উখিয়ায় পানের দাম কমে যাওয়ায় চাষিরা হতাশ

শফিক আজাদ, উখিয়া :

উখিয়ার হাট-বাজারে পানের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও গত ৬ মাস যাবত পানের চালান সরবরাহ করে লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ নিয়ে স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীরা উত্তর বঙ্গের পান আসার কারণে এ মূল্য হৃাসের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন।

স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, উত্তরাঞ্চলের পাইকারি আড়তে পানের দর কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে স্থানীয় হাট-বাজারে। এতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্জিত অর্থকরী ফসল পান বাজারজাত করে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এমন অভিযোগ করে স্থানীয় পান ব্যবসায়ী মনু মিয়া জানান, যে পান সচরাচর বিড়াপ্রতি ১৫০/২০০ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা সে পান বিক্রি হচ্ছে ৫০/৬০ টাকা দরে।

গয়ালমারা গ্রামের ছব্বির আহমদ জানান, পাশ^বর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার দৈনন্দিন চাহিদার একমাত্র পণ্য হচ্ছে পান, কিন্তু উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে একটি সিন্ডিকেট কম দামে উত্তরবঙ্গের পান এনে সরবরাহ দেওয়ার কারনে দেশীয় তৈরী উৎপাদিত পানের দাম হৃাস পেয়েছে। সে বলেন, গত ৫ বছর ধরে পানের বরজ দিয়ে উৎপাদিত পান বাজারজাত করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে উঠেছিলেন। চলতি বছরে গত ৬মাসে পানের বাজার দর না থাকায় পানের বরজে বিনিয়োগকৃত অর্থ উঠিয়ে নেয়াতো দূরের কথা, পান ভেঙে উক্ত পান বাজারজাতকরণের উপযোগী করে শ্রমের যে মজুরি ব্যয় হয় পান বিক্রি করে তা-ও পাওয়া যায় না। সে আরো জানান, এখন আর পান বিক্রি না করে সমূলে পানের চারাসহ বিক্রি করে দেয়ার মনস্থ করেছেন।
প্্ূর্বডিগলিয়াপালং গ্রামের কৃষক ছৈয়দ নুর প্রকাশ নুরু মিয়া জানান, তার নিজস্ব কোনো জমি জমা না থাকায় বর্গা জমিতে ৪০শতক জায়গার ওপর দুটি পানের বরজ করে সংসার চালিয়ে আসছিলেন দীর্ঘদিন থেকে। পানের বরজ খাতে ইতোমধ্যে তিনি দুই ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়াচ্ছেন।

হঠাৎ করে পানের দাম আশাতীতভাবে কমে যাওয়ার ফলে চলতি বছরে তার প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, চলমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ভবিষ্যতে পান উৎপাদন থেকে বিরত থাকবেন। এভাবে অনেকেই হতাশ কণ্ঠে বলেন, পানের বরজ যারাই করেছেন তারাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

কোটবাজারের পান ব্যবসায়ী সেলিম উদ্দিন জানান, কোটবাজার, সোনারপাড়া, উখিয়া, মরিচ্যা এ চার বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহে কোটি টাকার পান চট্টগ্রামের বিভিন্ন আড়তে চালান হয়ে থাকে। এ ব্যবসায় জড়িত প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ী উপর্যুপরি ৬মাস পান ব্যবসায় লোকসান দিয়ে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যদি পানের দর না উঠে তাহলে পানের চালান সরবরাহ করা থেকে তারা বিরত থাকার কথাও বললেন। তবে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, বৃষ্টি নামলেই পানের দর বাড়তে পারে। পাশাপাশি পানের বরজেও পান উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে চাষিরা ও ব্যবসায়ীরা আবারো লাভের মুখ দেখার আশা করছেন।

উখিয়া উপ-সহকারি কৃষি অফিসার মোঃ শাহজাহান জানান, এ উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৫০০ হেক্টর জমিতে পান উৎপাদন হয়ে থাকে। পান উৎপাদন করে জীবন ধারণ করে আসছে প্রায় ৫ হাজারেরও অধিক পরিবার।

তিনি জানান, বাজারে পানের দাম উঠা-নামা করলেও কৃষকদের তেমন ক্ষতি হবে না। যেহেতু বছরের অধিকাংশ সময় হাট-বাজারে পানের দাম বৃদ্ধি থাকে। তাই মাঝে মধ্যে পানের দাম কমলেও কৃষকদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

আরও খবর