মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
নিজ কর্মস্থলের জেলা কক্সবাজার। সে কক্সবাজার জেলারও সেরা ওসি হয়েছেন-ইয়াবাবাজ, হুন্ডিবাজদের সাক্ষাত ‘আজরাইল’ হিসাবে খ্যাতি পাওয়া ইয়াবানগরী টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বিপিএম-বার।
বুধবার ২৪ এপ্রিল কক্সবাজার পুলিশ লাইনে অনুষ্ঠিত জেলা পুলিশের অপরাধ পর্যালোচনা বিষয়ক মাসিক কল্যাণ সভায় কক্সবাজারের স্বনামধন্য পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম জেলার সেরা ওসি’র সম্মাননা ওসি প্রদীপ কুমার দাশের হাতে তুলে দেন। এনিয়ে পন্ঞ্চমবারের মতো জেলার সেরা ওসি’র সম্মাননা পেলেন প্রদীপ কুমার দাশ বিপিএম-বার।
এসময় কল্যান সভায় অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) আদিবুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) নিহাদ আদনান তাহিয়ান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজী মতিউল হক, সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) সাইফুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার মহেশখালী (সার্কেল) রতন কুমার দাশ গুপ্ত, সহকারী পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) বাবুল চন্দ্র বণিক, জেলার সকল ওসি সহ জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের চট্রগ্রাম রেঞ্জেও চতুর্থবারের মতো শ্রেষ্ঠ ওসি’র সম্মাননা পেয়েছেন টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ (বিপিএম-বার) গত ১৮ এপ্রিল।
থানা পর্যায়ে সর্বোচ্চ মাদক উদ্ধার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, ওয়ারেন্ট তামিল, মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার, ইয়াবাবাজদের আত্মসমর্পণে উদ্বুদ্ধকরণ ও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সাফল্যজনক ভূমিকা রাখায় টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বিপিএম-বার কে সেরা ওসি’র এই সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর টেকনাফ মডেল থানায় যোগদান করেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বিপিএম-বার। তিনি যোগদানে পর টেকনাফকে মাদকমুক্ত করবেন বলে জোরালোভাবে ঘোষনা দিয়েছিলেন। তাঁর যেমন হুংকার তেমন কাজ। তাঁর ৭ মাসের দায়িত্বপালনকালীন সময়ে বিপুল পরিমান ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এমনকি ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ইয়াবা বিরোধী জোরালো ভূমিকার কারণে ইয়াবাবাজ ও হুন্ডিবাজদের কাছে তিনি একজন সাক্ষাত ‘আজরাইল’ হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন।
টেকনাফ মডেল থানায় যোগ দেয়ার পূর্বে তিনি কক্সবাজার জেলার মহেশখালী থানা, উখিয়া থানা, কক্সবাজার সদর মডেল থানা, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানা, পাঁচলাইশ থানা ও বায়েজিদ বোস্তামি থানায় কর্মরত ছিলেন।
১৯৯৬ সালে চাকুরীতে যোগদান করা এই পুলিশ কর্মকর্তা চাকুরীজীবনে সাহসিকতায় বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দুইবার পুলিশ বিভাগের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পুরস্কার বিপিএম পদক পেয়েছেন। জাতীয় পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে তিনি ওই সম্মানজনক রাষ্ট্রীয় পুরস্কার গ্রহন করে কক্সবাজার জেলা পুলিশকে গৌরবান্বিত করেন। তিনি আইজিপি ব্যাচ পেয়েছেন দুই বার। পেয়েছেন জাতীয় শান্তি রক্ষা পদকও।
এছাড়াও ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বিপিএম-বার উখিয়া থানায় কর্মরত থাকাকালে কমিউনিটি পুলিশিং সক্রিয় করার জন্য তৎকালীন আইজিপি নুর মোহাম্মদের কাছ থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন। পেশাদারিত্বে অনন্য, কর্তব্যপালনে দৃঢ়চেতা, অপরাধ দমনে আপোষহীন, অভিযানে নির্ভীক, জানবাজ ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ইয়াবানগরী টেকনাফ মডেল থানায় আসার পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০২ জন ইয়াবাবাজ, হুন্ডিবাজ ও বিকাশবাজ আত্মসমর্পণ করেছে। এই আত্মসমর্পণ ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম মাদকবাজদের প্রকাশ্যে সফল আত্মসমর্পণ। একইভাবে অকুতোভয় এই অদম্য ওসি’র প্রাণান্ত প্রচেষ্টায় আগামী মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে আরো দু’শতাধিক ইয়াবাবাজ, হুন্ডিবাজ ও বিকাশবাজ আত্মসমর্পনের জন্য সাড়া দিয়েছে বিশ্বস্ত সুত্র নিশ্চিত করেছে। অপরাধীদের দমনে অপ্রতিরোধ্য এই পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলায়।
জেলা পুলিশের শ্রেষ্ঠ ওসি’র সম্মাননা পাওয়ার পর টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বিপিএম-বার তাঁর প্রতিক্রিয়ায় সিবিএন-কে বলেন, এই সম্মাননা পাওয়াতে তিনি কক্সবাজারের স্বনামধন্য পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, উখিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিহাদ আদনান তাহিয়ান সহ উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ধন্যবাদ জানিয়েছেন-টেকনাফ পুলিশের সকল কর্মকর্তা ও সদস্যদের। যাঁদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ধারাবাহিক অর্জন সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন-এ অর্জনের কৃতিত্ব শুধু আমার একার নয়, টেকনাফ পুলিশের সকল সদস্য এই অর্জনের গর্বিত অংশীদার।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-