সোয়েব সাঈদ :
কক্সবাজার জেলার গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা রামুতে জমে উঠেছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। বিএনপি-জামায়াতের কোন প্রার্থী না থাকলেও জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারনা। এতে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন, আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রিয়াজ উল আলম (নৌকা) এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল (আনারস)। নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন।
তৃতীয় ধাপে আগামী ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মাঝেও বিরাজ করছে উৎসব আমেজ। কারা হবেন উপজেলা পরিষদের অভিভাবক এনিয়ে হাট-বাজার আর দোকান-পাট থেকে শুরু করে সর্বত্র চলছে নানা আলোচনা।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতাকারি দুই প্রার্থীই আওয়ামীলীগ সমর্থিত। বিএনপি’র নির্বাচন বর্জন ও অন্যান্য বিরোধীদলের কেউই মনোনয়ন না নেয়ায় এবারের রামু উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে। নিজেদের মধ্যে হলেও বেশ কিছু কারনে এবারের নির্বাচন হবে তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ।
রামু উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রিয়াজ উল আলম। অপরদিকে জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হন উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল। এজন্য তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আহমেদুল হক চৌধুরী বিজয় লাভ করেন। নির্বাচিত হওয়ার ৭ মাস পর দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করে। এ কারনে চেয়ারম্যান পদে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হন রিয়াজ উল আলম।
বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে উপজেলাবাসীর কাছে সুপরিচিতি হন। সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক কাজও তাকে সফলতা এনে দিয়েছে।
শিক্ষাখাতে বিশেষ অবদানের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম ৩ বার জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। খুব বেশি দক্ষ না হলেও ক্ষমতার সুষ্ঠু ব্যবহার ও জনসম্পৃক্ততার কারণে তিনি অর্জন করেছেন জনগনের আস্থা ও ভালোবাসা। অতি অল্প সময়ে হয়ে উঠেন অধিক জনপ্রিয়। এসব কারনে শক্ত প্রতিদ্বন্ধি থাকা সত্ত্বেও নির্বিঘেœ আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহেল সরওয়ার কাজল আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতা। তিনি বর্নাঢ্য রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তাঁর পিতা মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী সাবেক রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য এবং কক্সবাজার জেলা শ্রেষ্ঠ সমাজসেবক ছিলেন। পিতার সুনাম এবং নিজের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন সোহেল সরওয়ার কাজল। তিনি ইতিপূর্বে রামু উপজেলা পরিষদ এবং সদর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। দীর্ঘদিন রামু উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাঁর ছোট বোন নাজনীন সরওয়ার কাবেরী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। দলীয় প্রতীক না পেলেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
তাছাড়া রামু উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের তৃণমুল নেতা কর্মীদের কাজলের পক্ষে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে, স্থানীয় সাংসদ কোন প্রকার প্রভাব বিস্তার না করলে, কাজলের ব্যক্তি ইমেজ, দীর্ঘ দিনের তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, পারিবারিক ঐতিহ্য,পাশাপাশি বিএনপির সমর্থন, সবদিক বিবেচনা করলে এবারে বিজয়ের মালাটা তার গলায় যাওয়ার সম্ভাবনাটা খুব বেশি বলে মনে করছেন অনেক ভোটার ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মী।
অপরদিকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ৪জন। এরা হলেন, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আলী হোসেন (টিউবওয়েল), আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল্লাহ সিকদার (চশমা), উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও রামু উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি সালাহ উদ্দিন (তালা) এবং ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক হেলাল উদ্দিন (উড়োজাহাজ) ।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ৩ জন। এরা হলেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মুসরাত জাহান মুন্নি (প্রজাপতি), রামু উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোয়ারা ইসলাম নেভি (ফুটবল) এবং উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি আফসানা জেসমিন পপি (কলসি)।
তবে কাংখিত এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধি ৯ প্রার্থীর মধ্যে কারা শেষ হাসি হাসবেন, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ২৪ মার্চ পর্যন্ত।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-