ফের সড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের

ডেস্ক রিপোর্ট – রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সু-প্রভাত বাসের চাপায় বিইউপির ছাত্র আবরার আহম্মেদ চৌধুরীর নিহতের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক গেট এলাকায় সড়কে তারা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করতে গেলে পুলিশ তাদের সড়িয়ে দেয়। এর কিচ্ছুক্ষণ পরে শিক্ষার্থীরা আবারও রাস্তায় এসে জড়ো হচ্ছে।

নিরাপদ সড়ক ও আবরারের নিহত হওয়ার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে রাস্তা অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে তারা রাস্তা অবরোধ করে। অবরোধকারীরা সকলই বিইউপির ও এআইইউবির শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীরা ‘বিচার চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে’ নানা স্লোগান দিচ্ছেন। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পাশেই অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।

এর আগে সহপাঠীর নিহতের ঘটনায় আট দফা দাবিতে বুধবার সারাদেশে ক্লাস বর্জন ও সড়ক অবরোধের আহ্বান জানিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় সাংবাদিকদের সামনে শিক্ষার্থী মায়েশা নূর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

মায়েশা নূর বলেন, বুধবার সকাল ৮ টা থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন করার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা আপনাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস বর্জন করে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নেবেন। আমাদের এই আন্দোলন গতবছরের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ধারাবাহিকতা। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। আমাদের এই আন্দোলনে গতবছরের মতো কোনও হামলা ও রক্তাক্ত চেহারা দেখতে চাই না। আমরা পুলিশ বাহিনীর কাছ থেকে নিরাপত্তা চাই। আমাদের আন্দোলনের সময় আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে মায়েশা নূর বলেন, আমরা ইতোমধ্যে আটদফা দাবি দিয়েছি। এটা গণমাধ্যমে চলে এসেছে। আমাদের এই আন্দোলন কোনও রাজনৈতিক আন্দোলন না। আমাদের এই আন্দোলনে রাজনৈতিক কোনও দল বা ব্যক্তিকে গ্রহণ করবো না। সবাই নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র নিয়ে আন্দোলনে যোগ দেবেন। আমরা আমাদের অভিভাবকদের এই আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করছি।

শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবি হলো-

১. পরিবহন সেক্টরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে এবং প্রতি মাসে বাসচালকের লাইসেন্সসহ সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করতে হবে।

২. আটক চালক ও সম্পৃক্ত সবাইকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৩. আজ থেকে ফিটনেসবিহীন বাস ও লাইসেন্সবিহীন চালককে দ্রুত সময়ে অপসারণ করতে হবে।

৪. ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সব স্থানে আন্ডারপাস, স্পিড ব্রেকার এবং ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।

৫. চলমান আইনের পরিবর্তন করে সড়ক হত্যার সাথে জড়িত সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৬. দায়িত্ব অবহেলাকারী প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশকে স্থায়ী অপসারণ করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭. প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চলাচল বন্ধ করে নির্দিষ্ট স্থানে বাসস্টপ এবং যাত্রী ছাউনি করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং

৮. ছাত্রদের হাফ পাস (অর্ধেক ভাড়া) অথবা আলাদা বাস সার্ভিস চালু করতে হবে।

এর আগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা গেট এলাকায় সু-প্রভাত বাসের চাপায় বিইউপির শিক্ষার্থী আবরার আহম্মেদ চৌধুরী নিহত হন। তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আরিফের বড় ছেলে।

আবরার আহমেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন তার সহপাঠীসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় প্রগতি সরণিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আরও খবর