পক্ষণ ঢেকে রেখে লুকোচুরি খেলছে।
ফণীর আঘাতে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। শুক্রবার ফণী আঘাত হানবে এমন শঙ্কায় বিকেলে শুরু হতে যাওয়া দুদিন ব্যাপী ডিসির বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা এবং ৪ এপ্রিল উখিয়া অনুষ্ঠিতব্য চাকরি মেলা স্থগিত করেছে প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৩৮টি সাইক্লোন শেল্টার। মজুদ রাখা হয়েছে ৪শ’ মে.টন জিআর চাউল, সাড়ে ৪ হাজার প্যাকেটজাত শুকনো খাবার। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৮৯টি মেডিকেল টীম ও বিভিন্ন সংস্থার প্রায় ১১ হাজার স্বেচ্ছাসেবক।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আশরাফুল আফসার জানান, উপকূলীয় লোকজনসহ কক্সবাজারে অবস্থানকারি পর্যটকদেরও নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য বলা হয়েছে। সৈকত তীরসহ শহরের জনবহুল স্থানে লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে সতর্ক সংকেত বুঝানো হয়েছে। উপকূলে মাইকিং চলমান রয়েছে। জেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গুলোকে সতর্ক রাখা হয়েছে। পাশাপাশি উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের কথা বিবেচনা করে কক্সবাজার ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনারের সাথে আলাদাভাবে সভা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় কক্সবাজার জেলায় ৪৩০টি ইউনিটের আওতায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সিপিপির) ৬ হাজার ৪৫০ জন সদস্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রস্তুত রয়েছে ১ হাজার ৭শ’ জন স্বেচ্ছাসেবী। কক্সবাজার রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আওতায় প্রস্তুত রয়েছে ১ হাজার ২শ’জন লোক। এরমধ্যে ৭শ’জনকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায়, অন্যান্যদের জেলার বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনী ওষুধ সামগ্রীসহ প্রস্তুত রয়েছে ৮৯টি মেডিকেল টিম। একই সাথে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ৬টি ইউনিটের ৩৬জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে ১৩৮জন লোক ও বিদ্যুৎ বিভাগের ৬টি টিম কাজ করবে বলে সভায় জানানো হয়েছে। পুরো জেলায় ৫৩৮টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য সাড়ে ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৪শ’ মে.টন জিআর চাউল মজুদ রাখা হয়েছে।
অপরদিকে, উপকূলে আতংক ছড়ালেও ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাব কক্সবাজার অবস্থান করা পর্যটকদের উপর পড়ছে না। মে দিবসে যেসব পর্যটক কক্সবাজার এসেছিলেন তারা কেউ হোটেল ছেড়ে চলে যাননি। বাতিল হয়নি আজকের (শুক্রবার) কোন বুকিং, এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস অফিসার্স এসোসিয়েশন’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোয়াইট অর্কিড হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) রিয়াদ ইফতেখার।
তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে বঙ্গোপসারে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র মাতামাতি চলছে। এর প্রভাবে জোয়ারের পানি উপকূলে কিছুটা আতংক ছড়ালেও বৈশাখের দাবদাহ থাকায় বালিয়াড়িতে এর রেশ পড়েনি। তাই মে দিবসকে উপলক্ষ্য করে শনিবার পর্যন্ত টানা বুকিংয়ে আসা পর্যটকদের কেউ কক্সবাজার ছাড়েননি। বরং এডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকরা শুক্রবার বিকেলে ফণি কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানবে জেনে প্রকৃতির রুদ্ররোষ দেখতে সৈকত পারে এসে থাকতে রুম বুকিং দিয়েছে।
আবার, ফণীর দুর্যোগে দুর্ভোগ রোধে জেলা সদরসহ উপজেলা ও উপকূলের প্রায় ৫৩৮ টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রয়েছে। এতে সাড়ে ৪ লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। জেলা শহরে স্কুল সমূহও শেল্টার হিসেবে ব্যবহারে প্রস্তুতরাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে উপকূলে মাইকিংসহ সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। দুর্যোগ কবলীত মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে ১০০ যানবাহন রিকুইজিশন করেছে জেলা প্রশাসন।
এছাড়াও জেলার উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও সদরে ৬টি ফায়ার ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এতে ৩৬ দমকলকর্মী কাজ করবেন। তাদের সাথে আরো সংযুক্ত করা রয়েছে আরো ২০০ কর্মী।
দুর্যোগ সংক্রান্ত সকল যোগাযোগের জন্য জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম চালু রাখা হয়েছে। ০৩৪১-৬৪৭৫০ ও ০১৮৮১৬৯৪৮১১ নাম্বারে দূর্যোগ সংক্রান্ত যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেছেন জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা ড. রইস উদ্দিন মুকুল।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-