ডেস্ক রিপোর্ট – ‘গ্যাং লিডার’ ও ‘বড় ভাই’ কালচারের খারাপ ফল হিসেবে প্রতিনিয়ত ঘটছে মারামারি ও খুন-খারাবি। নগরীর পাড়া-মহল্লা ও অলিগলিতে এসব বড় ভাইয়ের দাপট। রাজনৈতিক নেতার ছায়ায় থেকে তারা এক প্রকার বেপরোয়া। বাকলিয়া থানা এলাকায় কথিত ‘বড় ভাই’ মোহাম্মদ সাইফুলের বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে নগরীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শতাধিক ‘বড় ভাই’। আতঙ্কে অধিকাংশ গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা। এ ধরনের ‘বড় ভাই’ প্রবণ বাকলিয়ার ডিসি রোড, দেওয়ান বাজার, খালপাড়, বগারবিল, রসুলবাগ, রাহাত্তারপুল, কালামিয়া বাজার ও রাজাখালির মতো এলাকা সাইফুলের মৃত্যুর ঘটনায় শুনশান। প্রভাব রয়েছে নগরীর অন্য খানেও।
পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে গত ৯ এপ্রিল কল্পলোক আবাসিক এলাকায় মারা যাওয়া যুবলীগের কর্মী মোহাম্মদ সাইফুল বাকলিয়া থানার খালপাড় এলাকার বাসিন্দা। তিন দিন আগে এ এলাকায় মোহাম্মদ লোকমান হোসেনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন সাইফুল। লোকমান বড় ভাই কালচারের বলী।
এদিকে, সাইফুলের মৃত্যুতে একই গ্রুপের অন্য বড় ভাইদের মধ্যেও আতঙ্ক ভর করেছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলাকার কথিত বড় ভাইয়েরা নিজেদের বেপরোয়া চলাচল অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করেছে। নগরীতে রেপরোয়া ‘বড় ভাই’ কালচারে সাইফুল ‘মেসেজ’ ভয় ধরাতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন সিএমপির সহকারী কমিশনার কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। এদিকে, এসব বড় ভাইয়ের কর্মকাণ্ডে তাদের দাপটের সীমারেখা টানা কঠিন। শহরময় তাদের দাপট। স্ব স্ব এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখাটাই তাদের প্রধান কাজ। এ রকম কমপক্ষে শতাধিক দাপুটে গ্রুপ নগরের অলিগলি, পাড়া-মহল্লা নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের মাথার উপর রয়েছে রাজনৈতিক বড় ভাইদের হাত। যেখানে তারা গড়ে তুলেছেন সন্ত্রাসের সাম্রাজ্য। এ সাম্রাজ্যে কেউ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেই তাকে মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দেওয়া হয়। রাজনৈতিক দলকেন্দ্রিক এসব গ্রুপ অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রেমঘটিত ব্যাপার নিয়েও মারামারি ও খুনখারাবিতে জড়ায়। এর সর্বশেষ প্রমাণ সাইফুল।
নগরীতে ঘটে যাওয়া কয়েকটি হত্যার ঘটনায় বড় ভাইয়েরর নাম সামনে এসেছে। যারা বিভিন্ন সময় নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থেকে আলোচনায় এসেছে। এসব ঘটনার পর প্রভাবশালী বড় ভাইয়েরা আত্মগোপনে গেলেও কর্মকাণ্ড থামে না। পরিস্থিতি সামলে গেলে আবারও নানা এলাকায় সক্রিয় হয়ে ওঠে তারা।
২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত দাশ এ ধরনের বড় ভাই কালচারের বলী হন। এ হত্যাকাণ্ডে লালখান বাজার এলাকার আওয়ামী লীগের ‘বড় ভাই’-এর নাম উঠে আসে। আলোচিত এ মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, মামলাটির তদন্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
সিআরবির ডাবল খুনের ঘটনার পর থেকে আলোচনায় আছেন যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ও ছাত্রলীগ নেতা (বহিষ্কৃত) সাইফুল আলম লিমন। তারা দুজনই আলাদা গ্রুপ নিয়ে আধিপত্য ধরে রেখেছেন। কদমতলীতে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে খুন হন যুবদল নেতা মোহাম্মদ হারুন চৌধুরী। আদনান ইসফা হত্যার ঘটনায় ‘বড় ভাই’ হিসেবে নাম এসেছে চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের এক নেতার। তার বিরুদ্ধে এলাকায় চাঁদাবাজিসহ অনেক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি স্কুলের কিশোর-তরুণদের নিজের দলে ভিড়িয়ে গণি বেকারি, চন্দনপুরা এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখেন তিনি। এনায়েত বাজারে ইমন হত্যার সাথে সরাসরি অংশ নেন অমিত মুহুরী। বর্তমানে কারাবন্দি এ নেতার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জুবিলী রোড ও এনায়েত বাজার এলাকা।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নগরীর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্কুলে বিভিন্ন নামে কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে। গ্রুপে থাকে ১৫-২০ জন করে। এসব গ্যাং আবার নিয়ন্ত্রণ করে পার্শ্ববর্তী এলাকার বড় ভাইয়েরা। একই অবস্থা নগরীর কলেজগুলোতেও।
সিএমপির তথ্য অনুযায়ী, সন্ধ্যার পরে স্টেশন রোড, বিআরটিসি মোড়, কদমতলী, চকবাজার, মেডিকেল হোস্টেল, শিল্পকলা একাডেমি, সিআরবি, খুলশি, ফয়’স লেক, ঢেবারপাড়, চান্দগাঁও শমসের পাড়া, ফরিদের পাড়া, আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনি, সিডিএ, ছোটপুল, হালিশহর, বন্দর কলোনি ও পতেঙ্গার বেশ কয়েকটি এলাকা, জামালখান, চকবাজার, জিইসি মোড়, কাজীর দেউড়ি, সিআরবি, বিভিন্ন এলাকায় কথিত বড় ভাইদের দাপট।
এ ব্যাপারে সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, বড় ভাই কালচার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। সেই সাথে সাংস্কৃতিক ও আদর্শিক চর্চার ওপর জোর বাড়ানোর মধ্য দিয়ে এর প্রতিকার সম্ভব।
বাকলিয়া থানার ওসি প্রণব চৌধুরী বলেন, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে অপরাধ প্রবণতা কমানোর চেষ্টায় আছে পুলিশ। অপরাধীদের কোনো ছাড় নয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-