জারের পানিতে ডায়রিয়া ও কলেরার জীবাণু

ডেস্ক রিপোর্ট- সারাদেশের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিস-আদালতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সরবরাহ হচ্ছে জারভর্তি পানি। এসব জারের অধিকাংশেরই পানিতে রয়েছে ডায়রিয়া ও কলেরার জীবাণু। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।  বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত জারের পানির নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোর অধিকাংশেই উচ্চমাত্রায় কলিফর্মের (ডায়রিয়া ও কলেরার জীবাণু) উপস্থিতি শনাক্ত করেছে পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি।

গত বছরের ১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর, ক্যান্টনমেন্ট, ভাসানটেক, পল্টন, বিমানবন্দর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, ধানমন্ডি, তেজগাঁও, শেরেবাংলা নগর, যাত্রাবাড়ী, কাফরুল, রমনা ও লালবাগ থানার ২৬টি অফিসপাড়া ও জনবহুল স্থানের রাস্তার পাশ থেকে জারের পানির ৮০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

অভিজ্ঞ স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের সংগৃহীত এসব নমুনা পাবলিক হেলথ ল্যাবে পরীক্ষা করার পর ৪৪টি নমুনাতেই কলিফর্মের উপস্থিতি পাওয়া গেছে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে। আটটি নমুনায় কলিফর্ম ও ফিকাল কলিফর্ম (মলমূত্রের সঙ্গে ছড়ানো কলিফর্ম) উভয়েরই উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ওই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্স রিসার্চ অ্যান্ড সায়েন্সেসের ফুড রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক লতিফুল বারী। কলিফর্ম ছাড়াও এসব জারের পানি আরো নানাভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, জারের পানি দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকার কারণে তা গরম হয়। ওই গরমে প্লাস্টিকের উপাদানগুলো পানিতে মিশে যায়। এসব পানি পান করলে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা থাকে। অন্যদিকে সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই এসব জারের পানি বাজারজাত করা হচ্ছে। এ কারণে এগুলোয় কলিফর্ম ও ফিকাল কলিফর্মের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনের পটভূমিতে বলা হয়, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অধিক জনসংখ্যার চাপে ঢাকা শহরে নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরনো স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে দূষিত হচ্ছে সনাতনী পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। এ দূষিত পানিই সরবরাহ হচ্ছে নগরবাসীর কাছে।

এতে আরো বলা হয়, দেশের ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। দেশে মোট মৃত্যুর ২৪ শতাংশই ঘটছে কোনো না কোনো পানিবাহিত রোগের কারণে। অনিরাপদ পানি পানের কারণে প্রাদুর্ভাব ঘটছে ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস, টাইফয়েডসহ নানা পানিবাহিত রোগের। দেশে প্রতি বছর ডায়রিয়ার কারণে এক লাখ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। এ অবস্থায় নিরাপদ পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা তৈরি হচ্ছে।

এর সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা অফিস, বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, চায়ের দোকান ও রাস্তার পাশের দোকানে জারের পানি সরবরাহ করছে, যার অধিকাংশই অনিরাপদ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) ২৫০টি জারের পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছিল। সে সময়ও এসব নমুনায় উচ্চমাত্রায় কলিফর্ম ও ফিকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ফুড সেফটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বেলাল হায়দার বলেন, উচ্চমাত্রায় কলিফর্ম থাকলে পানিবাহিত ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, জন্ডিসসহ নানা রোগ হতে পারে। আর ফিকাল কলিফর্মের উপস্থিতিতে পানি পানযোগ্যই থাকবে না।

জারের পানিতে কলেরা ও ডায়রিয়ার জীবাণু থাকলেও দেশে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) এ নিয়ে দীর্ঘদিন কোনো তত্পরতা দেখা যায়নি। সম্প্রতি উচ্চ আদালত বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করায় নড়েচড়ে বসে বিএসটিআই।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স নেয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে পানির নমুনা সংগ্রহ করে বিএসটিআই। এর মধ্যে কয়েকটিতে কলিফর্মের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া যায়। এর পর তিনটি প্রতিষ্ঠানের সনদ বাতিল ও সাতটির সনদ স্থগিত করে বিএসটিআই।

আরও খবর