‘পুরো একটি প্রজন্ম হারিয়ে ফেলার ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারা’

ডেস্ক রিপোর্ট – সাধারণ শিক্ষার অভাবে রোহিঙ্গাদের পুরো একটি প্রজন্ম হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রধান নির্বাহী হেলে থরনিং স্মিড।

দ্বিতীয়বারের মতো গত শনি ও রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন হেলে থরনিং স্মিড। আজ বুধবার সেভ দ্য চিলড্রেন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সফরের বিষয়ে জানানো হয়।

হেলে থরনিং স্মিড জানান, ১৮ মাস আগে তিনি যখন প্রথম কক্সবাজারে যান, তখন হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল। তখন এবং এখন দুই সময়ই তিনি শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন, যারা মিয়ানমার থেকে অত্যাচারিত হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হয়েছিল।

হেলে থরনিং স্মিড বলেন, ‘শিশুর সংখ্যা এখন অনেক বাড়লেও আগের চেয়ে তারা ভালো আছে। তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি আছে। এরপরও এখনো অনেক শিশু সাধারণ শিক্ষার আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে। শিক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থায় শিশুদের এই অনুপস্থিতি জারি থাকলে রোহিঙ্গাদের একটি পুরো প্রজন্ম হারিয়ে যাবে বলে আমি শঙ্কিত।’

বাংলাদেশি জনসাধারণ এবং সরকারের বদান্যতায় মুগ্ধ হয়েছেন হেলে থরনিং স্মিড। তিনি মনে করেন, এ দেশের মানুষের সহানুভূতির ফলেই বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় দিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু শিবিরে বসবাসরত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার অর্ধেকই শিশু এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে তারাই।

রোহিঙ্গা অভিবাসনের দেড় বছরেরও বেশি সময় হলেও এখনো অনেক শিশু সাধারণ শিক্ষা কার্যক্রমগুলোর আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক-স্থানীয় সব ধরনের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের দেখভাল করতে ত্রুটি রাখছে না। তবে রোহিঙ্গাদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার ফলে তাদের রক্ষণাবেক্ষণে উন্নয়ন সংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশি জনসাধারণের সহযোগিতাও খুব বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।

হেলে থরনিং স্মিডলে বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে শরণার্থী রক্ষণাবেক্ষণে কর্মরত বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি সেভ দ্য চিলড্রেন। ক্যাম্পে স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য সরবরাহ, নিরাপদ পানি ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে আমাদের কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। শিবিরের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের জন্য আমরা শিশুশিক্ষা ও শিশু সুরক্ষার সেবা প্রদান করছি। কিন্তু আমাদের নির্ভর করতে হয় বাংলাদেশি মানুষের ওপর, বিশেষ করে কক্সবাজারের জনসাধারণের ওপর; প্রায় দুই বছর আগে রোহিঙ্গা অভিবাসনের ফলে যাদের জীবন নাটকীয়ভাবে বদলে গিয়েছিল।’

দুই দিনের সফরে সেভ দ্য চিলড্রেনের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্ক পিয়ের্সসহ হেলে থরনিং স্মিড শিবিরে সেভ দ্য চিলড্রেনের নানা কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। এর মধ্যে রয়েছে টেম্পোরারি লার্নিং সেন্টার, জেনারেল ফুড ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার, হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন পোস্ট, চাইল্ড ফ্রেন্ডলি স্পেস, চাইল্ড প্রোটেকশন কেস ম্যানেজমেন্ট অফিস এবং স্বাস্থ্য ও পুষ্টি অফিস।

হেলে থরনিং স্মিড কক্সবাজার সফরের সময় কয়েকটি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। তিনি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

আরও খবর