ডেস্ক রিপোর্ট – সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে গৃহকর্মী হিসেবে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে নারী পাচার করে আসছে বেশ কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র। পাচারের পর সেসব দেশে নির্যাতনের শিকার হলে জবাবদিহি কিংবা আইনি ঝামেলা এড়াতে এবার একটি চক্রের টার্গেট মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীরা।
ভুয়া পরিচয়ে ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করে চার রোহিঙ্গা নারীর জন্য পাসপোর্টের আবেদন করা হয়েছিল ইতোমধ্যে। তবে পাসপোর্ট তৈরি হওয়ার আগেই ওই চার রোহিঙ্গা নারীদের উদ্ধারসহ পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয় র্যাব-৩।
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে পাচারকারী চক্রের সদস্য আব্দুল হামিদকে (৩০) আটক করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কেরানীগঞ্জ থেকে পাসপোর্ট তৈরির দালাল রিয়াদ হোসেনকে (৩৪) আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ৩৩টি পাসপোর্টসহ বিপুল সংখ্যক ভুয়া জন্মনিবন্ধনের কপি, পাসপোর্টের ফরম ও একটি কম্পিউটার জব্দ করা হয়।
উদ্ধার রোহিঙ্গা নারী হাসিনা বেগম (২৫) মিয়ানমারের মংডু শহরের বাগঘুনা এলাকার বাসিন্দা, বুশরা আক্তার (১৯), ছাবেকুন্নাহার (১৮) ও রুমা আক্তার (১৮) মিয়ানমারের ভুচি দং এলাকার বাসিন্দা। তারা সে দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর কক্সবাজারের উখিয়া বালুখালি ক্যাম্পে বসবাস করছিল।
বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল এমরানুল হাসান।
আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থানকালে মানবপাচার চক্রের দালাল জাহিদের প্রলোভনে সৌদি আরবে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় চার নারী। মার্চের প্রথম সপ্তাহে দালাল জাহিদ ও মোমিনুলের সহায়তায় ঢাকায় এসে খিলগাঁওয়ে আটক হামিদের ভাড়া বাসায় এসে বসবাস শুরু করে। কক্সবাজারের দালাল জাহিদ ও মোমিনুলও মিয়ানমারের বংশোদ্ভূত নাগরিক।
কক্সবাজারের বাসিন্দা হামিদ প্রায় ১০ বছর ধরে ঢাকায় অবস্থান করে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির সহায়তায় মানবপাচার চক্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিল। ৯০ এর দশক থেকে হামিদ পরিবারসহ সৌদি আরবে বসবাস করছিল। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশে ফেরত আসলেও সেখানে থেকে যান হামিদ। এরপর ৬ মাস জেল খাটার পর ২০০৮ সালে দেশে ফিরে মানবপাচারের কাজে জড়িয়ে পড়েন।
মার্চের প্রথম দিকে চার রোহিঙ্গা নারী ঢাকায় নিজের বাসায় আসার পর একটি ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে তাদের পাসপোর্ট করার জন্য কেরানীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করেন হামিদ।
হামিদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর সিও আরো বলেন, সৌদি আরবে নারীপাচার করতে কোনো টাকা লাগতো না। এ কারণে খুব সহজেই অসহায় নারীদের প্রলুব্ধ করা যায়। সম্প্রতি চক্রটি রোহিঙ্গা নারীদের টার্গেট করে। কারণ, সেই দেশে নারীরা নির্যাতনের শিকার হলে জবাবদিহি করতে হবে না এবং ভুক্তভোগীরা আইনি আশ্রয় নিতে পারবে না।
প্রতিজন রোহিঙ্গা নাগরিক পাচারে ৫০ হাজার টাকা করে বাজেট চক্রটির। এর মধ্যে হামিদ ১৫ হাজার টাকা এবং তাদের ঢাকায় থাকা-খাওয়ার খরচ নিয়মিত পেতেন।
আটক রিয়াদের কেরানীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের পাশে একটি ফটোকপির দোকান রয়েছে। তিনি নিজের ইচ্ছেমতো ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করে নিজেই প্রয়োজনীয় কাগজ সত্যায়িত করে পাসপোর্টের আবেদন করে দিতেন।
উদ্ধার চার রোহিঙ্গা নাগরিককে ক্যাম্পে প্রত্যাবর্তন ও আটক দু’জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীনের কথা জানিয়ে এমরানুল হাসান আরো বলেন, হামিদ এ পর্যন্ত ২০ বাংলাদেশি নারীকে পাচার করেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। এতে জড়িত কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সির নামও এসেছে, তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জব্দ হওয়া পাসপোর্টগুলো সংশ্লিষ্ট দফতরের মাধ্যমে যাচাই করা হবে।
এ মামলার তদন্তভার র্যাব গ্রহণ করবে, তদন্তসাপেক্ষে চক্রের মূল উদঘাটনের চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-