আজিম নিহাদ :
সারা বছর গ্যাসের দাম নিয়ে নয়ছয় করে ব্যবসায়ীরা। সিন্ডিকেটে জিম্মি করে সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়াও একেক স্থানে একেক দামে গ্যাস বিক্রি হলেও প্রশাসনের তেমন কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এরফলে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয় সাধারণ ভোক্তারা।
কিন্তু পবিত্র রমজান মাসে একই মূল্যে সব জায়গায় গ্যাস বিক্রি করার জন্য মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। নির্ধারিত মূল্য তদারকি করার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে। কোন ব্যবসায়ী নির্ধারিত মূল্য না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রমজান মাসের জন্য গ্যাসের বিক্রির মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আসন্ন রমজান মাসে সরকারী এলপি গ্যাস বিক্রি হবে ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০০ টাকা। এরমধ্যে বহন খরচও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বেসরকারী কোম্পানীর গ্যাসগুলো বিভিন্ন দামে বিক্রি হলেও সেগুলো রমজানে মাসে এলপিজি’র জন্য নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে হবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, কক্সবাজারে এলপিজির গ্রাহক রয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার। কিন্তু সরবরাহ হয় মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার সিলিন্ডার। বিশাল ঘাটতি মেটাতে বেসরকারী গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু সরকারী গ্যাসের চেয়ে বেসরকারী গ্যাসের দাম বেশি। কক্সবাজারে ২১ টি বেসরকারী কোম্পানী গ্যাস সরবরাহ করে।
প্রশাসন বলছে, এলপিজির বর্তমান নির্ধারিত দর ৯৫০ টাকা। কিন্তু বহন খরচ ও অন্যান্য খরচের কারণে কক্সবাজারে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি টাকায় বিক্রি হয়। তাছাড়া বেসরকারী গ্যাসের দামও এলপিজির চেয়ে বেশি। তাই সবকিছু বিবেচনা করে এলপিজি ও বেসরকারী গ্যাসের জন্য একই দর নির্ধারণ করা হয়েছে। রমজানে এলপিজি ও বেসরকারী গ্যাস বিক্রি হবে প্রতি সিলিন্ডার ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়।
জেলা জাসদের সভাপতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য নইমুল হক চৌধুরী টুটুল বলেন, কক্সবাজারে এমনিতেই সরকারের নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি টাকায় গ্যাস বিক্রি করা হয়। তার উপর রমজান মাস আসলে আরও বেড়ে যায়। সংঘবদ্ধভাবে সরবরাহ ঘাটতি সহ নানা অজুহাত তুলে অতিরিক্ত দাম হাতিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু এটা মোটেও ঠিক নয়। অন্তত রমজান মাসে হলেও জেলা প্রশাসন তথা দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ কমিটি যে দর নির্ধারণ করে দিয়েছে ব্যবসায়ীদের সেটা মানা উচিত।
সাধারণ ভোক্তাদের অভিযোগ, এলপি গ্যাসে ব্যবসায়ীরা চরম কারচুপি করে। সিলিন্ডার থেকে গ্যাস চুরি করে খালি সিলিন্ডার ভর্তি করা হয়। এরফলে চরমভাবে ঠকে ভোক্তারা। ভোক্তাদের সাথে ব্যবসায়ীদের প্রতারণা বন্ধে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা দরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারীভাবে এলপি গ্যাসের ওজন ১২ কেজি ৫০০ গ্রাম। কিন্তু অনেক সময় ১০ কেজিরও কম পাওয়া যায়। শতকরা ৯৯ শতাংশ ভোক্তা ব্যবসায়ীদের এই সুক্ষ্ম কারচুপির বিষয়ে অবগত নন। জানার চেষ্টাও করে না। কিন্তু এখন এই কারচুপি বন্ধে ডিজিটাল মেশিনের মাধ্যমে ওজন মেপে বিক্রি বাধ্যতামূলক করার দাবী তুলছে ভোক্তারা।
গ্যাস পরিবেশক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এলপিজি ও বেসরকারী গ্যাস ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রির যে দর নির্ধারণ করা হয়েছে এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখিন হবে। তারপরও এভারেজ হিসেবে দর নির্ধারণ হওয়ায় আমরা রমজানে প্রশাসনের নির্ধারিত দরে বিক্রি করতে প্রস্তুত।’
ওজন কারচুপির বিষয়ে তিনি বলেন, ওজন কারচুপির বিষয়ে তিনি অবগত নন। কোন ব্যবসায়ী এই অসাধু উপায় অবলম্বন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনিও দাবী জানান।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার বলেন, রমজানে ১২ থেকে ১২ কেজি ৫০০ গ্রাম ওজনের সব গ্যাস বিক্রি করতে হবে ১০৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকায়। কোন ব্যবসায়ী এরচেয়ে বেশি আদায় করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দর পর্যবেক্ষণের জন্য পুরো রমজান মাস জুড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের টীম মাঠে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, এলপিজিতে ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওজন সঠিকভাবে আছে কি না সেটি পরিমাণ করার ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদেরও নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-