নিত্য নতুন রুট-মুখের ব্যবহারে ইয়াবা পাচার অব্যাহত

বার্তা ২৪ – বিগত কয়েক বছর ধরে দেশজুড়ে সবচেয়ে আলোচিত মাদকদ্রব্য ইয়াবা। ভয়াবহ এ মাদকের ছোবল থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে সরকারের মাদকবিরোধী অভিযান ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমপর্ণের পরও ইয়াবার পাচার থামছে না।

পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান দেশে আনতে ও দেশের ভেতর বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিতে নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করছেন কারবারিরা। এই কৌশলের অংশ হিসেবে শুধু নতুন রুটই না, নতুন নতুন মুখও ব্যবহার করা হচ্ছে। একই চালানকে কয়েক ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন রুটে পাঠানো হচ্ছে।

জানা যায়, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আলোচনায় উঠে এসেছে হেলিকপ্টারে করে ইয়াবা পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছয়টি বেসরকারি হেলিকপ্টার সার্ভিসের মালিকের বৈঠক হয়েছে বলেও জানা গেছে।

এদিকে গত ২৯ মার্চ কক্সবাজারের টেকনাফে ১৩ রোহিঙ্গার পেটের ভেতর থেকে ৪৩ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। আবার মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার চালান টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও পাচার হচ্ছে।  

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে, বেশ কয়েক মাস ধরে টেকনাফ থেকে পটুয়াখালী, বরগুনাসহ বিভিন্ন জেলায় নৌপথ ব্যবহার করে ইয়াবার বড় চালান নিয়ে ঢাকায় আসছেন কারবারিরা। গত এক বছরে মাদকবিরোধী অভিযানে, বন্দুকযুদ্ধে প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে ১০২ জন মাদক পাচারকারী আত্মসমর্পণ করেছেন। শত শত মাদক মামলায় কারাগারের আছেন হাজার হাজার ইয়াবা সেবী ও কারবারি।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসে রাজধানিতে এক চালানেই জব্দ হয়েছে আট লাখ পিস ইয়াবা। সারাদেশে এমন অনেক ছোট বড় চালান প্রতিনিয়ত জব্দ হচ্ছে।

ইয়াবার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত কক্সবাজারে শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই ১১ লাখ ২০ হাজার ২৫১ পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া মার্চ মাসে টেকনাফের সীমান্ত এলাকা থেকে ১১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৫৪ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে বিজিবি।

প্রত্যেকটা ইয়াবা চালানের রুট পর্যালোচনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, পুরাতন কোনো রুট অনুসরণ করছে না ইয়াবা কারবারিরা। তারা এ কাজে ব্যবহার করছে নিত্য নতুন রুট। যার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলো ব্যয়বহুল বেসরকারি হেলিকপ্টারে ইয়াবা পাচার।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, হেলিকপ্টারের যাত্রীদের তেমন কোনো নিরাপত্তাবলয়ের মাধ্যমে যেতে হয় না এবং পণ্য পরিবহনের সময় স্ক্যানিংয়ের যথাযথ ব্যবস্থা নেই। আর এই সুযোগ ব্যবহার করে সহজেই কারবারিরা ইয়াবা পাচার করছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে  র‍্যাবের পরিচালক (গণমাধ্যম) মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন রুট ব্যবহার করছে। নতুন রুট হিসেবে সাগরপথ ও অভ্যন্তরীণ নদী পথকে বেঁচে নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযানের পরও ইয়াবা পাচার পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এটি লাভজনক ব্যবসা। তাই ইয়াবা পাচারে নতুন রুট যেমন ব্যবহার হচ্ছে। নতুন নতুন মুখও যোগ হচ্ছে।’

অন্যদিকে হেলিকপ্টারে ইয়াবা চালানের বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ইয়াবা কারবারিদের এই নতুন রুটের উপর আমাদের নজরদারি আছে। কেউই মাদকদ্রব্য পাচার করে পার পাবে না।’

আরও খবর