চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় জনভোগান্তি চরমেঃ ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের উন্নয়ন মূলক কাজ

শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, সদর

প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সিকদারের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি ইউপি কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় জন ভোগান্তি চরমে। চেয়ারম্যান এভাবে লাপাত্তা থাকায় পরিষদের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

এ ছাড়া দৈনন্দিন কার্যক্রমেও পড়ছে ভাটা, ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের উন্নয়ন মুলক কাজ গুলো। প্রত্যায়ন পত্র , ওয়ারিশ সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যন্যা সেবা নিতে এসে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজারেরও অধিক বাসিন্দা। পরিষদের এক সদস্য লিখিতভাবে জেলা প্রশাসক (ডিসি’র) কাছে এমন অভিযোগ করেছেন। । অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, বর্তমান পরিষদ প্রায় ৩ বছর আগে দায়িত্ব নিলেও আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব সদস্যরা জানতে পারেননি। তারা সেগুলো জানার চেষ্টা করলে চেয়ারম্যান তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।এলজিএসপি, টিআর,কাবিখা,উন্নয়ন তহবিল, ১% সহ বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম করে থাকেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মেম্বার জানিয়েছেন চেয়ারম্যান বাড়ি তো দূরের কথা ইউনিয়নেও নেই। বিভিন্ন প্রকল্পে গায়েবী স্বাক্ষর করে উপজেলায় প্রেরণ করেন সচিব।

সচিব শুভ কান্তি দে জানান , নতুন যোগদান করায় তেমন কিছুই জানেন না। জরুরী স্বাক্ষরের প্রয়োজন হলে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। তবে পরিষদের বাহিরে কি হচ্ছে তাও জানেন না সচিব। সব জানেন চেয়ারম্যান।

পরিষদের নিজস্ব আয় এবং বিভিন্ন সেক্টর থেকে পাওয়া অর্থ চরম স্বেচ্ছাচারিতা করে চেয়ারম্যান নিজের ইচ্ছেমতো খরচ করে থাকেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে হয় লুটপাট। গত সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চেয়ারম্যান অনুপস্থিত আছেন। এতে পরিষদে আরও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তারা দ্রুত এ অবস্থার অবসান চান।

সূত্রে প্রকাশ ইউনিয়ন পরিষদের ম্যানুয়াল অনুযায়ী চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকলে প্যানেল চেয়ারম্যান – ১ কে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার নিয়ম বিদ্যামান রয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারনে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ কে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউপি সদস্য জানান, চেয়ারম্যান ইতিপূর্বে কোন ধরনের কাজ না করে গুচ্ছ গ্রাম প্রকল্প থেকে ৭১.৫শ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া এলজিএসপি-৩ এর সোনালী ব্যাংক থেকে ৪ টি চেকের বিনিময়ে ৩ লক্ষ ২২ হাজার টাকা উত্তোলন করে চেয়ারম্যান শফিক। পরে তৎকালীন ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর আহসানুল হক চৌধুরী মামুন এলজিএসপি পরিদর্শনে আসলে কোন প্রকল্পের হদিস পাননি তিনি। পরিদর্শনে এসে প্রকল্প দেখতে না পেয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রধান করার কথা জানালে উত্তোলনকৃত টাকা পেরত প্রদানের আশ্বাস দেন উক্ত চেয়ারম্যান শফিক। জানতে চাইলে বর্তমান ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর বরণ বড়ুয়া জানান, চেয়ারম্যান শফিক প্রায় টাকা পেরত দিয়েছে। তবে ৩০ টাকা এখনো জমা দেয়নি।

এভাবেই ইউপি ভবন নিজের সম্পদের মত যা খুশি তাই করে যাচ্ছেন। তিনি গ্রাম আদালতে বসেন না। সেখানে কোনো সেবা পান না ইউনিয়নবাসী। তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন।

এভাবেই প্রতিনিয়ত জন ভোগান্তি বাড়ায় ফুঁসে ওঠেছে স্থানীয় সেবা প্রার্থীরা। ইউনিয়নের এক বাসিন্দা জানান, চেয়ারম্যানের কাছের লোক হলে সচিব আন্তরিক ভাবে স্বাক্ষর এনে দেয়। অপরিচিত হলে ৬/৭ দিনও মেলেনা স্বাক্ষরের।

তিনি আক্ষেপের সূরে বলেন সরকারী লোক হয়ে সরকারী ব্যক্তিদের উপর হামলাকারী চেয়ারম্যানের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করছে না তিনি। এব্যাপারে জানার জন্য চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সিকদারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। ব্যবহৃত সীমের নাম্বার বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া হয়নি।

আরও খবর