শাহীন মাহমুদ রাসেল
সরকারের বেধে দেয়া দর না মেনে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সদরের খরুলিয়ার মাংসের বাজার। মাংস ব্যবসায়ীরা গরুর মূল্য বৃদ্ধি ও আমদানি কম থাকার অজুহাতে মাংসের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে তাদের মূল্য বৃদ্ধির কারসাজিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন ক্রেতা সাধারণরা। তবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাংসের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি অস্বীকার করেছে খরুলিয়ার মাংস ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের বড় গরুর বাজার ও ব্যবসা প্রসিদ্ধ অবাঙালী অধ্যুষিত এ বাজারে প্রতিদিন গরুর মাংসের চাহিদা প্রচুর। এর মধ্যে কিছু অংশ হোটেলগুলোতে গেলেও বাকি অংশের ক্রেতা বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
কোন একটা পবিত্র দিনকে কেন্দ্র করার পাশাপাশি এই বাজারের চারপাশের কয়েক হাজার পরিবারে নিত্যদিনে খাবারের মেন্যুতে গরুর মাংস থাকে। ফলে এ বাজারে প্রতিদিন মাংসের চাহিদা গড়ে ৬ থেকে ৮ টন। স্থানীয় মাংস ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন আশপাশের বিভিন্ন জেলার হাট বাজার থেকে পর্যাপ্ত গরু কিনে তা জবাইয়ের জন্য প্রস্তুত করে রাখেন। পবিত্র মেরাজ হিসেবে খরুলিয়া বাজারের পশু জবাইখানাসহ বিভিন্ন এলাকায় আজ (৩ মার্চ) ৩০ থেকে ৪০টি গরু মহিষ জবাই করা হয়। পরে ওইসব মাংস দোকানগুলোতে নিয়ে আসা মাত্র মূল্য বৃদ্ধি করে সিন্ডিকেটের বেধে দেয়া দরে বিক্রি করা হয়। গত দেড়মাস থেকে চলছে এ অবস্থা মাংসের বাজারে।
ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ, হাট-বাজারগুলোতে গরুর পর্যাপ্ত আমদানি এবং বাজার মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও ব্যবসায়ীরা আমদানি কম ও গরুর মূল্য বৃদ্ধি ও অন্যান্য খরচের অজুহাতে মাংসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের দাবি সরকারি কর্তৃপক্ষ মাংসের দর নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা তা মানছে না। ব্যবসায়ীরা পূর্বের দর ৪০০ টাকার স্থলে বর্তমানে প্রতি কেজি গরু মাংস ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। অথচ প্রতি কেজি গরুর মাংস ৪০০ টাকার উপরে বিক্রি করতে পারবে না, কর্তৃপক্ষের এমন নির্দেশনা থাকলেও ওই নির্দেশনা মানছে না মাংস ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, গরুর কলিজা যেখানে (শুধু কলিজা) ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হতো তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে। ফলে মাংস ব্যবসায়ীরা ‘সিন্ডিকেট দরে’ প্রতিদিন সাধারণ ক্রেতাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অহেতুক এমন মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনই ক্রেতাদের সাথে বাক-বিতন্ডার মতো ঘটনাও ঘটছে।
এ ব্যাপারে মাংস ক্রেতা মুদি ব্যবসায়ী আজিম (৩৫) জানান, মাংসের দাম বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা ওজনের সময় প্রতি কেজিতে কমপক্ষে ২০০ গ্রাম হাড় কৌশলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে তারা বলেন, হাড় কি আমরা বাড়ি নিয়ে যাব? রিক্সাচালক বাবুল (৩৭) বলেন, স্ত্রী সন্তানদের জন্য আধা কেজি মাংস কিনেছিলাম। কিন্তু পরে ওজন করে দেখি মাংসের ভিতরে ১৫০ গ্রাম হাড় রয়েছে। শুধু তিনিই নন সকল ক্রেতাকেই মাংসের সাথে হাড় ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে অস্বাভাবিক হারে। চাকুরিজীবী বেলাল (৩৩) বলেন, কলিজা কিনতে গিয়েছিলাম। বিক্রেতা দাম চাইলো প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা। দাম শুনে মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা। ফলে কলিজা না কিনেই ফিরে এলাম।
সূত্র মতে, ওইসব ব্যবসায়ীরা দেড়মাস আগে সিন্ডিকেট করে আরও মাংসের দাম বৃদ্ধি করেছে। প্রথমে প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৪৫০ এবং পরে ৫০ টাকা বাড়িয়ে সর্বশেষে ৫০০ টাকা কেজি মাংস বিক্রি করছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাংস ব্যবসায়ী জানান, সিন্ডিকেট করে মাংসের মূল্য বৃদ্ধি করা ঠিক হয়নি। কারণ হাটে গরুর দাম এখনও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধির এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে খরুলিয়ার মাংস ব্যবসায়ীরা। মাংস ব্যবসায়ী দানু বলেন, সিন্ডিকেট নয়, আমদানি কম থাকায় হাটে গরুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া অন্যান্য খরচও বেড়ে যাওয়ায় মাংসের দাম বাড়াতে হয়েছে। তিনি বলেন, অন্যান্য শহরে মাংস ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই তুলনায় আমাদের এখানে দাম এখনও অনেক কম।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-