ডেস্ক রিপোর্ট – আসন্ন পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের অনুষ্ঠেয় ভোটে ১০টি উপজেলায় সম্পূর্ণভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য কারিগরি টিমে সহায়তা দিতে থাকছে সশস্ত্র বাহিনীর নিরস্ত্র সদস্যরা।
ইভিএম পরিচালনা তাদের মূল দায়িত্ব হলেও কোনো অনাহূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সেনা ক্যাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ করে সব পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
ইসির উপ-সচিব আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ২৪ মার্চ অনুষ্ঠেয় তৃতীয় ধাপের উপজেলা ভোটে রংপুর সদর, গোপালগঞ্জ সদর, মানিকগঞ্জ সদর ও মেহেরপুর সদর এবং ৩১ মার্চ অনুষ্ঠেয় চতুর্থ ধাপের ভোটে কক্সবাজার সদর, পটুয়াখালী সদর, ময়মনসিংহ সদর, বাগেরহাট সদর, মুন্সিগঞ্জ সদর ও ফেনী সদরে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে। এতে প্রতি কেন্দ্রে ইভিএম পরিচালনায় কারিগরি সহায়তা টিমের অংশ হিসেবে দু’জন করে সশস্ত্র বাহিনীর নিরস্ত্র সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের সঙ্গে প্রতি টিমে একজন করে ইসি নিয়োজিত ব্যক্তিও কাজ করবেন।
ইতিমধ্যে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও জনসাধারণকে নতুন এ ভোটিং ব্যবস্থা প্রদর্শন/ভোটার এডুকেশন বা জনসচেতনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইভিএম কাস্টমাইজেশনসহ নির্বাচন উপযোগী করে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ইভিএমে ভোটগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা হিসেবে প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের দু’দিনের নিবিড় প্রশিক্ষণ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো ওই নির্দেশনায় ইভিএম পরিচালনার জন্য কারিগরি টিমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভোটকেন্দ্রে অবস্থিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং টহল কাজে নিয়োজিত র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে সেনা সদস্যরা সংশ্লিষ্ট সেনা ক্যাম্পের সঙ্গেও যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
ইভিএমে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে সকালে সাড়ে সাতটার আগে থেকেই ডেমো ভোট নেওয়া হবে। ৭টা ৪৫মিনিট পর্যন্ত ভোট নিয়ে ডেমো ভোটের প্রিন্ট কপি রাখবেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা। এরপর ১৫ মিনিট ধরে মূল ভোট শুরু প্রস্তুতি নেবেন। সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে।
নির্বাচন কমিশন বর্তমানে উন্নতমানের ইভিএম দিয়ে ভোটগ্রহণ করছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ছয়টি আসনের পুরোটাই এসব ইভিএমে ভোটগ্রহণ করেছে। যদিও ফলাফল যত দ্রুততার সঙ্গে প্রকাশ করার কথা জানিয়েছিল, তত দ্রুত প্রকাশ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। তবে মেশিনগুলোতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হয়েই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে পেরেছিল।
দেশে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণের প্রথা চালু করে এটিএম শামসুল হুদার কমিশন ২০১০ সালে। সেই ভোটযন্ত্র তৈরি করে দিয়েছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। গড়ে ২০ হাজার টাকার সেই ইভিএম ২০১৩ সালে রাজশাহীর সিটি নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের সময় বিকল হয়ে যায়। সেটা আর ঠিক করা সম্ভব না হলে পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন আবার ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ করে। সেই থেকে ওই ইভিএম আর ব্যবহার করা হয়নি।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের বিগত কমিশন সেই মেশিন নষ্ট করে নতুন করে উন্নতমানের মেশিন তৈরির উদ্যোগ নেয়। বর্তমান নূরুল হুদা কমিশন প্রতি মেশিন দুই লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নিচ্ছে।
এই উন্নতমানে ইভিএম দিয়ে রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল সিটি নির্বাচনে বেশ সাড়া পায় নির্বাচন কমিশন। তারপরই সংসদ নির্বাচনেও সেটি ব্যবহার করে ইসি।
পঞ্চম উপজেলা পরিষদের তফসিল ঘোষণার পূর্বে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, সব সদর উপজেলায় ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে। এরপর বলা হয়েছিল তৃতীয় ধাপ থেকে পরবর্তী ধাপের ভোটে সদর উপজেলাগুলোয় ব্যবহার করা হবে ইভিএম। এরপর তৃতীয় ধাপে সাতটি উপজেলায় ইভিএমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে না পারায় সীমিত সংখ্যক উপজেলার ভোটে ব্যবহার করা হচ্ছে এ ভোটযন্ত্র।
এবার পাঁচ ধাপে উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। এক্ষেত্রে পঞ্চম ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১৮ জুন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-