খেলার মাঠ শূন্য কক্সবাজার

মাহাবুবুর রহমান :

কক্সবাজার শহরের সাহিত্যিকা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর ছাত্র আজিজুর রহমান বিকালে খেলতে গেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস মাঠে। কিন্তু সেখানে আগে থেকেই একই এলাকার কয়েক জন বড় ভাই খেলছে তাই তারা ক্রিকেটের ব্যাট, প্যাড বুকে নিয়ে বসে আছে। তার মত আরো ২০/২৫ জনের মত শিশু বয়সের ছেলেদের দেখা গেছে খেলার সরঞ্জাম নিয়ে বসে থাকতে।

আবার একই মাঠের এক পাশে দেখা যাচ্ছে আরো কিছু কিশোর বয়সের ছেলেদের মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। আলাপ কালে আজিজুর রহমান বলেন, আগে স্কুল ছুটির পরে এই মাঠে আমরা নিয়মিত খেলতাম কিন্তু এখন মাঠ ছোট হয়ে যাওয়াতে কয়েকজন ছাড়া আমরা খেলতে পারিনা। যারা আগে এসে মাঠ দখল করতে পারে তারাই খেলে আমরা বসে থাকি। মোবাইল নিয়ে ব্যাস্ত এক কিশোর নাজমুল আলম বলেন,আমার বাড়ি উত্তর রুমালিয়ারছড়া বর্তমানে পার্শ্ববর্তি টেকনিক্যাল কলেজে পড়ি। আমার শৈশব কেটেছে এই মাঠে খেলা করে।

কিন্তু এখন খেলার মাঠ নেই তাই এখন মোবাইলে বিভিন্ন গেইম বা ফেইসবুক দেখে বিকালের সময় কাটায়। আগে এই মাঠ বড় থাকাতে ৪/৫টি গ্রুপ এক সাথে মিনিবার দিয়ে ফুটবল, ক্রিকেট খেললেও কোন সমস্যা হতো না কিন্তু এখন ১টি গ্রুপ ছাড়া কেউ খেলতে পারেনা। তাই বাকিদের বসে থাকতে হয়।

শহরের পৌর প্রিপ্যার‌্যাটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাজের পাড়ার আশরাফ বলেন, আমরা আগে বন্ধুরা সবাই মিলে প্রতিদিন বিকালে ঈদঁগাহ মাঠে ক্রিকেট বা দল বেধে ফুটবল খেলতাম। আমাদের সাথে বাহারছড়া থেকে বন্ধুরা খেলতে আসত কিন্তু এখন সেই ঈদঁদাহ মাঠে সরকারি ভাবে আরসিসি ঢালাই করে দেওয়া হয়েছে ফলে আর খেলতে পারিনা, আমি বুঝতে পারছিনা এই মাঠে আরসিসি ঢালাই দেওয়ার কি প্রয়োজন ছিল। এ সময় স্কুল ছাত্র, মনছুর, আলিফ, মুনির সহ অনেকে বলেন, শহরে এখন কোন মাঠ খালি নেই। কোথাও খেলার মত পরিবেশ নেই। সব জায়গায় মাঠ ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা বা ভবন করা হয়েছে সে জন্য আমরা খেলতে পারিনা।

শহরের আমিন মিয়ে বাই লেইন এলাকার বাসিন্দা মুফিজুর রহমান বলেন, আগে আমাদের ছেলে মেয়েরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বিকাল বেলা নিয়মিত খেলা করতো কিন্তু এখন দেখছি সেই মাঠে আরো একটি ভবণ করা হচ্ছে। আগের একটি ভবন সেখানে ছিল। সরকার চাইলে সেই ভবনকেই বহুতল ভবন করতে পারতো তাহলে মাঠটি রক্ষা পেত কিন্তু এখন মাঠ গুলো চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এতে ছেলে মেয়েদের খেলাধুলার আর কোন জায়গা থাকছে না।

এদিকে বাহারছড়ার বাসিন্দা ডিএসএ যুগ্ন সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন,আমরা নিজেরা বাহারছড়া গোল চত্তর মাঠে খেলাধুলা করেছি কিন্তু বছর খানেক ধরে সেই মাঠে উন্নয়ন সামগ্রি রাখার কারনে খেলাধুলা সব বন্ধ এবং শুনতে পাচ্ছি সেখানে আর খেলাধুলা করা সম্ভব নাও হতে পারে। এতে আগামী প্রজন্ম একটি অসুস্থ্য জাতি হিসাবে গড়ে উঠবে।

হোটেল মোটেল জোনের বাসিন্দা সরাফাত উল্লাহ বাবুল বলেন, এখন মাঠতো দূরের কথা ঠিকমত নিঃস্বাস ফেলার জায়গা নেই আগে এখানে প্রচুর খোলা মাঠ ছিল কিন্তু এখন সব গুলোতে বড় বড় বিল্ডিং গড়ে উঠেছে। আমাদের পাশে গনপূর্ত বিভাগের একটি মাঠ আছে কিন্তু সেটা ও অনিয়ম দূর্নীতির কবলে পড়ে হারাতে বসেছি।

পাহাড়তলী সমাজ কমিরি সর্দার মোঃরফিক বলেন,শহরের ভেতরেতো দূরের কথা শহরের আশপাশের এলাকা গুলোতে এখন কোন খেলার মাঠ নেই। আমাদের পাহাড়তলীতে আগে ৭/৮ টি মাঠ ছিল কিন্তু এখন কোন মাঠ নেই বল্লেই চলে ফলে উঠতি বয়সের ছেলেরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে এবং নানান ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

গাড়ীর মাঠ এলাকার সরওয়ার কামাল বলেন,আমরা ছোট বেলা থেকে জেলে পার্ক মাঠে খেলাধুলা করে বড় হয়েছি এখন শুনছি সেই মাঠে আর খেলতে দিচ্ছেনা। এতে এলাকার শত শত শিশু কিশোর বিপদগামী হতে পারে।
কক্সবাজার মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ রমজান আলী বলেন,আমরা ছোট বেলায় ফুটবল ছাড়াও কানামাছি,দাড়িয়াবান্ধা,ছোট বল নিয়ে সাতচারা সহ অনেক খেলা খেলেছি কিন্তু আজকালকার ছেলে মেয়েরা এসব খেলার নামও জানেনা। আর বেশির ভাগ স্কুল মাদ্রাসায় একটি করে ভলিবল খেলার নেট টাঙ্গানো থাকতো বিকাল হলেই এলাকার সবাই মিলে ভলিবল খেলতো কিন্তু এখন অনেকে ভলিবল খেলার নিয়মও জানে না। আসলে সব মাঠে স্থাপনা হওয়ার কারনে শিশু বয়স থেকে ছেলেরা ঘরমুখি হয়ে পড়ছে ফলে মোবাইল ছাড়া তাদের আর কোন বিনোদন মাধ্যম নেই। সরকারের উচিত হবে খেলার মাঠগুলোকে সব সময় সংরক্ষিত রাখা।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অনুপ বড়ুয়া অপু বলেন,এটা আসলে ঠিক খেলার মাঠগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে নতুন কোন মাঠ তৈরি করা যাচ্ছে না। এটা কোন ভাবেই একটি জাতির জন্য মঙ্গল জনক নয়। আমরা উন্নয়ন চাই তবে সেই উন্নয়নে যেন খেলাধুলাও থাকে। আর সরকার কিছু মাঠ নির্ধারিত করলেও সেখানে সাধারণ ছেলে মেয়েরা প্রবেশ করতে পারেনা ফলে সবাই সেই সুযোগ পাচ্ছেনা। আমি মনে করি প্রতিটি পাড়া মহল্লাতে একটি করে খেলার মাঠ নির্ধারিত রাখা দরকার।

এ ব্যপারে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, খেলাধুলা ছাড়া কোন মানুষ পরিপূর্ন হতে পারেনা। সুস্থ্য থাকার জন্য খেলা ধুলার কোন বিকল্প নেই তাই খেলার মাঠ খুবই জরুরী একটি জিনিস। কক্সবাজারে খেলার মাঠগুলো সংরক্ষণ করা এবং নতুন মাঠ সৃষ্টি করতে আমরা উদ্যোগ নেব।

আরও খবর