ডেস্ক রিপোর্ট – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে যেসব বিষয় জয়-পরাজয়ে ভূমিকা রাখবে তার মধ্যে অন্যতম ছাত্রীদের ভোট। ১৬ হাজার ২৫২ শিক্ষার্থীর এই ‘ভোট ব্যাংক’র অধিকাংশই সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
আসন্ন হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদের হলে ছাত্রলীগের প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র সংগঠন হলেও পাঁচ ছাত্রী হলের সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র প্যানেল। এখানে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ১৭ জন ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এসব হলে বাম সংগঠন ও ছাত্রদলের উল্লেখযোগ্য কোনো কিছু না থাকায় নির্বাচনে ছাত্রলীগের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থীরা।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ছাত্র হলের মতো ছাত্রী হলে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য নেই। এসব হলে প্রশাসনিকভাবে সিট দেওয়া হয়। পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে কোনো শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করতে পারেন না। ছাত্র হলের মতো ‘সিটের রাজনীতি’ না থাকায় রাজনীতি করতে কেউ বাধ্য নয়। যার কারণে এমন চিত্র তৈরি হয়েছে।
রোকেয়া হলে ভোট ভাগ হবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের
রোকেয়া হলের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে প্রার্থী দিয়েছে ছাত্রলীগ। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও রোকেয়া পরিষদ স্বতন্ত্র হিসেবে আংশিক প্যানেল ঘোষণা করেছে। যার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোট দুই ভাগ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা পেতে পারে ছাত্রলীগ। এখানে ১৩ পদের বিপরীতে লড়াই করবেন ৩০ জন।
হলটিতে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে প্রাচ্যকলার বিভাগের ইসরাত জাহান তন্বী, ‘বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার পরিষদ’ থেকে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রাফিয়া সুলতানা এবং রোকয়া পরিষদ থেকে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মৌসুমী।
রোকেয়া হলের ভোটার সংখ্যা চার হাজার ৬০৮ জন। তার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় দুই হাজার ৪০০ এর মতো। হলে প্রচারণায় ছাত্রলীগের প্রার্থীরা এগিয়ে থাকলেও স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থীরা চ্যালেঞ্জ জানাবেন তাদের। কোটা সংস্কার আন্দোলনে এ হলের ছাত্রীরা রাতেই বাইরে এসে আন্দোলনে যোগ দেন। ছাত্রলীগের রুম দখলের চেষ্টা প্রতিহত করতে আন্দোলনও করেন শিক্ষার্থীরা। সার্বিক দিক বিবেচনায় ছাত্র হলের মতো ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অবস্থা নেই ছাত্রী হলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব হলে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী রয়েছেন ২০০-৩০০ মতো। এর বাইরে প্রথমে ছাত্রলীগ করে পরে বৈধ সিটে ওঠা এরকম শিক্ষার্থীর সংখ্যা মিলিয়ে সর্বোচ্চ এক হাজার হতে পারে ছাত্রলীগের ভোটার। বাকি শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলনের প্রার্থী বা রোকেয়া পরিষদের প্রার্থীকে বেছে নিতে পারেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। আবার অনেকে প্যানেল বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত পছন্দ থেকে ভোট দেওয়ার তথ্য জানিয়েছেন।
ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী ইসরাত জাহান তন্বী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি। অন্য হলের তুলনায় আমাদের হলে যে প্রতিবন্ধকতা আছে সেগুলো দূর করতে কাজ করতে চাই। পাশাপাশি একটা হটলাইন নম্বর চালু করে তাৎক্ষণিক শিক্ষার্থীদের জরুরি সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চাই।
রোকেয়া পরিষদের ভিপি প্রার্থী মৌসুমী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রচারণায় ভালো সাড়া পাচ্ছি। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ হলের রুম দখল চেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। ক্রীড়ার সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে হলে একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে আমাদের প্যানেলের।
এ হলে জিএস পদে লড়াই করছেন ছাত্রলীগ থেকে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সামমা আক্তার, প্রগতিশীল ছাত্র জোটের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মুনিরা দিলশাদ ইলা ও স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের মনিরা চৌধুরী লিমা। জানতে চাইলে মুনিরা দিলশাদ ইলা বাংলানিউজকে বলেন, তিনমাসে বৈধ সিটের ব্যবস্থা, অভিভাবকদের প্রবেশের কড়াকড়ি, রিডিং রুম খোলা রাখাসহ ছাত্রীদের স্বার্থে কাজ করতে চাই।
ছাত্রদলের একমাত্র ভিপি প্রার্থী শামসুন নাহার হলে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের ৫টি হলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একমাত্র ভিপি প্রার্থী দিয়েছে শামসুন্নাহার হলে। এ কারণে ছাত্রলীগের প্রার্থীকে দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়তে হবে।
ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে জেয়াসমিন শান্তা, স্বতন্ত্র থেকে শেখ তাসনিম আফরোজ ও ছাত্রদল খেকে আইন বিভাগের মানসুরা আক্তার। এখানে বিরোধী পক্ষের ভোট ভাগ হওয়ার কারণে ছাত্রলীগের প্রার্থী তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছেন।
জিএস পদে স্বতন্ত্র থেকে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের আফসানা ছপা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় হওয়ায় এগিয়ে আছেন। এ হলে ভোটার রয়েছেন ৩ হাজার ৭৬৪ জন। পাঠকক্ষ সম্পাদক পদে বিশাখা দাস ইরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
ছাত্রদলের প্রার্থী মানসুরা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, প্রচারণায় ভালো সাড়া পাচ্ছি। কিন্তু ছাত্রলীগের প্রার্থী আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। আমরা আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
মৈত্রী হলে স্বতন্ত্র প্যানেল এগিয়ে
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে নির্বাচন করা প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। ছাত্রলীগের প্রার্থীর পরিচিতি কম, বিপক্ষ প্যানেলে ছাত্রলীগের সমর্থন থাকা ও সাধারণ ছাত্রদের সমর্থনের কারণে এমনটা ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
১ হাজার ৯২৮ ভোটারের এই হলে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে রাজিয়া সুলতানা কথা, সাধারণ শিক্ষার্থী স্বতন্ত্র পরিষদের নুরুন্নাহার পলি, সচেতন শিক্ষার্থী প্যানেল থেকে সুস্মিতা দে ও স্বতন্ত্র থেকে শিরিন সুলতানা। শিক্ষার্থীদের বিবেচনায় সুস্মিতা দে ও নুরুন্নাহার পলি এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে গণরুম কেন্দ্রীক ভোট পাবেন ছাত্রলীগের প্রার্থী কথা।
জিএস পদে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে শাওলীন জাহান সেজুতি, সাধারণ শিক্ষার্থী স্বতন্ত্র পরিষদের সাগুফতা বুশরা মিশমা, সচেতন শিক্ষার্থী প্যানেল থেকে অন্তরা লাবীবা প্রত্যাশা ও ছাত্র ইউনিয়নের আরশিয়া তাবাসসুম কাব্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী আন্তঃহল অ্যাথলেট চ্যম্পিয়ান আছিয়া আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন রয়েছে বেশি। আমরা হলের জন্য কাজ করেছি।
বঙ্গমাতা হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৯ জন নির্বাচিত
ভোটের আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রলীগের ৯ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
ছাত্রলীগের পূর্ণ প্যানেল ছাড়া ও তিনজন প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন। ভিপি ও সাহিত্য সম্পাদক পদে তারা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ হলে মোট ভোটার ২ হাজার ২২৮ জন। ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীরা হলেন, ছাত্রলীগের ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের কোহিনূর আক্তার রাখী এবং স্বতন্ত্র থেকে পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজের রিকি হায়দার আশা। এ দু’জনের মধ্যে রিকি এগিয়ে থাকছেন। অন্যদিকে জিএস পদে ছাত্রলীগের সারা বিনতে জামাল এগিয়ে আছেন। আর সাহিত্য সম্পাদক পদে খাদিজা শারমিন ও শাহনাজ কবির মৌ’র শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন হল সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে ভিপি প্রার্থী রিকি হায়দার আশা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের বিরোধী প্যানেল থেকে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমার শিক্ষার্থীদের সমস্যাকে চিহ্নিত করে ‘ইনোভেটিভ’ ইশতেহার দিয়েছি।
সুফিয়া কামালে ছাত্রলীগ বনাম কোটা
কবি সুফিয়া কামাল হলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ছাত্রলীগ ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের স্বতন্ত্র প্যানেলের সঙ্গে। মেয়েদের হলের মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচজন ভিপি পদে এ হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ইসরাত জাহান নূর ইভা, স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে ফার্মেসি বিভাগের তানজিনা আক্তার সুমা, বামজোট থেকে মালিহা সামিহা, স্বতন্ত্র থেকে তাহমিনা আফসানা ও মেহনাজ আক্তার। জিএস পদে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে শাহরিয়া সুলতানা নদী ও স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে মনিরা শারমিন এবং বামজোট থেকে সুদিপ্তা মন্ডল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
জানা গেছে, কবি সুফিয়া কামাল হলে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৭২৪ জন। এর মধ্যে আবাসিক ১৮৫৬ জন, বাকিরা অনাবাসিক। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ইভা-নদী প্যানেলের সঙ্গে সুমা-মনিরা প্যানেলের। একক পরিচিতিতে প্রার্থী হয়েছেন তাহমিনা আফসানা। এই হলে কোটা আন্দোলনের সময় সংগঠিত ঘটনা ভোটে ব্যাপক প্রভাব রাখবে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
ছাত্রলীগ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ইসরাত জাহান ইভা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রচারণার কাজ শেষ করেছি। বিতর্ক অঙ্গন থেকে আসায় আমাদের প্যানেলের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-