বার্তা২৪ :
বিয়ের প্রলোভনে গভীর সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া যেতে তৎপর হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা নারীরা। তাদের এ কাজে সহায়তা করছেন ক্যাম্প ভিত্তিক কিছু দালাল চক্র।
সাগরে প্রতিনিয়তই পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছেন রোহিঙ্গা যুবক ও নারীরা। দেশীয় কিছু দালাল চক্রের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি উপেক্ষা করে সাগরে পাড়ি জমাচ্ছেন এসব রোহিঙ্গা।
সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থের বিনিময়ে মালয়েশিয়া পাড়ি জমানোর তথ্য বেরিয়ে আসে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উখিয়া-টেকনাফের ৩০ ক্যাম্পে অস্থায়ীভাবে বসবাসরত রোহিঙ্গার মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে কিছু দালাল চক্র। যারা মূলত এসব রোহিঙ্গা নারীদের টার্গেট করে প্রলোভন দেখাচ্ছেন। এ ফাঁদে পা দিয়ে রোহিঙ্গা নারীরা মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে রাজি হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে রাতের আঁধারে সাগর পাড়ি দিচ্ছেন তারা। আর সাগর পাড়ি দিতে যেয়েই রোহিঙ্গারা আটক হচ্ছেন পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
সম্প্রতি সাগর পথে টহল দেয়ার সময় কোস্টগার্ড, বিজিবি ও র্যাব-পুলিশের হাতে আটক হয় প্রায় ৩ শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। যার মধ্যে বুধবার (৩ এপ্রিল) বিজিবির হাতে ২৭ জন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু আটক হয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ নারীর ১৩ জনই অবিবাহিত। এসব নারীরা বিয়ের আশায় মালয়েশিয়া যেতে মরিয়া।
মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গা যুবকদের সঙ্গে আটক হওয়া রোহিঙ্গা নারীদের অনেকেরই ফোনে বিয়ে ঠিক হয়েছে। উদ্ধার হওয়া নারীদের অনেকেই আগে থেকেই মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত স্বামীর কাছে যেতে চাইছেন। বিজিবির হাতে উদ্ধার হওয়া নারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, প্ররোচনার ফাঁদে পড়েন রোহিঙ্গা শিবিরের উখিয়া কুতুপালংয়ের ৩ জন, জামতলীর ৪ জন, থ্যাংখালীর ৩ জন ও লেদারের ৩ জন। এছাড়া বালুখালী, টেকনাফ, মোচনী ও শামলাপুর এলাকা থেকে ১ জন করে উদ্ধার হন।
তাদের মধ্যে একজন উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের ডি-১’র দিল মোহাম্মদের মেয়ে রুজুমা আক্তার (১৪)। তিনি জানান, তার চাচাত বোন মুবিনা আক্তারসহ দুই জনই অবিবাহিত। মালয়েশিয়ায় তাদের একভাই বিয়ের কথা পাকা করেছেন। ওই ভাই দালালদের সাথে কথা বলে মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে তাদেরকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বের করে টেকনাফ নিয়ে আসেন।
রাতে সাগর পাড়ে নিয়ে গেলেও কোন ট্রলারের দেখা মেলেনি। পরে বিজিবির সদস্যরা তাদের আটক করেন।
তিনি আরও জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে ঠাঁই হয় উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গা যুবকের সাথে বিয়ের কথা ঠিক হয়েছে।
পরিবারের সিদ্ধান্তে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু বিজিবির হাতে আটক হয়ে বিয়ের স্বপ্নই রয়ে গেল।
উদ্ধার হওয়া আরেক নারী টেকনাফের শামলাপুর শিবিরের ডি ব্লকের সুলতানের মেয়ে দিল কায়েস (১৪)।
তিনি জানান, মা ও বাবাকে হারিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে ভাই নূর কালামকে নিয়ে বসবাস করছিলাম। সানাউল্লাহ নামে আরেক ভাই মালয়েশিয়া থাকেন। সানাউল্লাহ সেখানে বিয়ের কথা ঠিক করে দালালের সাথে বোঝাপড়া করেন।
মঙ্গলবার সাগর পথে মালয়েশিয়া যেতে খবর এলেও সাথে থাকা ভাই নূর কালাম ট্রলারে উঠিয়ে দিতে আসেন। রাতেই ট্রলারে যাওয়ার আগে আমাদের আটক করা হয়।
এমনকি পৌঁছে দিতে এসে ভাই নূর কালামও আটক হয়েছেন। এখন বিয়ের স্বপ্ন আর হলো না।
টেকনাফ-২ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সাগর উপকূল থেকে ২৭ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। তাদের অধিকাংশ নারী অবিবাহিত। এই সব পাচারে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আনা হবে। সীমান্ত ও উপকূলে বিজিবির অতিরিক্ত টহল জোরদার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন সময় সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে কয়েকশ রোহিঙ্গাকে এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু দালালদের খপ্পরে পড়ে তারা বার বার সাগর পাড়ি দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
টেকনাফ উপকূলে কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি দালাল চক্রের বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-