ডেস্ক রিপোর্ট :
মাদক ইয়াবানগর হিসেবে খ্যাত টেকনাফে এ পর্যন্ত ৫৯ মাদক ব্যবসায়ী প্রাণ হারিয়েছে। পুলিশের দাবি অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কখনও বন্দুকযুদ্ধে আবার মাদক ব্যবসায়ীদের নিজেদের অন্তর্কোন্দলের জের হিসেবে গোলাগুলিতে এরা নিহত হয়েছে। ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদকের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অভিযান অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটেও মিয়ানমারে উৎপাদিত ইয়াবার চালান এখনও বাংলাদেশে ঢুকছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সকল সংস্থার জোরালো পদক্ষেপের পরও কারা ইয়াবা সিন্ডিকেট করে অবৈধ ব্যবসা করছে, কারা এ সিন্ডিকেটের গডফাদার এবং পূর্বের রুট বদলে এখন কোনপথে ইয়াবা আনছে এ নিয়ে সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নানা তথ্য।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, টেকনাফে ১০২ ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণের পর মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন টেকনাফ এলাকাকে এখন ইয়াবা কারবারিরা এখন আর নিরাপদ মনে করছে না। এখন এ সিন্ডিকেট উখিয়ার দুর্গম সীমান্ত এলাকাকে নতুন রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে। এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে শীর্ষে রয়েছে টেকনাফের সাইফুল, মাদু ও উখিয়ার খোকা নামের ইয়াবা কারবারিরা। উখিয়ার থাইনখালির রহমতের বিল, পালংখালি, কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প, বালুখালি, ডেইলপাড়া, ডিগলিয়া পালং ও তুমব্রু এলাকা থেকে এখন ইয়াবার বড় চালানগুলো আসছে। আগেও এ রুট দিয়ে ছোটখাটো চালান মিয়ানমার থেকে চলে আসত। কিন্তু টেকনাফ ছিল মূল পয়েন্ট। এখন টেকনাফের বদলে এ রুটেই ইয়াবা আসার বিস্তৃতি ঘটেছে। ইয়াবা কারবারিরা সীমান্তের ওপারের ঢেঁকিবুনিয়া, চাকমাকাটা ও তুমব্রু পয়েন্ট পর্যন্ত ইয়াবার চালান পৌঁছে দিচ্ছে। মংডু টাউনশিপ থেকে সরাসরি ঢেঁকিবুনিয়া পৌঁছুতে সড়ক যোগাযোগ চালু হওয়ায় ইয়াবা কারবারিদের সুবিধা হয়েছে। এ সড়কে বিশেষ করে মোটরসাইকেলযোগে ইয়াবার চালান নিয়ে আসা হচ্ছে। এর পাশাপাশি উভয় পাড়ের চোরাকারিরা বাংলাদেশী মোবাইল সিম ব্যবহার করে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেকনাফের হাজী সাইফুল করিম, মাহমুদুল করিম ওরফে মোঃ হোসেন মাদু, উখিয়ার কলিম উল্লাহ ওরফে লাদেন ও মাহমুদুল হক ওরফে মাহমুদুল করিম খোকা এখন ইয়াবা চোরাকারবারের নেপথ্যে মূল ভূমিকা পালন করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল করিম ওরফে হাজী সাইফুল ও মাহমুদুল করিম মাদুসহ অন্তত এক ডজন গডফাদার এখনও ইয়াবার চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও এদের নাম রয়েছে। মাহমুদুল হক মাদু ইয়াবা চোরাচালানিদের ডন হিসেবে পরিচিতি নিয়ে এ পর্যন্ত অধরাই রয়ে গেছে। এ চোরাকারবারির সহযোগীদের কেউ কেউ ইতিপূর্বে গ্রেফতার হয়ে জেল থেকে বেরিয়ে এসে পুনরায় মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে রয়েছে। মাদুর তিন সহোদর ও এক শ্যালক ইয়াবা চোরাকারবারে যুক্ত। মাহমুদুল করিম মাদুসহ তার অপর ভাইদের বিরুদ্ধে গত ১০ জানুয়ারি পুলিশের ওপর হামলা, সরকারী দায়িত্ব পালনে বাধা ও দু’জনকে হত্যার একটি ঘটনায় টেকনাফ থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এছাড়া স্বর্ণের বার ও ইয়াবার চালান আটকের ঘটনায়ও উক্ত মাদুর বিরুদ্ধে লোহাগাড়া ও কক্সবাজার থানায় আরও দুটি মামলা রয়েছে।
সূত্র জানায়, এক সময় প্রবাসে থাকা টেকনাফের সাবরাং উত্তর নয়াপাড়ার এই মাদু দেশে এসে স্বর্ণ ও ইয়াবার চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ থানায় দায়ের কৃত একটি মামলার তথ্য অনুযায়ী সাবরাং কচুবুনিয়ার ইয়াবা ব্যবসায়ী আবুল কালাম ও রশিদ আহমদ প্রকাশ ডেইলাকে পুলিশ আটক করেছিল। আটকের পর তাদের নিয়ে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধারে গেলে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এতে ওই দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মাদুর মালিকানার একটি প্রাইভেটকার থেকে স্বর্ণের বারসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মাদু ও তার ভাই জাহেদ হোসেনসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের হয়। মামলায় উল্লেখ রয়েছে এসব আসামি অবৈধ অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসাসহ মানবপাচারেও জড়িত।
বিজিবি সূত্রে জান গেছে, ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল নাফ নদী দিয়ে টেকনাফ এবং টেকনাফ থেকে সড়ক পথে চট্টগ্রামে পাচারের সময় কিছু স্বর্ণের বারসহ সাবরাংয়ের মোঃ ইদ্রিসকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ইদ্রিস পুলিশকে জানায়, সে এর আগেও একাধিকবার স্বর্ণের চালান নিয়ে চট্টগ্রামে গেছে। গ্রেফতারের পর মোঃ ইদ্রিস জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও ইয়াবা ও স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িয়ে গেছে। রবিবার টেকনাফ থানার ওসি জানিয়েছেন, ইয়াবা ও সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে মাদুকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, উখিয়ায় এখনও যারা ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে আছে পুলিশী ডায়েরিতে তাদের মধ্যে রয়েছে জালিয়াপালংয়ের জসিম উদ্দিন, জাফর আলম, আবদুর রহিম, ফজল কাদের, আতাউল্লাহ, গিয়াস উদ্দিন, হরিণমারার নুরুল কবির, হিজুলিয়ার বাবুল মিয়া ও তার ভাই দেলোয়ার হোসেন, মোক্তার, মরিচ্যাবাজারের ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন, ঝাউতলা বাজারের মফিজ ড্রাইভার, ক্লাইশাপাড়ার ফারুক হোসেন, সুমন, সেলিম উদ্দিন, হৃীলার পূর্ব পানখালির নুরুল আলম, লম্বাঘোনার মাহমুদুল করিম খোকা ও সাহাবউদ্দিন, বালুখালির শাহজাহান, এনামুল হক, রহমতের বিলের কলিম উল্লাহ লাদেন, মোঃ সোহেল, জামাল, কামাল, ঘুরা মিয়া, পালংখালির নলবুনিয়ার আলী আহমেদ এবং টিএ্যান্ডটি এলাকার হুমায়ুনসহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেক। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী শীর্ষস্থানীয় ইয়াবা চোরাকারবারি সাইফুল করিম কখনও চট্টগ্রাম, কখনও কক্সবাজারে থেকে মিয়ানমারে অবস্থানরত এক মামার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ইয়াবার চালান আনছে।
/জনকন্ঠ
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-