এম. বেদারুল আলম :
শহরের অলিগলির মুদির দোকানে বিক্রি হচ্ছে খোলা ভোজ্য তেল। সরকারি নজরদারি না থাকায় দেদারসে বিক্রি হচ্ছে এ সব তেল। দামে সস্তা এবং সহজলভ্য হওয়ায় ক্রেতারা ঝুকছে এ সব তেলে। বিশেষ করে বড় বাজারের কয়েকজন নামকরা ব্যবসায়ি পুরো কক্সবাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে এসব তেল যা স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। এ সব তেল বিক্রি করতে প্রয়োজন পড়েনা কোন লাইসেন্স। মেয়াদোত্তীর্ণ এ সব তেলে ভাজি পোড়া নাশতা তেরি করে শহরের অধিকাংশ হোটেল এবং নাস্তার দোকানে।
জেলা শহরে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ খোলা তেল ব্যবহার করে বলে জানা গেছে। যার কারনে উচ্চমাত্রায় গ্যাস্ট্রিক, আলসার, কোলেস্ট্রল বৃদ্ধির অন্যতম কারন বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। বাজার তদারকি না থাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা না করায় দেদারসে এসব খোলা তেল বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়িরা। শহরের বড় বাজারের ৪ জন বড় ব্যবসায়ি নি¤œমানের এসব তেল পুরো কক্সবাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে অতি মুনাফার লোভে।
শহরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন কোমল পানিয় এর খালি বোতলে করে ড্রাম থেকে ভরে বিক্রি করছে এ সব খোলা ভোজ্য তেল।
বিশেষ করে এ সব তেলের মধ্যে বিভিন্ন নাম ও দেয়া হয়েছে দামের তারতম্য করার সুবিধার জন্য। এ সব তেলের নাম দেওয়া হয়েছে সয়াবিন, সুপার, পাম্প তেল, সাদা সুপার, অর্জিনাল সয়াবিন ইত্যাদি। বিভিন্ন নামে তেল বিক্রি করলেও এ সব তেলে মরা মাছি, তেলাপোকা, মশা, পিঁপড়াসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড় থাকার কারনে মারাত্বক স্বাস্থ্যহানি ঘটছে।
শহরের বড়বাজার, আইবিপিমাট, কালুর দোকান, বাহারছড়াবাজার, কানাইয়ারবাজার, কোর্টবিল্ডিং সংলগ্ন অস্থায়ি বাজার, কলাতলি বাজারসহ ছোটখাট সব মুদির দোকানে এ সব খোলা তেল পাওয়া যাচ্ছে। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে বিনা বাধায় অস্বাস্থ্যকর এ সব খোলা তেল বিক্রি করছে দোকানিরা।
এদিকে গতকাল বোতলজাত করে খোলা তেল বিক্রির সময় বোতলে ৭টি মরা মাছিসহ শহরের কানাইয়ারবাজার এলাকা থেকে এক মুদির দোকানদারকে আটক করেছে কক্সবাজার মডেল থানার পুলিশ। জব্দকৃত বোতলে ৭টি মরা মাছি ভাসতে দেখা গেছে উক্ত সয়াবিন তেলের বোতলে ।
কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন খন্দকার জানান, একজন ক্রেতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল সন্ধ্যায় শহরের মহিলা কলেজ সংলগ্ন কানাইয়ার বাজার এলাকায় মুদির দোকানে অভিযান চালিয়ে ক্রেতার সাথে দূর্ব্যবহার এবং খোলা তেল বোতলজাত বিক্রি করার জন্য দোকান মালিককে আটক করা হয়েছে। সাথে জব্দ করা হয়েছে ৭/৮টি মরা মাছিসহ তেলের বোতল।
অভিযান পরিচালনাকারি মডেল থানার উপ সহকারি পুলিশ পরির্দশক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বেগ জানান, স্যারের নির্দেশে কানাইয়ারবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভেজাল ভোজ্য তেল বিক্রির কারনে দোকানদারকে আটক করা হয়েছে সাথে যে তেলের বোতল পাওয়া গেছে তাতে ৬/৭টি মরা মাছি ভাসছে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর যা সহজে বুঝা যায়।
কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী এ ব্যাপারে জানান, উক্ত অভিযানের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ। কিন্তু এ অভিযান যেন প্রতিদিনই হয় কেননা আমরা ভেজালের উপর বসবাস করছি। জেলা প্রশাসনের কাছে আমরা আগেও দাবি জানিয়েছিলাম একটি ভেজাল সনাক্তকরণ মেশিন আনার জন্য। আমরা ভেজাল বললে তো হবেনা তা যাছাই এর জন্য যন্ত্র দরকার। আজো বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমাদের ভেজাল সনাক্তকরণ মেশিণ সরবরাহ করতে পারেনি। আমরা সংগঠনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে দাবি জানাচ্ছি ভেজাল বিরোধী অভিযান যেন আরো জোরদার করা হয়। অন্যতায় পাবলিক হেল্থ অপুরনীয় ক্ষতির মুখে পতিত হবে।
খোলা বাজারের এ সব তেল স্বাস্থ্যের উপর কী প্রভাব ফেলে বা এর ক্ষতিকারক দিক বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহবুবুর রহমান বলেন- খোলা বাজারের যে ভোজ্য তেল আছে তাতে মারাত্বক কোলেষ্ট্রল আছে যা হার্টের জন্য মারাত্বক। বিশেষ করে আলসার, গ্যাষ্ট্রিক, পরিপাকতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে। এ সব তেল বাজারে শোধন করে বিক্রি করা উচিত। অন্যথায় হার্টের ঝুঁকি বাড়বে।
কক্সবাজারে বাজার মনিটরিং এর দূর্বলতার কারনে খোজা বাজারে এসব তেল বিক্রি বাড়ছে। নিয়মিত বাজার তদারকি করা না হলে এ সব ব্যবসায়িরা পাবলিক হেল্থের অপূরনীয় ক্ষতির দিকে ঠেলে দিবে। প্রতিদিনই বাজার মনিটরিং এবং ভেজাল বিরোধী অভিযান জোরদার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতনমহল।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-