আজিম নিহাদ, নেপাল থেকে :
নেপালের ইটাহারিতে ২য় নেপাল-বাংলাদেশ যুব সম্মেলন শুরু হয়েছে। শুক্রবার (২৯ মার্চ) নেপালের স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন নেপালের ১নং প্রভিসির (প্রদেশ) সমাজ উন্নয়নমন্ত্রী জীবন গিমিরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নেপালের এই মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে গেছে তা সারা পৃথিবীর কাছে দৃষ্টান্ত। নেপালও নিজেদেরকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশকে অনুসরণ করছে।
সমাজ উন্নয়নমন্ত্রী জীবন গিমিরী বলেন, ঔষুধ উৎপাদন, শিক্ষা, ক্ষুদ্রঋণে স্বাবলম্বী এবং বিভিন্ন উৎপাদনমুখী ব্যবসায়ীক সেক্টরে বাংলাদেশ অনেক ভালভাবে এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের মত এত দ্রুত সময়ে এসব সেক্টরে কেউ এগুতে পারেনি। তাই নেপালও প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের এসব পলিসি অনুসরণ করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো নেপালও পর্যটন সম্ভাবনাময়ী দেশ। পর্যটনের আকর্ষণীয় স্পটগুলো এখানে বিদ্যমান। কিন্তু যথাযথভাবে প্রমোট না হওয়ার কারণে পিছিয়ে আছে। এই যুব সম্মেলনের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে এবং পর্যটন খাতকে তুলে ধরতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাম্প্রদায়িক সমস্যাগুলো দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক ধর্মের মানুষের সাথে আরেক ধর্মের মানুষের সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে।
নেপালের ১নং প্রোভিন্সের (প্রদেশ) সানসুরি ইটাহারি এলাকার ওয়াইডিসি (ইয়ুথ ডেভলপমেন্ট সেন্টার) সম্মেলন কক্ষে তিনদিন ব্যাপী এ যুব সম্মেলন শুরু হয়েছে।
এতে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ, নেপাল শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশের তরুণরা। বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছেন ৮৬ জন তরুণ।
২য় নেপাল-বাংলাদেশ যুব সম্মেলনের চেয়ারম্যান অভিনব চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নেপালের ১নং প্রোভিন্সের বিরোধী দল নেপালী কনগ্রেস পার্টির চীফ হুইপ সুয়াইরমা রায়, সংসদ সদস্য উমিতা বিকে, ২য় নেপাল-বাংলাদেশ যুব সম্মেলনের বাংলাদেশ সমন্বয়ক সাবেক ছাত্রনেতা বাপ্পাদিত্য বসু, শ্রীলঙ্কার ইয়ুথ পলিসি এক্সপার্ট মিলিন্ডা রাজাপাকসে, নেপাল বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটির সভাপতি ড. খালিদ হোসাইন, ইটাহারী সাব-মেট্টো সিটির মেয়র দোয়ারিক লাল চৌধুরী, অরুণ ভিলেজ মিউনিসিপালিটির সভাপতি গাজেন্দ্র বাহাদুর কারকি, সানসুরি জেলা যুব কমিটির সভাপতি হারকা জং এভাং লিম্বু প্রমুখ।
নেপালের ১নং প্রোভিন্সের বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ সুয়াইরমা রায় বলেন, বায়োজ্যেষ্ঠ নেতা বা দলের সিনিয়র নেতাদের বাঁধার কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় যুবকরা রাজনীতিতে এগুতে পারছে না। তারা যুব নেতৃত্বকে ভয় পায়। সহজে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায় না। একারণে যুবকরা রাজনীতি বিমুখ হচ্ছে। যদি এ অবস্থা চলে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব সংকটে পড়তে হবে। তাই বায়োজ্যেষ্ঠ রাজনীতিবীদদের ছাড় দেওয়ার মানসকতা তৈরী হতে হবে। একই সাথে যুবকদেরও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে হবে। কারণ যুবকরা ছাড়া রাজনীতি কল্পনাও করা যায় না।
যুব সম্মেলনের বাংলাদেশের সমন্বয়ক বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলো নিয়ে আগামীতে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় যুব সম্মেলন করার চেষ্টা চলছে। এই যুব সম্মেলন গুলোর মাধ্যমে কি কি সমস্যা বিদ্যমান এবং সমাধানের উপায় কি সেগুলো বের করা যাবে। কারণ আগামীতে নেতৃত্ব দিবে তরুণরাই। কাজেই তাদেরকে এখন থেকেই সেভাবে গড়ে তুলতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে বাপ্পাদিত্য বসু আগামী ২০২১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর বিভিন্ন প্রোগ্রামে নেপালসহ অন্যান্য দেশগুলোর তরুণদের অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সমাজ উন্নয়নমন্ত্রীকে বাংলাদেশের জাতির জনকের ছবি ও জাতীয় পতাকা উপহার দেওয়া হয়। একইসাথে উপস্থিত সকল অতিথিকে বাংলাদেশে পাটের তৈরী ব্যাগ উপহার দেওয়া হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর পরই টাপুরা নামে নেপালের একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মনোমুগ্ধকর নাচ ও গান পরিবেশন করে।
এরপর দুপুর ২ টায় ইয়ুথ পার্টিসিপেশন, এমপাওয়ারমেন্ট এবং পলিসি অ্যারেজম্যান্ট বিষয়ে আলোচনা সভা হয়। এটি শেষে বিকাল তিনটায় মাইগ্রেশন এবং হিউম্যান ট্রাফিকিং এর উপর কর্মশালা চলে। সম্মেলন শেষ হবে আগামী ৩১ মার্চ।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-