ফারুক আহমদ, উখিয়া
উখিয়ার রাজাপালং বনবিভাগে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে চলছে ভয়াবহ পাহাড় কর্তন। প্রতিযোগিতামূলক প্রকাশ্যে ট্রাক ও ডাম্পারভর্তি করে মাটি পাচার কারণে আজ সরকারি সংরক্ষিত বনভূমির বিশাল পাহাড়গুলো এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
সচেতন মহলের অভিমত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বনবিভাগের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে পাহাড় নিধন বেড়েই চলছে। একশ্রেণির প্রভাবশালী পাহাড় খেকু সিন্ডিকেট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে পাহাড় কর্তনে জড়িত রয়েছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, উখিয়া রেঞ্জের আওতাধীন রাজাপালং বনবিটে বর্তমানে পাহাড় কর্তনের মহোৎসব নাগরিক সমাজকে ভাবিয়ে তুলেছে। দিবারাত্রি ৩০/৩৫টি ডাম্পার ও মিনি ট্রাক যোগে মাটি ভর্তি করে বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ্য সরবরাহ করা হলেও বনবিভাগ রয়েছে নিরব।
রাজাপালং বনবিট কর্মকর্তা মো: আমীর হোসন গজনবী পাহাড় কাটার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বনবিভাগ পাহাড় কর্তন বন্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ইতিমধ্যে অভিযান চালিয়ে কয়েকটি ডাম্পার ও জড়িত থাকার অপরাধে কয়েকজনকে আটক করা হয়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হরিণমারার অভ্যন্তরে ৩ কি: দূরবর্তী এলাকায় একটি সিন্ডিকেট পাহাড় কর্তন ও পাচারে জড়িত রয়েছে।
রাজাপালংয়ের হরিণমারা, আবদুল আমিনের পাহাড়, আমির আলী মৌলভীর পাহাড়, নাপিতাঘোনা, কুরাহাঁসির পাহাড়সহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০টির অধিক সরকারি সংরক্ষিত পাহাড় কর্তন করে মরুভূমিতে পরিণত করেছে। অভিযোগে প্রকাশ, একই এলাকার রেজাউল হাসান, নুর আহমদ প্রকাশ ফিটিং বদু ও গফুর উদ্দিনের নেতৃত্বে ১৫ সদস্য একটি সিন্ডিকেট গত কয়েক মাসে একের পর এক পাহাড়ের মাটি কর্তন করে পাচার করে দিয়েছে। তাদের নিজস্ব রয়েছে ডাম্পার ও মিনি ট্রাক। শতাধিক শ্রমিক নিয়ে সরকারি পাহাড় বিনা বাঁধায় কর্তন করে যাচ্ছে প্রতিদিন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইন সংরক্ষণ ১৯৯৫ সংশোধিত আইনে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই কোন পাহাড় বা টিলা কর্তন বা রুপান্তর করা যাবে না। কেউ আইন অমান্য করে পাহাড় কর্তন করলে ২ বছরের জেলসহ ২ লক্ষ টাকা জরিমানা, দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে ১০ বছরের জেল শাস্তিসহ ১০ লক্ষ টাকা জেল জরিমানা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
বন মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে রেজা, ফিটিং বদু ও গফুর সিন্ডিকেট রাজাপালং বনবিটের আওতাধীন অন্তত ২০ টি বিশাল পাহাড় অবৈধভাবে কর্তন করে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উখিয়া রেঞ্জের নবাগত রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, জায়গাটি আমার রেঞ্জের না হওয়ায় অভিযান পরিচালনা বা আইনগত বিষয়টি একটু জটিলতা রয়েছে। তাই পার্শ্ববর্তী রেঞ্জ কার্যালয়ের কর্মকর্তাকে অবহিত করার পরামর্শ দেন।
গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, রেজা, ফিটিং বদু ও গফুর সিন্ডিকেট স্থানীয় বিট কর্মকর্তাকে গাড়ি প্রতি ২ হাজার টাকা, পুলিশকে ৩ হাজার ৫ শত টাকা এবং অন্যান্যকে আরও ১ হাজার টাকা উৎকোচ দিয়ে প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে ডাম্পার ও পিকআপ ভর্তি করে মাটি বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে যাচ্ছে।
পরিবেশবাদী সংগঠনের অভিমত যে হারে একের পর এক পাহাড় কেটে মরুভুমিতে পরিণত করা হচ্ছে আগামীতে এর প্রভাব মারাত্মক বিরূপসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও বনবিভাগ যৌথ অভিযান চালিয়ে অবিলম্বে পাহাড় কাটা বন্ধসহ জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন সুশীল সমাজ।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-