ডেস্ক রিপোর্ট – রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে ক্ষতিগ্রস্ত উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় মানুষের কাজের সুযোগ তৈরিতে প্রথমবারের মতো ‘চাকরি ও দক্ষতা মেলা’ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
এই মেলা আগামী ৪ মে অনুষ্ঠিত হবে বলে বেনারকে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) মো. আশরাফুল আফসার।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে উখিয়া ও টেকনাফের লাখ লাখ মানুষ খাদ্য সমস্যায় রয়েছে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়ার কয়েকদিনের মাথায় এই মেলা আয়োজনের ঘোষণা এলো।
এডিসি বলেন, “রোহিঙ্গা শিবিরে সক্রিয় প্রায় দুইশো প্রতিষ্ঠান এই মেলায় অংশ নেবে। প্রায় সবগুলো প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি স্ব স্ব সংস্থায় নিয়োগের সুযোগ, পদ্ধতিসহ নানা বিষয়ে ধারণা দেবে স্থানীয়দের।”
রোহিঙ্গা শিবিরে সক্রিয় সংস্থাগুলোর সমন্বয়কারী সংস্থা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) মুখপাত্র সৈকত বিশ্বাস বেনারকে বলেন, “কোনো সংস্থা বা কাজের বিষয়ে কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে সেসব বিষয়ে জানার সুযোগ থাকবে মেলায়।”
“আবেদনপত্র ও জীবনবৃত্তান্ত লেখার কৌশল বা অনলাইনে আবেদন করার উপায়, এ জাতীয় চাকরির জন্য কোন কোন বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এমন খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে চাকরিপ্রার্থীদের ধারণা দেওয়া হবে,” বলেন তিনি।
প্রাথমিকভাবে উখিয়ার স্টেশন সংলগ্ন মাঠে এ মেলা আয়োজনের কথা ভাবা হলেও তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এডিসি বলেন, “মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে অন্তত সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তাদের কারণে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠী।” খবর বেনার নিউজের
“এমনকি রোহিঙ্গাদের কারণেই এই এলাকায় খাদ্যসহ নানা ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে এ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে,” যোগ করেন এই কর্মকর্তা।
মেলায় চাকরিপ্রার্থীদের নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, পরবর্তীতে কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুযোগ তৈরি হলে সেই বিজ্ঞপ্তি মুঠোফোন বার্তার মাধ্যমে নিবন্ধিত প্রার্থীদের পাঠানো হবে।
“রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত সবগুলো জাতিসংঘভুক্ত সংস্থার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় উন্নয়ন সংস্থাগুলো এই মেলা আয়োজনে সহযোগিতা করবে,” বলেন তিনি।
স্থানীয়রা এই মেলা আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে ‘ভালো উদ্যোগ’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের চেয়ারম্যান মুন্সী ফায়েজ আহমেদ বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গারা আসার পর স্থানীয়দের মধ্যে এই ধারণা হয়েছে যে, তাদের চাকরি ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা রোহিঙ্গারা নিয়ে যাচ্ছে। চাকরি ও দক্ষতা মেলা তাদের কিছুটা হলেও সেই চিন্তাধারা পরিবর্তন আনবে।”
“খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের বা রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের শত্রু মনে না করে বসে। তেমনটা হলে পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে যাবে,” যোগ করেন মুন্সী ফায়েজ।
গবেষণা প্রতিবেদনে স্থানীয়দের সঙ্কট
‘বৈশ্বিক খাদ্য সংকট প্রতিবেদন-২০১৯’ অনুযায়ী, গত বছর কক্সবাজার জেলায় ১৩ লাখ মানুষ খাদ্য অনিরাপত্তায় ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “উখিয়া-টেকনাফ বাংলাদেশের অন্যতম দরিদ্র উপজেলা। সেখানকার মানুষ কৃষি ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের কারো কৃষি জমির পরিমাণ সর্বোচ্চ এক হেক্টরের বেশি নয়।”
“২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রোহিঙ্গাদের ব্যাপক আগমনের ফলে সেখানকার কৃষি জমি হয় রোহিঙ্গা শিবিরে পরিণত হয়েছে। অথবা পাহাড়ে গড়ে ওঠা শরণার্থী শিবির থেকে নেমে আসা বালুর কারণে আবাদযোগ্যতা হারিয়েছে।”
“রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে সীমান্ত নদী নাফে মাছ ধরাও নিষিদ্ধ করেছে সরকার। অথচ ওই এলাকার প্রায় ৩৫ হাজার পরিবার মৎসজীবী। মাছ ধরা নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা সস্তা শ্রমিক হিসাবে কাজ করছে,” বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরিফুর রহমান অপু বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার সাড়ে ১২ শতাংশ হতদরিদ্র, যাদের ‘আলট্রা পুওর’ বলা হয়। সারাদেশে এমন ৫০ লাখ পরিবারের আড়াই কোটি মানুষকে আমরা প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল বিতরণ করি।”
“২০১৬ সাল থেকে বছরের ছয় মাস এই খাদ্য সহয়তা দিয়ে আসছিল সরকার। তবে রোহিঙ্গারা আসার পর আমরা উখিয়া-টেকনাফের হতদরিদ্রদের সারা বছর চাল দিচ্ছি,” বলেন তিনি।
“রোহিঙ্গারা আসার পর সেখানে কিছুটা খাদ্য সঙ্কট ছিল,” উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, “আমরা সেই সমস্যার সমাধান করে ফেলেছি।”
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-