দুর্নীতির খোঁজে কক্সবাজার আসছেন দুদক টিম

ডেস্ক রিপোর্ট – স্বাস্থ্যের সেই আবজাল হোসেন দম্পতির নামে লুকিয়ে রাখা সম্পদ ও দুর্নীতির নতুন মোড় নিতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে বিভিন্ন জেলায় আবজাল দম্পতির নামে লুকিয়ে রাখা সম্পদ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।

দুদকের টিম লুকিয়ে রাখা সম্পদ ও আর্থিক অনিয়ম উদঘাটনে মাঠে নামছে। এ টিম স্বাস্থ্যের তিন কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে। দুদকের এ বিশেষজ্ঞ টিমটি আজ কক্সবাজারে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করবে। এরপর তারা ফরিদপুর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ সাতটি জেলায় যাবেন।

ইতিমধ্যে ওইসব জেলা থেকে আবজাল দম্পতির নামে-বেনামে থাকা সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। দুদক জানায়, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ক্রয় সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে আবজাল হোসেনের স্ত্রী রুবিনা খানমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতি বিষয়ে কাজ করবে নব গঠিত এ বিশেষজ্ঞ কমিটি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর গত ১৫ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বিশেষজ্ঞ তিন কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত টিমকে আগামী ৩০ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম যাচাই করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে আপনার অধিনস্ত মেডিকেল যন্ত্রপাতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তিনজন কর্মকর্তা সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে টিমের সদস্যদের নাম, পদবি এবং ফোন নম্বর দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে অবহিত করার অনুরোধ করা গেল।

চিঠিতে আরও যা বলা হয়, গঠিত বিশেষজ্ঞ টিমকে আজ (২০ মার্চ) কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে উপস্থিত হয়ে অনুসন্ধান টিমের সদস্য দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. সহিদুর রহমানের উপস্থিতিতে যন্ত্রপাতি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত কর্মকা যাচাই করে ৩০ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠিতে আবজাল, তার স্ত্রী ও নিকটাত্মীয়দের সব ব্যাংক হিসাবের বিষয়ে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। অভিযোগ ছিল আদালতের আদেশের পর দুই সপ্তাহে আবজাল হোসেন, তার স্ত্রী রুবিনা খানম ও অন্যান্য কয়েকজন নিকটাত্মীয়ের ব্যাংক হিসাবে নিয়মিত লেনদেন হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দাবি ছিল জব্দের আদেশ সময়মতো না পাওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে আবজাল দম্পতি ও তাদের সংশ্লিষ্টদের সম্পদ ফ্রিজ করতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবারও অনুরোধ করে দুদক।

এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি আবজাল, তার স্ত্রী রুবিনা খানম এবং তাদের ১৫ জন নিকটাত্মীয়ের আরও সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে সংস্থাটি। সুনির্দিষ্টভাবে এই ১৫ জনের সম্পদের খোঁজ চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোয় চিঠি দেয় সংস্থাটি।

তাদের ধারণা, আবজালের যেসব সম্পদের তথ্য তাদের হাতে আছে। তার বাইরেও অনেক সম্পদ রয়েছে। আবজাল দম্পতি তাদের নিকটাত্মীয়দের নামে ওইসব সম্পদ করেছেন। তাই ওইসব সম্পদের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন দফতরে চিঠি দেওয়া হয়। তারা হলেন আবজাল হোসেন, তার স্ত্রী রুবিনা খানম, আবজালের ছেলে রুলমান আহমেদ রাকিব, দুই মেয়ে আনিকা সুলতানা রূপা ও আদিবা সুলতানা রথী, শ্বশুর জয়নাল তালুকদার, শাশুড়ি রেহেনা বেগম, তিন শ্যালক রফিকুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম; তিন শ্যালকের স্ত্রী রুমানা, রুমা খান ও লিমা আক্তার। এ ছাড়াও দুই ভাই বেলায়েত হোসেন ও লিয়াকত হোসেন, দুই ভাইয়ের স্ত্রী ঝর্ণা আক্তার ও নাসরিন আক্তার লাকি। তাদের মধ্যে আবজালের দুই ভাই ও তিন শ্যালককে গত ৩১ জানুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এই পাঁচজনও স্বাস্থ্য অধিদফতরে কর্মরত। আবজালের দুই ভাই হলেন ফরিদপুর টিবি হাসপাতালে ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট বেলায়েত হোসেন ও জাতীয় অ্যাজমা সেন্টারে হিসাবরক্ষক লিয়াকত হোসেন।

তিন শ্যালক হলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক রকিবুল ইসলাম, উচ্চমান সহকারী রেজাউল ইসলাম এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অফিস সহকারী শরিফুল ইসলাম। দুদক সূত্র জানায়, ১২ ফেব্রুয়ারি দুদকের পক্ষ থেকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকা জেলা প্রশাসক এবং এসব জেলা রেজিস্ট্রারকে চিঠি পাঠিয়ে ১৫ জনের সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এই দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমে গত ১০ জানুয়ারি আবজালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। রুবিনা খানমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১৭ জানুয়ারি দুদকে হাজির থাকতে বলা হলেও তিনি সময় চেয়ে আবেদন করেন। এর আগে আবজাল ও রুবিনার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক।

আরও খবর