সাইফুল হক মোল্লা দুলু, কিশোরগঞ্জ
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে উগ্র বর্ণবাদী সন্ত্রাসীর নৃশংস হামলায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর ওমর জাহিদ মাসুম (৩৪)। সবার মতো তিনিও শুক্রবার মসজিদ আল নূরে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। তার চোখের সামনেই অতর্কিত গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়তে থাকেন মসজিদে আসা মুসল্লিরা। একটি গুলি তার পেটের পাশ দিয়ে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মাসুম মরার ভান করে রক্তাক্ত মানুষের স্তূপে পড়ে থাকেন। দীর্ঘসময় এভাবে পড়ে থাকার পর পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরলেও হামলার ভয়াবহতা ও নৃশংসতায় বারবার আঁতকে উঠছেন তিনি।
গতকাল শনিবার বিকেলে ওমর জাহিদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। সমকালকে তিনি বলেন, ‘দুপুর সাড়ে ১২টায় মসজিদে ঢুকে দ্বিতীয় সারির বাঁ দিকে বসি। পাশে চাঁদপুরের বন্ধু এমবি মোজাম্মেল। আমরা কথা বলছিলাম। নামাজ শুরুর আগে খুতবা পাঠের আজান দেন ড. সামাদ। ইমাম সাহেব খুতবা পাঠ শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে এক বন্দুকধারী অবিরাম গুলিবর্ষণ শুরু করে। একে একে মসজিদে আসা মুসল্লি মারা পড়েন। ইমামসহ ড. সামাদও গুলিবিদ্ধ হয়ে মেঝেতে পড়ে যান। আমার পাশে থাকা বন্ধু মোজাম্মেলও গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় একটি গুলি আমার পেট স্পর্শ করে, আরেকটি কাঁধে এসে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে মরার মতো শুয়ে পড়ি। চারপাশে তখন লাশের স্তূপ। কতক্ষণ শুয়ে ছিলাম জানি না। পরে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
ওমর জাহিদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘চোখের সামনে বন্ধু মোজাম্মেলের লাশ। আমার সামনে বাঁয়ে, ডানে সোমালিয়া, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মুসল্লিদের একে একে গুলি খেয়ে মরে যেতে দেখেছি। সে কী নৃশংস দৃশ্য। আল্লাহর রহমতে সৌভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে গেছি। কিন্তু ভয়াবহ এ ঘটনা আমাকে সারাজীবন তাড়িয়ে বেড়াবে।’ জাহিদ জানান, তার ব্যক্তিগত গাড়িটি মসজিদের পাশে পড়ে আছে। এখন পুলিশ অনুমতি দিলে তিনি সেটি আনবেন।
নিউজিল্যান্ডপ্রবাসী ওমর জাহিদ কটিয়াদীর মুমুরদিয়া ইউনিয়নের ধনকীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি মরহুম হাবিবুর রহমান দয়ালের ছেলে। মিরপুর বাঙলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমান তিনি। পড়াশোনা শেষ করে সেখানেই একটি সুপার শপ ও একটি পেট্রোল পাম্পে ব্যবস্থাপকের চাকরি নেন। মসজিদ আল নূর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে সস্ত্রীক বসবাস করেন জাহিদ।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-