ডেস্ক রিপোর্ট – সিলেটে কলেজছাত্রী রুপার ঘটনা জানতো না পরিবার। একটু-আধটু জানলেও তারা বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নেয়নি। আর রুপাও সব ঘটনা পরিবারকে খুলে বলেনি। গ্রেপ্তারের পর রুপার স্বীকারোক্তিতে সব তথ্য জেনেছেন পরিবারের সদস্যরা। এরপরও ঘটনায় অনুতপ্ত তারা। রুপার এইসব ঘটনাবলী আগে জানতে পারলে হয়তো বিষয়টি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করা হতো বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। তারা জানান- ঘটনার পরও রূপা ছিল স্বাভাবিক।
সাইফুরকে খুনের ঘটনা সে কারো সঙ্গে শেয়ার করেনি। এ কারণে পরিবারের সদস্যরাও জানতো না সাইফুর খুন হয়েছেন।
সিলেটের এমসি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম রূপা গত শনিবার নগরীর সুবহানীঘাটের হোটেল মেহেরপুরে নিয়ে তারই এক সময়ের গৃহ শিক্ষক ও প্রেমিক সাইফুর রহমানকে খুন করে। আর খুনের ঘটনার পর প্রেমিক মোজাম্মিলকে সঙ্গে করে নিয়ে লাশ ফেলে দেয় সুনামগঞ্জ বাইপাসের সড়কের পাশে। এরপর শনিবার দুপুরের পর থেকে সোমবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত রূপা বাসাতেই ছিলো। গ্রেপ্তারের পর রূপা প্রথমে পুলিশ ও পরে আদালতের কাছে খুনের ঘটনা স্বীকার করে। জানায় খুনের লোমহর্ষক ঘটনাও। রূপার বড় ভাই রুহেল আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘রূপার জীবনে এতো কিছু ঘটছে তা আমরা কেউ-ই টের পাই নি। একবার রূপা তার খালার কাছে বলেছিল সাইফুর রহমান তাকে ডিস্টার্ব করে। তখন খালা সাইফুরকে ফোনে জানান রূপাকে বিয়ে করতে চাইলে অপেক্ষায় থাকো।
তার পড়ালেখা শেষ হলে পরে দেখা যাবে’। এরপর থেকে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টিকে অতোটা গুরুত্ব দেননি। রূপা এখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সে এমসি কলেজের রোভার স্কাউটের সদস্য। পরিবারের সদস্যরা জানান- রূপার মা মারা গেছেন অনেক আগে। রূপার পিতা শফিকুর রহমান ছিলেন কারারক্ষী। রূপা যখন ক্লাস সেভেনের ছাত্রী তখন তাদের পরিবারে লজিং নিয়েছিলেন সাইফুর রহমান। খুব অল্প দিনেই তিনি রূপার পরিবারের সদস্য হয়ে যান। ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে রূপার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের চিন্তাও পরিবারের কেউ করেননি। দুই বছর আগে থেকে রূপার ভাই রুহেল আহমদের বিয়ের কথা-বার্তা শুরু হয়। তখন বসবাসের ঘরের সংকট। এই সংকটের কারণেই তারা সাইফুরকে অন্যত্র চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তাদের কথামতো সাইফুরও চলে আসেন নগরীর টিলাগড়ের একটি মেসে। সেখানে এলেও সাইফুর প্রতি সপ্তাহেই রূপাদের বাড়ি যেতেন। আবার কলেজ ক্যাম্পাসে রূপার সঙ্গে যোগাযোগ হতো। ৫ মাস আগে একদিন রূপা তার পরিবারের কাছে জানায়- সাইফুর তাকে ডিস্টার্ব করছে। তার ভাবিকে বিষয়টি জানায়। পরে ভাবি রূপার খালাকে বিষয়টি জানান।
পরে খালা সাইফুরকে ফোন করে অপেক্ষায় থাকার কথা বলেন। তারা জানান- গত ডিসেম্বরে সাইফুর তার পরিবারের সদস্যদের নানা ভাবে হুমকিতে রেখেছেন। রূপার ভাই রুহেল ছাত্রদলের রাজনীতি করেন। এ কারণে তিনি ওই সময় গায়েবি ঘটনা মামলার আসামি হওয়ার আশঙ্কায় বাড়িছাড়া ছিলেন। চলে গিয়েছিলেন সিলেটের বাইরে। এই সুযোগে সাইফুর রূপাকে নানা ভাবে হুমকি দেয়। তার ভাইকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়। এই হুমকি দিয়ে রূপাকে হোটেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়। ওই সময় রূপা খুব বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে ছোট বোনকে নিয়েও দুশ্চিন্তায় ছিল।
রূপার ছোট বোন সিলেটের একটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। সে অনেকটা সহজ সরল। তার দিকেও নজর পড়েছিল সাইফুর রহমানের। রূপার মতো তার সঙ্গে ব্যবহার শুরু করতে চেয়েছিল সাইফুর। এতে রূপা বাধা দেয়। তার বোনকে রক্ষা করতে নানা সময় সাইফুরের প্রলোভনে পড়তে পারে বলে ধারণা করেন পরিবার। রূপার ভাই রুহেল জানান- মাতৃহীন রূপা পরিবারের সব কিছু দেখভাল করতো। পরিবারের সবার সুখ, দুঃখে সে এগিয়ে আসতো। কিন্তু কখনোই তার দুঃখটি প্রকাশ করেনি। এ নিয়ে এখন আফসোস তাদের। ভেতরে ভেতরে এতো কিছু হচ্ছে সব জানলে তারা আগে থেকেই সতর্ক হয়ে যেতেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-