এইচএসসি দিচ্ছে ১১ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী

ডেস্ক রিপোর্ট – দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও অন্তরের আলোয় শিক্ষিত হয়ে আলোকিত মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে ১১ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। পাবনা মানবকল্যাণ ট্রাস্টের আশ্রয়ে থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে তারা।

এসব অন্ধ শিক্ষার্থী শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পাবনা সরকারি মহিলা কলেজ ও সেন্ট্রাল গার্লস স্কুল কেন্দ্র থেকে এইসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছো। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও অন্তরের চক্ষু দিয়ে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।

তারা হলো- ময়মনসিংহের সুশেল চন্দ ধরের ছেলে চন্দন কুমার ধর, পাবনার ফরিদপুর উপজেলার মোক্তার সরকারের ছেলে মো. হারুনুর রশিদ, পাবনা সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুর গ্রামের সিদ্দিক হোসেনের ছেলে মো. কাওসার হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের তৌরিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুল মতিন, তৈয়মুর রহমানের ছেলে আব্দুর সবুর, গোলাম মোস্তাফার ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম, গাজীপুরের গোলজার হোসেনের ছেলে মো. মাহমুদুল হাসান শাউন, নওগাঁর টিপু সুলতানের ছেলে মো. মাহবুব জামান, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. আরিফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জের বাচ্চু মিয়ার ছেলে নাদিম হোসেন ও টাঙ্গাইলের শ্যামল চন্দ্রের ছেলে ভোলানাথ।

HSC-Exam3

১১ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী পাবনা শহরতলির সিঙ্গা গ্রামের মানবকল্যাণ ট্রাস্টের আশ্রয়ে থেকে লালিত-পালিত হচ্ছে। আলোকিত মানুষ হওয়ার জন্য এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন তারা। এর আগে তারা এখান থেকে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল।

মানবকল্যাণ ট্রাস্ট সূত্র জানায়, তারা সবাই দরিদ্র ঘরের সন্তান। অন্ধদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন ব্রেইল পদ্ধতি। অথচ দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই সুযোগ নেই। চোখে দেখে না অন্ধরা। তাদের পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন শ্রুতি লেখকের। শ্রুতি লেখকদের সম্মানী দিতে হয় আট থেকে ১০ হাজার টাকা। অথচ শ্রুতি লেখকদের সম্মানী দেয়া তো দূরের কথা লেখাপড়া করার ন্যূনতম আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করার সক্ষমতা নেই এসব অন্ধ শিক্ষার্থীর।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এসব শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষা বোর্ড থেকে শ্রুতি লেখকদের অনুমোদন, রেজিস্ট্রেশন জটিলতা এবং বিভিন্ন বোর্ডের ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালার কারণে পদে পদে তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। এরপরও থেমে থাকেননি তারা। সব প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করে অনেক কষ্টে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন।

HSC-Exam3

জানা যায়, দরিদ্র এসব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি রয়েছে নানা ধরনের আর্থ-সামাজিক প্রতিকূলতা। কিন্তু সব বাধা ও প্রতিকূলতাকে জয় করে সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে তারা। ১১ জন পরীক্ষার্থীর মতো প্রায় ৮০ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাস্টের আশ্রয়ে থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করছে। একই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৪ জন পথশিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা ও দুইজন এমএসহ মোট ১৮৫ জন বিভিন্ন শ্রেণিতে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

পাবনা মানবকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, দেশবাসীর কাছে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কথা ছড়িয়ে পড়ায় এখানে দিন দিন বাড়ছে প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা। সব ধর্মের প্রতিবন্ধী ছাত্রদের আশ্রয় দিয়ে বিনাখরচে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করছে প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন ছাত্রদের আবাসনজনিত সংকটের কারণে নির্মাণাধীন পাঁচতলা ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা, একটি ফ্রি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন এবং অসহায় প্রবীণদের জন্য একটি বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৯৪ সাল থেকে স্বউদ্যোগে মেধা ও শ্রম দিয়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য এ অলাভজনক কাজটি করে আসছি আমি। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনাবাসিক বিভিন্ন জেলার ১২ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীকে আর্থিক সহযোগিতা করে আসছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হলে সারা দেশের সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধীদের সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষালয় হিসেবে গড়ে উঠতে পারে পাবনার এ আলোকিত মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠানটি।

আরও খবর