বার্তা২৪
ভাই, কমিটি কবে দেবে? কমিটি কি আদৌ হবে?’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে কিংবা ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) যেখানেই ছাত্রলীগের নেতারা যান সেখানেই তাদের এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি সাংবাদিকদের দেখলেও কমিটির খোঁজ আগে নেন পদপ্রত্যাশী কর্মীরা। অথচ ছাত্রলীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে কোনো ‘প্রস্তুতি’ বা আন্তরিক ‘তৎপরতা’ নেই।
ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার প্রক্রিয়াকে বিভিন্ন অজুহাতে বারবার পিছিয়েছেন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তবে চলতি সপ্তাহে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জোরালো তাগিদের পর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে কিছুটা সক্রিয় হয়েছেন ছাত্রলীগের এই শীর্ষ দুই নেতা।
তবে দলীয় প্রধানের নির্দেশনা ও প্রত্যাশামতো তারা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারবে কি-না, সেটা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেননা গত নয় মাসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই শীর্ষ নেতার মতবিরোধ চরমে উঠেছে। যার সর্বশেষ বহিঃপ্রকাশ হয় ঢাবিতে বৈশাখী উৎসব পালন নিয়ে।
এবারের তৎপরতাকেই রমজানের আগে কমিটি পূর্ণাঙ্গের শেষ সুযোগ হিসেবে দেখছেন নেতাকর্মীরা। অন্যথায় ছাত্রলীগের নতুন সম্মেলনের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্বের হাতে সংগঠন পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইবেন তারা।
ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বর্তমান দুই নেতার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতে গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় নয় নেতার সঙ্গে বৈঠকের এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি ভেঙে দেওয়ার পক্ষেও মত দিয়েছেন তিনি। সেখানে উপস্থিত দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি ভেঙে নতুন করে কমিটি গঠন করো। যারা সংগঠনের বদনাম করে, দল ও সরকারের অর্জনকে ম্লান করে, তাদের সংগঠনে দরকার নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে সব তথ্য আছে। হয় কমিটি ভেঙে দাও, অন্যথায় দায়িত্ব নিয়ে সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বৈঠক করে আগামী সাত দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করো।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় যারা জড়িত তারা যেন ছাত্রলীগের কমিটিতে আসতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। যারা সংগঠনের বদনাম করবে, শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হবে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। দলীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যবস্থা আমি নেব।
সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বেশ ক্ষুব্ধ ছিলেন। পরে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে সমন্বয়ের জন্য দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে দায়িত্ব দেন তিনি। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশ দেন।
দলীয় সভাপতির জোরালো নির্দেশনা পেয়ে ইতোমধ্যে সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বৈঠকে তারা সোহাগ-জাকিরের কাছে কমিটি পূর্ণাঙ্গের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চান। বর্তমানদের সহযোগিতাও কামনা করেন তারা।
ওই বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আমরা বসেছিলাম। তাদেরকে ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গের ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিত করেছি। সেই সঙ্গে কমিটি পূর্ণাঙ্গে বর্তমান কমিটিকে শতভাগ সহযোগিতা আমরা করব বলে জানিয়েছি। নেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে আমাদের সহযোগিতা সব সময় অব্যাহত থাকবে।
এদিকে ছাত্রলীগের কমটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ার পেছনে বর্তমান দুই নেতার উদাসীনতা ও অপ্রস্তুতিকে দায়ী করছেন নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আদৌ কমিটি হবে কি-না, সেটা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে বলে জানান তারা।
সূত্র জানিয়েছে, সভাপতি শোভন, সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী কেবল নিজেদের অনুসারী লোকদের একটা তালিকা করে নিজেদের কাছে নিয়ে ঘুরছেন। অথচ পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কে কোন পদ পাবে, একাডেমিক সেশন অনুসারে সিনিয়র-জুনিয়রদের অবস্থান কীভাবে হবে, পদপ্রত্যাশীদের যাচাই-বাছাইসহ অনেক কিছুই এখনও বাকি আছে।
আর এসব বিষয় সমন্বয়ের জন্য শোভন-রাব্বানী কয়েকবার বসলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ নিয়ে আলোচনা কখনোই আলোচনা এগোয়নি। প্রধানমন্ত্রীর চাপে কমিটি পূর্ণাঙ্গে একসাথে বসলেও মতৈক্য ছাড়াই শেষ হয়েছে সেসব বৈঠক।
কমিটি গঠনে দুই নেতার দ্বন্দ্বের শুরুটা হয় পদের ভাগাভাগি নিয়ে। পহেলা বৈশাখে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় জড়িতদের কমিটি থেকে বাদ দিতে চান রাব্বানী। কিন্তু তদন্ত ছাড়াই ঢালাও অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে বঞ্চিত করতে নারাজ শোভন। এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপির চাপ, আঞ্চলিক নেতাদের চাপের কারণে কমিটির কাঠামো তৈরিতেই ব্যর্থ হন তারা।
কমিটি গঠন নিয়ে জানার জন্য বুধবার (১৭ এপ্রিল) শোভন-রাব্বানীকে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা সাড়া দেননি। অবশ্য সেদিন শোভন অসুস্থ থাকায় সন্ধ্যায় চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে গিয়েছিলেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন।
তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শোভন-রাব্বানী এবার কমিটি গঠনে ব্যর্থ হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় অধিবেশনের পর কমিটি ঘোষণার নিয়ম থাকলেও শীর্ষ পদের নেতৃত্ব বাছাইয়ে সময় নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বছর ৩১ জুলাই শেখ হাসিনার ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে মো. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছরের জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-