আজিম নিহাদ :
উপকূলে হঠাৎ আঘাত হেনেছে প্রলংকরী ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে একের পর এক মারা পড়ছে মানুষ-পশুপাখি। মৃত মায়ের বুকে উপুড় হয়ে আছে সন্তানের নিথর দেহ। পশুপাখি ভাসছে বানের পানিতে। মৃতপ্রায় মানুষগুলো প্রাণ বাঁচাতে দিকবিদিক ছুটছে।
ভয়ংকর এই দৃশ্যটি বাস্তব নয়। এটি ১৯৯১ সালের ভয়াল ২৯ এপ্রিলের প্রলংকরী ঘূর্ণিঝড়ের দৃশ্য। দিনটি স্মরণে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বালি ভাস্কর্যের মাধ্যমে একদল শিল্পী সেইদিনের ভয়াবহতার দৃশ্যটি তুলে ধরেছেন।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপকূলে আঘাত হানে প্রলংকরী ঘূর্ণিঝড়। ঘুর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম উপকূলে। লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল সবকিছু।
সেই ভয়াবহ স্মৃতি বালি ভাস্কর্যের মাধ্যমে তুলে ধরতে প্রথমবাবের এই আয়োজনটি করেছে কক্সবাজার আর্টক্লাব। প্রদর্শনীতে প্রায় ৩০টি বালির ভাস্কর্য তৈরী করা হয়। এসব ভাস্কর্য তৈরী করেন কক্সবাজারের বিভিন্ন উপকূলীয় উপজেলার প্রায় ১০০ জন শিল্পী। যাদের অনেকেই সেইদিনের ভয়াবহতার প্রত্যক্ষদর্শী।
পেকুয়ার শিল্পী আমিরুল ইসলাম ৯১’র ঘূর্ণিঝড়ের একজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভুক্তভোগি। নিজের দেখা স্মৃতি থেকে তিনিও তৈরী করেছেন ভাস্কর্য। তিনি বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ। এর মাধ্যমে কক্সবাজারের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বশিক্ষিত শিল্পীরা নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছেন।
কক্সবাজার আর্টক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানভীর সরওয়ার রানা বলেন, উপকূলীয় এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিল্পীরা স্বচক্ষে ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে যা দেখেছেন, সেই দৃশ্যই বালি ভাস্কর্যের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। আর বালি ভাস্কর্যের মাধ্যমে দেশ-বিদেশ থেকে আগত পর্যটকরা ভয়াল ২৯ এপ্রিলের ভয়াবহতা অনুভব করতে পারছে। শুধু তাই নয়, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত সম্পর্কে সচেতন হতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, প্রথমবারের মত এই আয়োজন করা হয়েছে। এখন থেকে প্রতিবছর আয়োজনটি করা হবে। যাতে ভয়াল ২৯ এপ্রিল সবাই স্মরণ করে।
দেশে ও দেশের বাইরে চিত্রকর্মের কারণে বেশ সুনাম রয়েছে চট্টগ্রামের উপজাতীয় শিল্পী জয়দেব রোয়াজার।
তিনিও এসেছেন ভয়াল ২৯ এপ্রিল স্মরণে বালি ভাস্কর্য তৈরী কর্মসূচিতে। তিনি বলেন, যেকোন কারণে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ভয়াবহতা সরাসরি দেখার সুযোগ হয়নি তার। কিন্তু বালি ভাস্কর্যের মাধ্যমে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার শিল্পীরা যেভাবে সেইদিনের ভয়াবহতার দৃশ্য তুলে ধরেছেন মনে হচ্ছে যেন সরাসরি সেই প্রলঙ্ককরী ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি সরাসরি প্রত্যক্ষ করছি।
গতকাল সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টে এই বালি ভাস্কর্য কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল ৫টার দিকে বালি ভাস্কর্য পরিদর্শন করেন রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহেনা আক্তার পাখি প্রমুখ। বালি ভাস্কর্যের পাশাপাশি সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ভয়াল ২৯ এপ্রিলের চিত্র প্রদর্শন করেন কক্সবাজার পরিকল্পিত আন্দোলন নামে একটি সংগঠন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-