অনলাইন ডেস্ক : বিশ্বে যতগুলো শান্ত দেশ আছে তার অন্যতম নিউজিল্যান্ড। এজন্য অনেক মানুষ অভিবাসী হয়ে সেখানে চলে যান শান্তিতে বসবাসের জন্য। কিন্তু সেই শান্তির দেশে দুটি মসজিদে শুক্রবার সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন মুসলিম। তাদের বেশির ভাগই অভিবাসী। নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ হচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড, লন্ডনের ডেইলি মেইল সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় এমন তালিকা প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশ করা হয়েছে তাদের ছবি, নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। এর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশি, ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মিশর, সিরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিজি, জর্ডান, সৌদি আরব, সোমালিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
নিহতদের মধ্যে রয়েছে দুইটি শিশু ও ২টি কিশোর। তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট শিশুটির বয়স মাত্র তিন বছর। তার নাম মুকাদ ইব্রাহিম। নিহত আরেকটি শিশু হলো আবদুল্লাহ দিরিয়া। তার বয়স ৪ বছর। নিহত দুই কিশোর হলো সায়েদ মিলনে (১৪) ও হামজা (১৬)। ওই তালিকায় আরো নিহতের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন- ওসামা আদনান আবু কাইক (৩৭), মহসিন আল হারবি (৬৩), জিহান রাজা (৩৮), লিন্ডা আর্মস্ট্রং (৬৫), কামাল দারিশ (৩৯), মাহবুব খন্দকার (৬৫), খালেদ মুস্তফা (৪৫), ড. হারুন মাহমুদ (৪০), মোহাম্মদ আবদুস সামাদ (৬৬), নাঈম রশিদ ও তার ছেলে তালহা (২১), হুসনে আরা পারভিন (৪২), আলি ইলমাদানী (৬৬), তরিক রহমান (২৪), সৈয়দ জাহানদাদ আলি (৪৩), মনির সোলায়মান (৬৮), ওজায়ের কাদের (২৪), মোহাম্মদ ইমরান খান (৪৭), আমাদ জামালুদ্দিন আবদুল গনি (৬৮), সৈয়দ আরীব আহমেদ (২৬), মাতুল্লাহ সাফি (৬৫), হুসাইন মোস্তফা (৭০), রমিজ ভোরা (২৮), লিলিক আবদুল হামিদ (৫৮), হাজী দাউদ নবী (৭১), ফরহাজ আহসান (৩০), মোহাম্মদ আলি ভোরা (৫৮), মোজাম্মেল হক (৩০), গোলাম হুসেইন (৬০), আত্তা ইলায়ান (৩৩), করম বিবি (৬০), হুসেইন আল উমারি (৩৬), মুসা ওয়ালি সুলেমান প্যাটেল (৬০), মোহাম্মদ ওমর ফারুক (৩৬), আবদেল ফাত্তাহ কাসেম (৬০), জুনায়েদ ইসমাইল (৩৬) ও আশরাফ আলী (৬১)। নিখোঁজ রয়েছেন জাকারিয়া ভুঁইয়া নামে এক অভিবাসী। নিহতদের মধ্যে পাঁচ বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল শফিকুর রহমান ভুঁইয়া। তার মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবদুস সামাদ ও গৃহবধূ হোসনে আরা ফরিদ।
নিহতের তালিকায় থাকা ছোট্ট শিশু মুকাদ বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে ওইদিন আল নূর মসজিদে গিয়েছিল। বাবা ও ভাই সেদিন পালিয়ে জীবন রক্ষা করতে পারলেও শিশু মুকাদ জঙ্গি ব্রেনটন টেরেন্টের হাত থেকে রেহাই পায়নি। আফগান বংশোদ্ভূত প্রকৌশলী দাউদ নবী বীরত্বের সঙ্গে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন সেদিন। ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতো কিশোর সায়াদ মিলনে (১৪)। মায়ের সঙ্গে আল নূর মসজিদে তার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নের সমাপ্তি ঘটলো। আর মাঠে দেখা যাবে না সায়াদকে। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ থেকে আসা নাইম রশিদ (৫০) অনেকটা সময় বেঁচেছিলেন। তবে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মৃত্যু হয় এই বীরের। নিহত হয়েছেন নাইম রশিদের ছেলে তালহা রশিদও। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বিয়েও ঠিক হয়ে গিয়েছিল তার। সাত মাস বয়সী ও তিন বছর বয়সী দুই শিশুসন্তান রেখে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ভারতের হায়দরাবাদ থেকে আসা ফারহাজ আহসান। নিহত হয়েছেন সিরিয়া যুদ্ধে শরণার্থী খালেদ মোস্তফা। যুদ্ধে অস্ত্রের ঝনঝনানি আর বুলেটের আওয়াজকে ত্যাগ করে শান্তিতে বাঁচতে নিউজিল্যান্ড এসেছিলেন তিনি। সেই অস্ত্র থেকে রেহাই পায়নি তার জীবন। এ ঘটনায় তার এক ছেলে নিখোঁজ রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে নাগরিক হুসাইন আল ওমারি (৩৫) ও জান্নাহ ইজাত রয়েছেন নিহতের তালিকায়। ঘটনার দিন সাত ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক আল নূর ও লিনউড মসজিদে ছিলেন। পাঁচজন নিরাপদে পালিয়ে আসতে পারেন। তবে নিহত হয়েছেন লিলিক আবদুল হামিদ।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-