শফিক আযাদ, উখিয়া :
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে অর্ধশতাধিক ইয়াবা ও মাদক কারবারী নিহত এবং ১০২ জন আত্মসমর্পণের পর টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার চালান অনুপ্রবেশে নিরাপদ মনে করছে না মাদক কারবারীরা। এ জন্য তারা বেছে নিয়েছে উখিয়ার দুর্গম সীমান্ত এলাকা।
ইদানীং রাতের আঁধারে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে উখিয়া দিয়েই আসছে ইয়াবার বড় বড় চালান। এরপর স্থানীয় দরিদ্র যুবকদের মাধ্যমে সেসব চালান পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
সূত্রে জানা গেছে, উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ডেইলপাড়া, আমতলী, করইবনিয়া, পূর্ব ডিগলিয়া পালং পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী, রহমতের বিল, পালংখালী, বালুখালী, তমব্রু এলাকা সহ অন্তত ১২টি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা প্রবেশ করছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ইয়াবায় সয়লাব হয়ে গেছে উখিয়া। বর্তমানে উখিয়ার শতাধিক কারবারী সক্রিয় রয়েছে এ ব্যবসায়। এক সময় দরিদ্র থাকলেও অল্পদিনেই তাদের অনেকে হয়ে উঠেছেন বিত্তশালী।
উখিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বেশ কিছু ইয়াবা কারবারীর নাম। যাদের অনেকে একাধিক মামলার আসামিও। এদের মধ্যে ২০ গডফাদার রয়েছে রাজাপালং ইউনিয়নের ডেইলপাড়া ও করইবনিয়া, হাজীরপাড়া,কুতুপালং এলাকায়। পালংখালীর রয়েছে আরো ২৫জন গডফাদার। এছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়নের অন্তত অর্ধশতাাধিক ইয়াবা ও মাদক গডফাদারদের মাধ্যমে এসব ইয়াবা চালান আসছে এদেশে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন চক্রের সঙ্গে ওইসব ইয়াবা ব্যবসায়ীর আঁতাত রয়েছে। এর মধ্যে রেজিস্টার ক্যাম্পের জিয়াবুল হক ছিল অন্যতম। যারা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ও মিয়ানমারের এমপিটি সিমের মাধ্যমে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকতো। পরে রোহিঙ্গাদের রাতের আঁধারে মিয়ানমার পাঠিয়ে আনা হয় চালান। চালান পৌঁছানোর পর ১ লাখ ইয়াবার জন্য রোহিঙ্গাদের দেয়া হয় ৫ হাজার টাকা। পরে সেই ইয়াবা পাহাড়ি রাস্তা ও উপ-সড়ক দিয়ে পৌঁছানো হয় কক্সবাজারে।
বর্তমানে প্রশাসনের হাতে ইয়াবা ও অস্ত্র সহ জিয়াবুল আটক হওয়ায় তার তার এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে যাচ্ছে বোনের জামাই সব্বির আহমদ।
সীমান্তের লোকজন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার আগে উখিয়াতে ইয়াবার চালান তেমন আসত না। কিন্তু ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার পর কিছু কিছু চালান আসতে শুরু করে। সম্প্রতি টেকনাফে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তোড়জোড়ের কারণে উখিয়া দিয়ে ইয়াবার চোরাচালান অনেক বেড়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় গরিব ছেলেদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে এ ব্যবসায় যুক্ত করছে কারবারিরা।
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে অর্ধশতাধিক ইয়াবা ডন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। তারাই ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পুরনো সিন্ডিকেটের সঙ্গে আলোচনা করে চালান এনে তুলে দিচ্ছে স্থানীয় সিন্ডিকেটের কাছে।
আবার অনেকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে রওনা দিয়ে ভোর হওয়ার আগেই মিয়ানমার থেকে চালান নিয়ে ফিরে আসছে বলে জানান তারা।উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, ইতিমধ্যে ২জন ইয়াবা গডফাদার বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। আটক করা হয়েছে চিহ্নিত বেশ কয়েকজন ইয়াবা ডনকে। তবে এখনো অনেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে তাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-