কক্সবাজার সদর হাসপাতালে কর্মবিরতি

কক্সবাজারের অগ্নিদগ্ধ সেই ‘সুমাইয়া’ কে বাঁচানো গেলোনা

মুহিবুল্লাহ মুহিব :

চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা কক্সবাজার সদর হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলেন মা। অনেক অজুহাত দেখানোর পর অবশেষে প্রাথমিক চিকিৎসা। এসব নির্মমতাকে সঙ্গে নিয়ে টানা পাঁচ দিন মৃত্যু’র সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হেরে গেলেন দগ্ধ শিশু সেই সুমাইয়া আক্তার (৪)।

জানা যায়, গত ৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সকালে রান্না বসিয়ে মা সেতারা বেগম গিয়েছিলেন টয়লেটে। সেখান থেকে ফিরে দেখেন চুলার আগুনে জ¦লছে শিশু কন্যা সুমাইয়া। তাৎক্ষণিক ভাবে কোলে নিয়েই ছুটে ছিলেন চিকিৎসকদের কাছে। কিন্তু তাদের নির্মমতার শিকার হতে হলো তাকে। এ নিমর্মতাএমন ছিল যে এক দিকে তাদের কর্মবিরতির আচরণ আর অন্যদিকে মেয়ে সুমাইয়ার যন্ত্রণার চিত্র। কর্মবিরতির অজুহাতে প্রায় ৫ ঘন্টা জরুরী বিভাগের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকার পর ওই দিন দুপুর দুইটার দিকে অবশেষে প্রাথমিক চিকিৎসা। অগ্নিদগ্ধ রোগীর তেমন চিকিৎসা না থাকলেও নিজেদের অবহেলা আড়াল করতে চিকিৎসকরা ভর্তি দেয় শিশুটিকে। তাৎক্ষণিকভাবে যদিও অবস্থা বুঝে ভর্তি নয় রেফার করার কথা ছিল। কিন্তু চিকিৎসকরা তা না করে মঙ্গলবার রাতে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে রেফার করেন। কিন্তু ততক্ষণে তো সুমাইয়ারঅবস্থা আর ও জটিল হয়ে যায়। চমেকে টানা ৫ দিন মৃত্যু’র সাথে পাঞ্জা লড়ে গত শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে মারা যায় সুমাইয়া।

এদিকে সুমাইয়াকে ভর্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে। সাধারন মানুষের কাছে চিকিৎসকদের অপরাধ ঢাকতে সুমাইয়ার মায়ের ভিডিও বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। মুহুর্তের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। এখন অভিযোগ উঠেছে নিজেদের নির্মমতার আড়াল করতে এক শ্রেণীর চিকিৎসকরা তাকেভর্তি দিয়ে ভিডিও চিত্র ধারণ করেছে। ভিডিও রেকর্ড শেষ করার পর রাতে তাকে পাঠানো হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেলে।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের পুর্ব লারপাড়া এলাকায় নিহত সুমাইয়ার বাড়িতে যায় এ প্রতিবেদক। প্রতিবেদককে দেখেই কান্নাই ভেঙে পড়েন সুমাইয়ার মা সেতেরা বেগম।
কান্নাজড়িত কন্ঠে সুমাইয়ার মা সেতেরা বেগম বলেন, যদি আমার মেয়েকে দ্রুতচিকিৎসা দেয়া হতো তাহলে আজ তাকে হারাতে হতোনা। কিন্তু দু:খের বিষয় যে নির্মম আচরণ করেছে আমার সাথে আমি বুঝতে পারিনি। টাকা নেই কিন্তু বলতে পারতো যে নিয়ে যান। তাহলে তো যেভাবেই হোক নিয়ে তো যেতাম। কিন্তু ভর্তি দিয়ে উল্টো ভিডিও ধারণ করে তারা।

সেতেরা বেগম আরও বলেন, চট্টগ্রাম নেয়ার কথা বলেছে রাতে। তখন তো আমার কাছে টাকা ছিলনা। কিন্তু একজন চিকিৎসক ও আমার মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে চট্টগ্রাম যায়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে। যদি তাকে আরও আগে নিতে পারতাম তাহলে হয়তো আমার মেয়ে বেঁচে থাকতো।

উল্লেখ্য যে, গত ৪ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে আনোয়ার হোসেন নামে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভাংচুর ও চিকিৎসকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এঘটনার জের টানা কয়েক দিন ধর্মঘট পালন করে ইন্টার্নী চিকিৎসকও সদর হাসপাতালের স্টাফরা। এতে অচল হয়ে যায় চিকিৎসা সেবা। কিন্তু প্রশাসনের মধ্যস্ততায় সে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে তারা। প্রত্যাহারেরএকদিন পর আবারো চিকিৎসকদের উপর হামলার অভিযোগে একজনকে তিনদিনের জেল দেয় ভ্রাম্যমান আদালত। তারপর দিন আবারো হামলার অভিযোগে ম্যাক্স নামে একজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর তাকে কারাগারে পাঠানোহয়। এ ধর্মঘট বা অস্থিরতার সময় চিকিৎসা নিতেআসে দগ্ধ সুমাইয়া। কিন্তু অন্য রোগীদের মত সুমাইয়াকেও না দেখার ভান করে চলে যায় চিকিৎসকরা। ধর্মঘট চলাকালীন সময়ে জরুরী বিভাগ চালু থাকারকথা থাকলেও সেদিন তাও বন্ধ রাখে চিকিৎসকরা।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্বাবধায়ক ডা. বিধানপাল এ সময় তাৎক্ষণিকভাবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় বিঘ্ন ঘটেছে। গণমাধ্যমকর্মীদেরকাছ থেকে শুনার পর আগুনে পুড়ে যাওয়া সুমাইয়াকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এখন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা আবারও স্বাভাবিক হয়েছে।

আরও খবর