ডেস্ক রিপোর্ট – পার্শ্ববর্তীদেশ মিয়ানমার ঘেষা টেকনাফের নাফনদীতে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারনে প্রায় আড়াই বছর ধরে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। তাই নাফনদী নির্ভর পরিবারগুলোতে চরম দুর্দিন যাচ্ছে।
জেলেদের ভাগ্য খুলেনি এখনও। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে গেলেও কোন আশার বানী পাওয়া যায়না বলে অনেক জেলে জানিয়েছেন। ফলে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে জেলেদের। পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গেছে মৎস্যজীবী পরিবারের সন্তানদের।
এতে উখিয়া-টেকনাফের জেলে পরিবারে দুর্ভোগ বেড়েছে। জীবিকার তাগিদে অনেক মৎস্যজীবি বিকল্প আয়ের পথ হিসেবে মাদকের সাথেও জড়াচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে।
সুত্রে জানা যায়, সাগর পথে ইয়াবা অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে আড়াই বছর আগে সকল ধরণের মাছ ধরার ট্রলারকে সাগরে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারী করে স্থানীয় প্রশাসন। তাতে দীর্ঘদিন ধরে মাছ আহরণ করে চলে আসা জেলেরা সংসার নিয়ে করুণ দিনাতিপাত করছে। বেকায় হয়ে পড়েছে ১০ হাজার জেলে পরিবারের প্রায় ২০ হাজার সদস্য। কর্ম না পেয়ে অনেকে পেটের দায়ে জড়িয়ে যাচ্ছে মরণ নেশা ইয়াবার ব্যবসার সাথে।
স্থানীয় বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়া, জালিয়াপাড়া, নাইট্যংপাড়া, সদরের নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, হ্নীলা, জাদিমোরা, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সহ অনেক পুরনো জেলে ইতোমধ্যে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে।
তাদের কারণে স্থানীয় ওঠতি যুবকেরাও মাদকের শিকার হচ্ছে। টেকনাফের আবদু জলিল, আবদু গফুর, আবদুল হামিদ মাঝি, নুর মোহাম্মদ, আবুল কালাম, আবদু ছালামসহ অন্তত ২০জন জেলে তাদের করুণ জীবনের বর্ণনা দিয়েছেন।
জেলেরা জানায়, মিয়ানমার থেকে ঢালাওভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আগে ভালই চলছিল প্রতিটি জেলে পরিবারের সংসার। নাফনদীতে জাল ফেলে তারা প্রতিদিন আহরণকৃত মাছ বিক্রি করে ২-৩ হাজার টাকা আয় করতে পারত। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর তাদের সে সুযোগ আর নেই।
অথচ নাফনদীতে (মিয়ানমার অংশে) রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গারা আগের মত জাল ফেলে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সীমানা চিহ্নিত ওই নদীতে শুধু নামতে পারছেনা বাংলাদেশী জেলেদের নৌকাগুলো। সাগরে মাছ ধরতে যেতে না পারায় জেলে, ট্রলার মালিক, মাঝিমাল্লা, শ্রমিকসহ এ পেশা নির্ভর সব পরিবারে কঠিন সময় যাচ্ছে।
২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেয়ায় (জানুয়ারি পর্যন্ত) রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল, পরবর্তী রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও ইয়াবার চালান রোধে টেকনাফের নাফনদীতে মাছধরা বন্ধ করে দেয়া হয়। মাদক-ইয়াবা বাংলাদেশে প্রবেশ রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো স্থানে একাধিক চালান জব্দও হচ্ছে।
রোহিঙ্গাসহ ইয়াবা গডফাদারদের ইশারায় বর্তমানেও মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আসছে নাফনদী হয়ে টেকনাফে। গত আড়াই বছরের বেশী সময় ধরে জেলে পরিবারে দুর্দিন চললেও নাফনদীতে মাছ ধরার অনুমতি মিলছেনা। তখন থেকে টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অর্ধ শতাধিক নৌকা ঘাটে নোঙর করে আছে। কিছু কিছু নৌকা অকেজো হয়ে পড়ে ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে পড়েছে।
জেলেরা জানায়, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে এমনিতেই নাফ নদীতে নানা সময়েই মাছ ধরার উপর বিজিবির বিধি নিষেধ থাকে। বর্তমানে সাগরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞার কারণে এখানকার জেলেরা আরও বেশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জেলে পরিবার গুলোতে অভাব-অনটন দেখা দিয়েছে। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী জেলেদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও কিছু সংখ্যক জেলে সে ভাতার মুখ দেখেন। আরও অধিকাংশ জেলে বছরের পর বছর ধরে ভাতা বঞ্চিত হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, টেকনাফে ৭ হাজার ৮৮৩ জন এবং উখিয়ায় ৩ হাজার ৩৯২ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-